সারদার পর দেশের দুশমনদের সঙ্গেও যোগ তৃণমূল সাংসদের, উঠল গুরুতর অভিযোগ
গতকালই এখানে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে আহমেদ হাসান ইমরানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিং। বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, এই ব্যক্তির সঙ্গে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন 'সিমি' (স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট ইন ইন্ডিয়া)-র যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামির সঙ্গেও সক্রিয় সংস্রব রয়েছে তাঁর।
কে এই আহমেদ হাসান ইমরান?
গোয়েন্দা রিপোর্ট উদ্ধৃত করে 'আনন্দবাজার পত্রিকা' একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্রীহট্ট থেকে ভারতে চলে আসেন তিনি। প্রথমে অসমের ধুবড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে জলপাইগুড়িতে চলে আসেন। ১৯৭৫-৭৬ সালে এ রাজ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল মুসলিম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৭৭ সালের ২৪ এপ্রিল আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলন হয়। উপস্থিত ছিলেন আহমেদ হাসান ইমরান। সেখানেই গড়ে ওঠে সিমি। তিনি সংগঠনটির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। কলকাতার পার্ক সার্কাসের ১৯ নম্বর দরগা রোডে খোলা হয় সিমি-র অফিস। ১৯৮১ সালে সেখান থেকে তিনি 'কলম' পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করেন। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই ঠিকানা থেকেই বেরিয়েছিল পত্রিকাটি।
২০০১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশ-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে সিমি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়
শুধু তাই নয়, সৌদি আরবের জেড্ডায় যে ইসলামিক ব্যাঙ্ক রয়েছে, পূর্ব ভারতে তার কর্তা নিযুক্ত হন তিনি। ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন বাংলাদেশের মামুল অল আজম। তিনি গোলাম আজমের ছেলে। এই গোলাম আজম জামায়াতে ইসলামির নেতা। বাংলাদেশে নাশকতা চালানো, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা, ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ চালানো ইত্যাদি ঘটনায় বারবার নাম উঠে এসেছে জামায়াতে ইসলামির। আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারত-বিরোধী জেহাদের বীজ বুনছে।
আহমেদ হাসান ইমরান ইসলামিক ব্যাঙ্কে যোগ দেওয়ার পরই ১৯৯৪ সাল থেকে 'কলম' পত্রিকা প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত হতে শুরু করে। আগে ছিল মাসিক। ১৯৯৮ সাল থেকে তা দৈনিক হয়। ওই বছরই সিমি ও 'কলম' পত্রিকার অফিস ৪৫ নম্বর ইলিয়ট রোডে উঠে আসে। সেখানেই বিভিন্ন সময় সিমির লোকজন থাকতে আসতে থাকে। অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ২০০১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশ-বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ সিমি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এখনও সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি।
এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের কট্টর ইসলামি সংবাদপত্র 'নয়া দিগন্ত'-র কলকাতা প্রতিনিধি হিসাবেও কিছুদিন কাজ করেছেন। সেই কাগজে তাঁর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে সব লোককে যুদ্ধাপরাধী বলে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামি, দিলওয়ার হোসেন সাইদি, মীর কাশেম আলি প্রমুখের সঙ্গে ইমরানের যোগাযোগ ছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যিনি পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলেন এবং যিনি কট্টর ভারত-বিরোধী ছিলেন, সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি হয় কিছুদিন আগে। বাংলাদেশে ওই মৌলবাদীর সঙ্গেও আহমেদ হাসান ইমরানের যোগাযোগ ছিল বলে খবর।
আহমেদ হাসান ইমরান অবশ্য এ সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমাকে কালিমালিপ্ত করতেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।"