গজেন্দ্র সিং-এর মৃত্যুর প্রতিবাদে গলা ফাটাচ্ছে তৃণমূল! বাংলায় যে এত আলু চাষির মৃত্যু হল, তার বেলা?
নয়াদিল্লি, ২৪ এপ্রিল : আম আদমি পার্টির সমাবেশে কৃষক গজেন্দ্র সিংয়ের মৃত্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কেন্দ্রকে পরামার্শও দিলেন যাতে এই সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে এবং সমস্যার সমাধানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে।
তবে কেন বাংলায় আলু চাষিদের সমস্যাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না?
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। অন্য দল এবং তাঁদের সরকারের দিকে আঙুল তোলার আগে কেন আপনারা রাজ্যে আলু চাষির সমস্যা সমাধান করছেন না? কেন বন্ধ করছেন না তাঁদের আত্মহত্যার ঘটনা? তাহলে কী তারা দেশের একটা প্রত্যন্ত কোণে পড়ে রয়েছে বলে তারা অত গুরুত্বপূর্ণ নয়?
কর্তৃপক্ষ বলছে আত্মহত্যা নয়, গার্হস্থ্য সমস্যার জেরেই আত্মহত্যা
এরাজ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য অন্য রাজ্যে আলু বিক্রির উপর রাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায়, গুরুতর সমস্যার মধ্যে পড়েন কৃষকরা। কারণ তাদের বাজার নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়া হয়। এই সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠতে শুরু করে ক্রমশ। যদিও রাজ্য সরকার তা মানতে নারাজ। তাদের কথায় পারিবারিক সমস্যার জেরেই মৃত্যু বলে একাধিক ক্ষেত্রে দাবি করেছেন শাসক দলের বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীরা।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি যারা বহুদিন ধরে আলুর জন্য বাংলার উপর নির্ভরশীল ছিল, এবং বহুল পরিমাণে বাংলা থেকে আলু কিনত, তারাও এখন আলু কেনার ক্ষেত্রে বাংলার মুখাপেক্ষী নয়। এমনকী উত্তরপ্রদেশে অসময়ের বৃষ্টি আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, কিন্তু তবুও রাজ্যে নিশেধাজ্ঞা বাংলার আলুচাষিদের প্রায় পঙ্গু করে দেয়।
জোর করে চাষিদের কম দামে আলু বিক্রিতে চাপ দেওয়া হয়।
এবছর ভাল পরিমাণে আলু উৎপাদন হলেও বাংলার চাষিরা লাভের মুখ তো দেখতে পাচ্ছেননই না, উল্টে বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ যবে থেকে পড়শি রাজ্যগুলি এরাজ্য থেকে আলু কেনা বন্ধ করেছে, তবে থেকে তাদের জোর করে কম দামে এরাজ্যে আলু বিক্রির উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। ৫০ কেজির বস্তা যেখানে উৎপাদন খরচ পড়ে ২৫০ টাকা সেখানে তাদের তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। ফলে লোকসান হচ্ছে অনেকটাই।
যে রাজ্যে উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আলুই অন্য রাজ্যে পাঠানো হত, তাদের কাছে তো এটা অবশ্যই জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এবং অভিজাত মিডিয়া গোষ্ঠী এই বিষয়টিকে পুরোপুরি অদেখা করছে।
চাষিদের থেকে নাতো রাজ্য একসঙ্গে বিশাল অংশে কিনছে, নাতো আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বলেছিল চাষিদের থেকে তারা আলু কিনবে। কিন্তু চাষিদের কথায় সরকার আলু কিনলেও তার পরিমাণ অত্যন্তই কম। কলকাতা বন্দর থেকে মজুত খালাসের জন্য সরকার ভেবেছিল কুইন্টাল পিছু ১০০ টাকা পরিবহণ ভরতুকি দেবে, কিন্তু বিশ্ববাজারে এরাজ্যের আলুর তেমন চাহিদা নেই। ফলে চাষিরা সেই তিমিরেই।
ভাল উৎপাদন সত্ত্বেও দেনা এবং কম পারিশ্রমিকই চাষিদের প্রাণ নিচ্ছে
একে আয় চোখে দেখা যায় না তার উপর দেনায় জর্জরিত একাধিক কৃষক পরিবার। আর তারই জেরে কৃষকরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তৃণমূল সাংসদ বা তার দল কী একবারও এইসব বিষয়গুলি ভেবেছেন? গজেন্দ্র সিং যিনি রাজধানীর বুঝে হাজার হাজার মানুষ ও মিডিয়ার সামনে আত্মহত্যা করলেন (ফসলের ক্ষতির জন্য আত্মহত্যা করেছেন কি না তাও অবশ্য স্পষ্ট নয়) তার জন্য একেবারে দরদ উথলে উঠল আপনাদের। কারণ নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করার জন্য একটা হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে বলে।
সৌগতবাবু, আগে নিজের বাড়ি পরিস্কার করুন, তারপর অন্য লোকের বাড়ির নোংরা দেখে অভিযোগের আঙুল তুলবেন।