পার্থ-অনুব্রত দু’জনেই হেভিওয়েট, কিন্তু এক নন তৃণমূলের কাছে! নেপথ্যে কোন গল্প
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব, মমতার সরকারের ‘নম্বর টু’। তিনি দুর্নীত-কাণ্টডে গ্রেফতার হতেই তাঁর পাশ থেকে একপ্রকার সরে গিয়েছে তৃণমূল।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব, মমতার সরকারের 'নম্বর টু'। তিনি দুর্নীত-কাণ্টডে গ্রেফতার হতেই তাঁর পাশ থেকে একপ্রকার সরে গিয়েছে তৃণমূল। এই পার্থকে চিনি না বলে হাত ধুয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু অনুব্রত 'হেভিওয়েট' হলেও তাঁর পাশ থেকে এখনই সরছেন না তৃণমূল। নেপথ্যে উঠে আসছে অন্য গল্প।
অনুব্রত মণ্ডলের জোড়া পাওয়া কষ্টসাধ্য
পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ও সরকারের সেকেন্ড ম্যান হতে পারেন, কিন্তু তিনি অনুব্রত মণ্ডলের মতো সংগঠন বোঝেন না। হাতের মুঠোয় পুরো একটা জেলাকে রাখতে পারেন অনুব্রত। কিন্তু পার্থ শুধু বেহালা পশ্চিমকে রাখতে পারবেন, তার গ্যারান্টি নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব সহজেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিকল্প পেতে পারেন। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের জোড়া পাওয়া কষ্টসাধ্য।
তৃণমূলে ড্যামেজ কন্ট্রোল কোন পথে
বীরভূম আর অনুব্রত মণ্ডল কিন্তু একে অপরের সমার্থক। তিনি এখন সিবিআই হেফাজতে। এর পরে হয়তো তাঁর স্থান হতে পারে প্রেসিডেন্সি জেলে। খুব কমদিনের মধ্যে ছাড়া পাওয়া দুরুহ। তারপর মনে হওয়াই স্বাভাবিক বীরভূমে অনুব্রতর মাইনাসে ভেসে যাবে তৃণমূল। হয়তো তৃণমূল বিকল্প কাউকে বেছে নিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করবে? কিন্তু তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা।
অনুব্রত মণ্ডল জেলায় একটা অন্যরকম প্রভাব বিস্তার করেছে
অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে একটু ধীরে চলো নীতি নিয়েছে তৃণমূল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতারের পর যেমন দায় ঝেড়ে ফেলার একটা প্রবণতা ছিল, অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে তা কিন্তু নেই তৃণমূলের মধ্যে। তৃণমূল অনুব্রত মণ্ডলের ব্যাপারে তাই এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আসলে অনুব্রত মণ্ডল জেলায় একটা অন্যরকম প্রভাব বিস্তার করেছেন। অন্য কোনও জেলাতেই জেলা সভাপতির এমন দাপট নেই। তিনি প্রতিটা ক্ষেত্র এমনভাবে সাজিয়েছেন, যে তিনি না থাকলেও দল চলবে আপন খেয়ালে।
তৃণমূল এগোতে পারে বীরভূমে ভাবমূর্তি উদ্ধারে
সিবিআই অনুব্রতকে গ্রেফতার করলেও এখন সরাসরি কিছু খুঁজে পায়নি গরমিল। তৃণমূল অনুব্রত মণ্ডলকে তাঁর পদে রেখে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, এখনই মাথা থেকে হাত তুলে নিচ্ছেন না মমতা। অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টকে পদে রেখে দিয়েই তৃণমূল এগোতে পারে বীরভূমে ভাবমূর্তি উদ্ধারে। আর এর পিছনে রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
তৃণমূল অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে অন্যরকম কিছু ভাবছে
অনুব্রতকে সরানো হবে কি হবে না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ধন্দ রয়েছে। সে বিষয়ে বলাই যায়, তৃণমূল অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে অন্যরকম কিছু ভাবছে। অনুব্তর প্রভাবকে তাঁরা বিশেষ করে গুরুত্ব দিচ্ছে। অনুব্রত মণ্ডল পুরো জেলাতেই এতটাই প্রভাব-প্রতিপত্তি কায়েম করেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রকে তিনি এমনভাবে নিজের লোক দিয়ে সাজিয়েছেন, সেখানে অন্য কারও ঢোকা খুবই কষ্টসাধ্য।
বীরভূমে তৃণমূলকে অন্য সুরে বেঁধেছেন অনুব্রত
অনুব্রতর হাতে গড়া দলীয় পরিকাঠামোয় তৃণমূলের অন্য কেউ যেমন মানিয়ে নিতে পারবে না, তেমনই বিরোধীরাও কেউ পাত্তা পাবে না। তাই দল হয়তো তাঁকেই জেলা সভাপতি পদে রেখে দেবে। অনুব্রত মণ্ডল না থাকলেও তাঁর নাম চালাবে পার্টি। নতুন মুখ তুলে আনলেও ওই পদে কাউকে বসানো নাও হতে পারে। কেননা যে সুরে বীরভূমে তৃণমূলকে বেঁধেছেন অনুব্রত, তাঁর পরিবর্ত হিসেবে সেখানে কেউই খাপ খাবে না। বুথ হোক বা পঞ্চায়েত, ব্লক হোক বা জেলা সর্বত্রই তিন সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। অনুব্রত না থাকলেও তাঁর সিস্টেমে ভরসা রাখতে পারে তৃণমূল।