Exclusive: বর্ধমানে খোকন 'বাবু'! জুতো বিতর্কে তৃণমূল বিধায়কের ঢাল 'ভাইপো'
ফের বিতর্কে খোকন দাস। বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। এর আগে বিধায়ক হিসেবে পুরসভার টেন্ডার কমিটির মিটিংয়ে থেকে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। বিজেপি সাংবাদিকদের টাকা আর মদ দিয়ে কিনে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বলেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। এবার জড়ালেন জুতো বিতর্কে।
দলের সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান
ভোটের আগে তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ ছিল, বৈভব দূরে রেখে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতা থেকে জনপ্রতিনিধিদের মিশে যেতে হবে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই। সর্বোপরি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে সাধারণ জীবনযাপন করে গোটা দেশের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির মধ্যেও এক হাতে ছাতা আরেক হাতে মাইক নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, এমনকী গতকালও যিনি বন্যাদুর্গত এলাকায় জলের মধ্যে নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যবস্থা করেছেন, সেখানে তাঁরই দলের নবনির্বাচিত বিধায়কের কীর্তি দলের সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান।
জুতো বিতর্ক
গতকাল বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস ৩৫ নং ওয়ার্ডে গিয়েছিলেন দলের এক রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। দলের অনুষ্ঠান। ফলে সেখানে তৃণমূলেরই সকলে উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে দেখা যায় দুজন কর্মীকে দিয়ে নিজের জুতো বাঁধাচ্ছেন বিধায়ক! এই ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। একজন জনপ্রতিনিধির এই 'বাবু' কালচার দেখে বিরোধী দলগুলি তো বটেই, জনমানসেও তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বর্ধমানের বহু মানুষই এই ধরনের সংস্কৃতির সমালোচনা করেছেন।
বিধায়কের সাফাই
এ প্রসঙ্গে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির তরফে কথা বলা হয় অভিযুক্ত বিধায়কের সঙ্গে। তাঁর সাফাই, গতকাল উত্তমকুমারের জন্মদিনে মহানায়কের প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের জন্য জুতো খুলেছিলাম। নীচু হয়ে জুতোর বেল্ট পরাতে বা খুলতে অসুবিধা হয়। আমার নিজের লোক, নিজের ভাইপো বেল্টটি লোহার অংশে পরিয়ে দেন বা খুলে দেন। কোনও সরকারি কর্মী বা দলীয় কর্মী এটা করেননি। আমার জুতো আমি নিজেই পরি। আমি জুতো পরি, অন্যরা বেল্টটি পরিয়ে দেয়! ভাইপোকে ঢাল করে এমন সাফাই দিলেন বিধায়ক। কিন্তু নিজে জুতো পরা আর অন্য কেউ বেল্ট পরিয়ে দিলে তাও যে কাউকে দিয়ে জুতো পরানোই সেটা বিধায়ককে বোঝাবেন কে? যদিও পরে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে যিনি জুতোর বেল্ট ক্লিপে পরিয়ে দিয়েছেন তিনি বিধায়কের নিজস্ব ভাইপো নন। বর্ধমানের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ডোমপাড়ার বাসিন্দা অমিত মল্লিক। তিনি শুধু এদিনই নন বরাবরই বিধায়কের জুতো খোলা ও পরানোর দায়িত্বে থাকেন। বিধায়কের গাড়িতেও ঘুরতে দেখা যায় তাঁকে। সবমিলিয়ে বিধায়কের ছায়াসঙ্গী বলা যায়। পরে যাঁকে দেখা গিয়েছে জুতো পরাতে যেতে তিনি নবাবহাটের বাসিন্দা শেখ চাঁদ। ফলে এসসি সম্প্রদায়ের অমিত বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শেখ চাঁদকে দিয়ে জুতো পরাচ্ছেন অথচ নিজের জুতো কেন নিজে পরার চেষ্টা বিধায়ক করলেন না সেটাই অবাক করছে সকলকে।কেউ কটাক্ষও করছেন, দিদি যেখানে চটি পরে চলেন, সেখানে খোকন দাস যদি নিজের জুতোর ফিতে না-ই বাঁধতে পারেন তাহলে চটি বা চপ্পলও তো পরতে পারেন।
শত্রুপক্ষের কাজ!
কখনও সাংবাদিকদের উদ্দেশে কু-কথা বলা কিংবা টেন্ডার মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে বর্ধমান পুরসভা তথা দলকে অস্বস্তি ফেলা-সহ বিধায়ক হওয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছেন খোকন দাস। দলের মিটিংয়ে তাঁর কথায় কিছু ক্লু পেলেই তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে! রাজনৈতিক মহলের মতে, গতকালের ভিডিওটি-সহ এমন কিছু ভিডিও বা ঘটনা বিধায়ককে অস্বস্তিতে ফেলছে যা দলের ভিতর থেকেই বাইরে বেরোচ্ছে, নাহলে কারও জানা সম্ভবই নয়। বিধায়কের কথাতেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। সরাসরি দলের কারও দিকে আঙুল না তুললেও বারবার এমন বিতর্কে জড়ানো নিয়ে খোকন দাস বলেন, জেনে-বুঝে খারাপ কাজ করি না। কিছু মানুষই কিছু বিষয়কে সামনে এনে বিভ্রান্তির জায়গায় নিয়ে যান। সবাই তো মিত্র নয়, শত্রুপক্ষও আছে। দুনিয়ার মানুষকে সম্মান দিয়ে চলি। আবার বলছি, জুতো আমি নিজেই পরি, আমার নিজের লোকই বেল্টটা শুধু পরিয়ে দেন!
Recommended Video
যত্নবান হওয়ার পরামর্শ
বিধায়কের জুতো বিতর্ক নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডুর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিধায়ক নিশ্চয়ই ইচ্ছা করে এ কাজ করেননি। আমরা যাঁরা নেতৃত্ব দিই সারাদিন অনেক কর্মী-সমর্থক পাশে থাকেন। কখনও তাঁরা নিজেরা আমাদের দিকে জল এগিয়ে দেন, বা দরকার হলে কোনও ফাইল বা কোনও কিছু ধরে সহযোগিতা করেন। হতে পারে জুতো পরতে গিয়ে আটকে গিয়েছিল। এমনটা হতেই পারে। তখন কেউ সেই জুতোটি পরিয়ে দিয়েছেন, নেতাদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। তবে এটা ইচ্ছাকৃত ঘটনা নয়। কেউ ইচ্ছা করে এটা করিয়েছেন বা কেউ বিধায়ককে অস্বস্তিতে ফেলছেন এমনটা করেছেন তা নয়। সবটাই হয়েছে অজান্তে। আমাদের দলনেত্রী আমাদের যে শিক্ষা বারবার দিয়ে থাকেন তা হল, দলে কর্মীরাই সব। তবে সম্পর্কে অনেক কিছু হয়ে থাকে অজান্তেই। যদিও নেতাদের আরও যত্নবান হতে হবে। প্রয়োজনে আমি নিজে তাঁর সঙ্গে অবশ্যই কথা বলব। বিধায়ক দায়িত্বশীল মানুষ, দায়িত্ববান নেতা। ইচ্ছা করে এই ভুল হয়নি। ফলে এটাকে নিয়ে বেশি ভাবারও দরকার নেই।