বিজেপির সঙ্গে সেটিং নাকি নতুন দল! মুকুলের ঘনঘন দিল্লি যাত্রাই তৃণমূলের স্ক্যানারে
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ‘সেটিং’ করতেই তাঁর এই ঘন ঘন দিল্লি যাত্রা? অন্তত তৃণমূল কংগ্রেস তাই মনে করছে।
তৃণমূল ভবনের ডাক উপেক্ষা করে মুকুল রায়ের দিল্লি যাত্রা ভালো চোখে নেয়নি দল। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন তৃণমূল ভবনে না এসে কাছেই একটি গেস্ট হাউসে অনুগামীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। তারপরই তড়িঘড়ি রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। আর সেই থেকেই তৃণমূল নজরদারিও শুরু করে দিয়েছে তাঁর উপর।
কেন বারবার দিল্লি যাচ্ছেন মুকুল রায়? দিল্লিতে তাঁর কীসের এত দরকার? তবে কি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে 'সেটিং' করতেই তাঁর এই ঘন ঘন দিল্লি যাত্রা? অন্তত তৃণমূল কংগ্রেস তাই মনে করছে। সেই কারণেই মুকুল রায়কে এবার দলের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিজেপির সংসর্গ দোষে তৃণমূলে একেবারে কোণঠাসা মুকুল রায়। তবু এখনও নিজেকে তৃণমূলের সাংসদ হিসেবেই তিনি পরিচিয় দিচ্ছেন। অথচ তিনি নাকি প্রতি পদক্ষেপে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আর তাতেই দলে একঘরে হয়েছেন তিনি। এতদিন শুধু জল্পনার পর্যায়েই ছিল বিষয়টি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুকুল রায়কে নিয়ে মুখ খুলে দলে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন এবার।
তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, মুকুল রায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সেটিং করতেই বারবার দিল্লি যাচ্ছেন। সেইসঙ্গে নতুন দলের কাজও তিনি এগিয়ে রাখছেন বলেও খবর। সেটিং না হলে তিনি নতুন দলেই ভিড়তে পারেন। সেই দলে যেতে পারেন সিপিএমে বহিষ্কৃত ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়-রাও। পরে নতুন দল কোনও জোটে নাম লেখাতে পারে।
এর আগেও দিল্লিতে গিয়ে অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুকুল রায়। মাঝে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ পর্যবেক্ষক কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ঋতব্রতও উপস্থিত ছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি। এরপর আবার তিনি দিল্লিতে রওনা দিলেন। দলকে ঘুণাক্ষরেও কিছু জানালেন না। তৃণমূল ভবনে এলেন না আমন্ত্রণ সত্ত্বেও। এই বিষয়টিই তৃণমূল কংগ্রেস আতস কাঁচের তলায় রাখছে।
তাঁর এই সাম্প্রতিক দিল্লি সফর ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনার শেষ নেই। তা নিয়ে কৌতুহলও বাড়ছে নিচুতলার নেতৃত্বের মধ্যে। অনেকেরই জিজ্ঞাস্য দাদা তাহলে কোন পথে পা বাড়াচ্ছেন? তিনি কি সত্যিই বিজেপিতে যাচ্ছেন? নাকি নিজেই দল করছেন? আসলে মুকুলের সিদ্ধান্তের দিকে পথ চেয়ে রয়েছেন অনেকেই। তাঁরা দলে 'অপাংক্তেয়' মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না ঠিকই, কিন্তু মুকুল রায় দল গড়লে তাঁরা সেদিকে পা বাড়াবেন এমন নিশ্চয়তা নেই।
মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, দাদার দিল্লি সফর ফলপ্রসূ হয়েছে। পুজোর পরই তিনি কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিজেপি মুকুল রায়কে সরাসরি দলে নিতে চাইছে না। নতুন কোন দল করলে, সেই দলকে এনডিএ-তে স্বাগত জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই ব্যাপারটি নাকি সাফ জানিয়ে দিয়েছে মুকুল রায়কে।
অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে মুকুল রায়কে বার্তা দেওয়া হলেও, এখনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আসলে তৃণমূলও ভাবছে, এই সময় মুকুলের মতো প্রভাবশালী নেতাকে দল থেকে তাড়ালে, তার খারাপ প্রভাব পড়বে না তো পঞ্চায়েত ভোটে। কেননা শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। বিজেপি তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছে। তাই মুকুলকে শাস্তি দিতে গিয়ে দলের বিপদ হোক চাইছে না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বার্তা দিলেও দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাই আবেদনও রেখেছেন 'বিচক্ষণ' মুকুল রায়ের প্রতি। তিনি বলেছেন, 'উনি বিচক্ষণ ব্যক্তি। উনি নিশ্চয়ই বুঝবেন দলের স্বার্থের থেকে ব্যক্তিস্বার্থ বড় হতে পারে না। ওনার মতো নেতার এটা খেয়াল রাখা উচিত। বোঝা উচিত বিজেপি-র যোগাযোগ রাখলে কেউ আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু হতে পারে না। তাই আশা করি এমন কিছু করবেন না যে দলের তরফে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হতে হয়।'