জঙ্গলমহলে মুখ খুবড়ে পড়ল তৃণমূল! সম্প্রতি পঞ্চায়েতে কার অভাব অনুভব করলেন মমতা
ইতিমধ্যে মুকুল রায় ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে শত্রুশিবিরে যোগ দিয়েছেন। জঙ্গলমহলে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যার উপর ভরসা করেছিলেন, সেই আইপিএস ভারতী ঘোষও নেই।
জঙ্গলমহলে বিজেপি সাফল্যে কার কৃতিত্ব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পড়েছিল আগেই। এবার প্রশ্ন উঠে পড়ল জঙ্গলমহলে নির্বাচনী ব্যর্থতায় কার অভাব অনুভব করল তৃণমূল কংগ্রেস? ইতিমধ্যে মুকুল রায় ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে শত্রুশিবিরে যোগ দিয়েছেন। জঙ্গলমহলে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যার উপর ভরসা করেছিলেন, সেই আইপিএস ভারতী ঘোষও নেই।
তাঁদের অভাবই কি তাহলে অনুভব করল তৃণমূল কংগ্রেস? তা না হলে জঙ্গলমহল মুখ ফিরিয়ে নিল কেন তৃণমূলের থেকে। রাজ্যে পালাবদলের পর প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে জঙ্গলমহলে। যে জঙ্গলমহলে কান পাতলেই শোনা যেত গুলির আওয়াজ, বোমার শব্দ। বাতাসে ভাসত বারুদের গন্ধ, সেই জঙ্গলমহল এখন শান্ত। তবু সাত বছরের মধ্যেই শাসক দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল জঙ্গলমহলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ।
কেন এই পরিবর্তন জঙ্গলমহলের, কোথায় ঘাটতি তৃণমূল সরকারের, তা জানতে ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্ত শুরু করেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে কয়েকটি পদক্ষপও নেওয়া হয়েছে দলের তরফে। ব্লক সভাপতিদের সরিয়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্বকে সামনে আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে রিপোর্ট পেশ করতেও বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে।
তৃণমূল নির্বাচনী ফল কাটাছেঁড়া করে দলের সংগঠনকে আরও মজবুত করার চেষ্টায় নেমেছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃণমূলের এই খারাপ ফলের পিছনে দুটি কারণ একেবারে ফেলে দিতে পারে না। মুকুল রায়ের একটা দখল ছিল জঙ্গলমহলে। তিনি একা হাতে সংগঠন দেখতেন, জঙ্গলমহলের সংগঠন তিনিই গড়ে তুলেছিলেন।
সেই তিনি এখন নেই তৃণমূলে। ফলে তাঁর অনুগামীরা সকলে দল না ছাড়লেও, তৃণমূলের প্রতি তাঁদের আনুগত্য অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। অনেকে দল ছাড়তে না পারলেও মুকুল রায়ের ইঙ্গিতে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন, এমনটা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। এই অবস্থায় তৃণমূলের সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। আর সেটাই হয়েছে, নাহলে তৃণমূল উন্নয়ন করেও ধাক্কা খাবে কেন?
তারপর রয়েছে ভারতী ঘোষের অপসারিত হওয়ার বিষয়টি। জঙ্গলমহলকে শাসনে এনেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষই। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তোলাবাজি মামলায় তিনি ফেরার। সবংয়ের উপনির্বাচনে ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে মুকুল রায়কে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরেই তাঁকে সরে যেতে হয় বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা।
এই অবস্থায় ভারতী ঘোষের অপসারণেও জঙ্গলমহলে তৃণমূলের রাশ হাতছাড়া হয়েছে। এবং জঙ্গলমহলে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক মুখ থুবড়ে পড়ার এটাও একটা কারণ। তৃণমূলের ব্যর্থতা জঙ্গলমহলে মুকুল রায় ও ভারতী ঘোষের অভাব ঢেকে দেওয়ার মতো কোনও নেতা তৈরি করতে পারেনি। এখন সেসবই কাঁটাছেঁড়া করে বের করতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব। মোট কথা, লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে কর্তৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়াই এখন তৃণমূলের অন্যতম লক্ষ্য।