শুভেন্দু অধিকারী নিয়ে হাল ছাড়ল তৃণমূল? 'হতাশ' সৌগত রায়ের বক্তব্যে জোর জল্পনা
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক নিয়ে তিনি যা বলেছিলেন তা সত্যি। জানালেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়। কিন্তু এরপরে শুভেন্দুর সিদ্ধান্তে যদি কোনও পরিবর্তন হয় তাহলে কিছু করার নেই বলে জানান সৌগত। সৌগত রায়ের এই বক্তব্যে যেন ছিল হাল ছেড়ে দেওয়ার হতাশা।
যা বললেন সৌগত রায়
পাশাপাশি এদিন তিনি বলেন, 'শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনার পথ দেখতে পাচ্ছি না এই মুহূর্তে।' দীর্ঘ টালবাহানার পর গতকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী। সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করলে বৈঠক সম্পর্কে নিশ্চিত করেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সৌগত রায়। পরে নাকি সেই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন শুভেন্দু। পাশাপাশি সৌগত জানান, এখনই শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকের আর কোনও সম্ভাবনা নেই। এতেই উঠেছে প্রশ্ন, যেই সৌগত রায় শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগেও আশআহত হননি, সেই সৌগত রায়কেই এদিন হতাশ এবং ক্লান্ত দেখাল। এবং তিনি জানিয়ে দিলেন, এবার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তা নেবেন শুভেন্দু।
পিকে-অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকেও গলল না বরফ?
মঙ্গলবার সন্ধে ছ'টা নাগাদ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যত সেকেন্ড ইন কমান্ডের। যে অভিষেক এবং তাঁর হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে আসা প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে দলের মধ্যে এক বিভাজন রেখা তৈরি হচ্ছিল, সেই পিকেও ছিলেন সেই বৈঠকে। তবে সেই বৈঠকেও যে বরফ গলেনি, তা এদিনকার গতিপ্রকৃতিতে স্পষ্ট।
সৌগতকে শুভেন্দুর বার্তা
এদিন সকালেই পাল্টে যায় চিত্র। সূত্রের খবর, এদিন বেলা এগারোটার কিছু পরে সৌগত রায়কে এসএমএস করেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি লেখেন, আমাকে যেন ক্ষমা করবেন। একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। সমস্যা না মিটিয়ে কী করে বলা হল সমস্যা মিটে গিয়েছে? কোনও সমস্যার সমাধান করা হয়নি। তার আগেই কী করে প্রেসকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে।
অধিকারী পরিবারের অবস্থান একটা বড় ফ্যাক্টর
এর আগে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের দূরত্ব যখন থেকে বাড়ছিল, তখন থেকে মন্ত্রিত্ব এবং অন্য দলে যাওয়ার বিষয় নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। গেরুয়া শিবির থেকে শুভেন্দুকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয়। শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়, সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শুভেন্দু। মেদিনীপুরের মাটিতে অধিকারী পরিবারের অবস্থান একটা বড় ফ্যাক্টর।
তৃণমূলের মাথায় হাত
স্বাভাবিকভাবে শুভেন্দু অন্য দলে যোগ দিলে বা অন্য দল গঠন করলে কিংবা তৃণমূল ছাড়লে, সবক্ষেত্রেই মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ত। আজকের বৈঠকের পর শুভেন্দুকে দলে রাখতে পেরেছে বলে দাবি করেছিল তৃণমূল। তবে আজকে সৌগতকে করা শুভেন্দুর হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা প্রকাশ্যে আসতেই ফের বদলে যায় হিসেব।
গতকালকের বৈঠকের পর উঠেছিল যেই প্রশ্ন
শুভেন্দু পর্ব যত তীব্র হয়েছে নাম না করে তাঁকে আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে তৃণমূলের অন্দর থেকেই। এমনকী শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন প্রথম থেকে খড়্গহস্ত দেখা গেছিল শুভেন্দুর প্রতি। দুরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত মিললেও বা কল্যাণের আক্রমণের সুর চড়লেও এই আইনজীবী সাংসদ কিন্তু নেত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়েছেন ক্রমাগত। সাম্প্রতিক কিছু সফরেও কল্যাণকে মমতার সঙ্গে দেখা গিয়েছে। সেই সব ভুলে এত সহজেই কি শুভেন্দু দলে ফিরে যাবেন, গতকালকের বৈঠকের পর এই প্রশ্নই উঠেছিল।
তৃণমূলে ফিরবেন না ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী
এই পরিস্থিতিতেই এদিন শুভেন্দুর বেসুরো বার্তা এবং শুভেন্দুর হতাশ, ক্লান্ত বার্তা যেন তৃণমূলের জন্য বড় অশনি সঙ্কেত। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রশান্ত কিশোর ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। কারণ এই দুজনকে নিয়েই যত সমস্যা। আর বৈঠকের পর কিনা তৃণমূলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও সমস্যা নেই। এতেই আরও ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী।
নিজের বাড়িতে অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক শুভেন্দুর, ছন্দপতনের মাঝেই ফের ভাঙনের রেখা তৃণমূলে