শাসক দলের তোলাবাজি, পাততাড়ি গোটাতে পারে শ্যাম গোষ্ঠীও
আরও পড়ুন: জেসপ, হিন্দমোটরের পর ঝাঁপ ফেলল শালিমার পেন্টস, কর্মহীন ২৫০ জন
২০০৮ সালে জামুড়িয়ায় জমি কিনে ইস্পাত কারখানা গড়া শুরু করে শ্যাম গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ। তিনটি পর্যায়ে ন'হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা তাদের। প্রথম পর্যায়ে দু'হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ২০১১ সালে কারখানা চালু হয়। উৎপাদনও ভালোই হচ্ছিল। পুজোর পর আরও তিন হাজার কোটি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার আগেই বিভ্রাট শুরু হয়েছে।
অভিযোগ, জামুড়িয়ার দুই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অলোক দাশ ও চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায় কারখানা কর্তাদের কাছ থেকে তোলা আদায় করছেন। ভয় দেখাচ্ছেন, টাকা না দিলে কারখানা চলতে দেওয়া হবে না। কারা কারখানার কাজ পাবে, কোন গাড়িতে মাল যাবে, গাড়ি থেকে মাল খালাসে কাদের বরাত দেওয়া হবে, সবই ঠিক করে দিচ্ছেন এই দু'জন। এমনকী, নিজেদের পেটোয়া লোকেদের থেকে চড়া দামে কাঁচামাল কিনতে বাধ্য করছেন কারখানা কর্তৃপক্ষকে। বিরক্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এমন চলতে থাকলে হয়তো পুজোর আগেই ঝাঁপ ফেলবে ইস্পাত কারখানাটি।
অসম, মেঘালয় এবং ওড়িশাতেও রয়েছে শ্যাম গোষ্ঠীর কারখানা। মোট কর্মী ১৫ হাজার
এখানেই শেষ নয়। কারখানার পাশে রয়েছে একটি জঙ্গলঘেরা খাসজমি। এই জমিটির মালিকানা পেতে আইন মেনে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল শ্যাম গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ। অভিযোগ, শাসক দলের ওই দুই নেতা বলেন, জমির অর্ধেক দিতে হবে তাদের ঘনিষ্ঠ একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানাকে। এতে বেঁকে বসে শ্যাম গোষ্ঠী। তাই প্রায়ই কারখানা থেকে বেরোনোর সময় পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়া হচ্ছে।
শ্যাম গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট আর কে চক্রবর্তী বলেন, "অলোক দাশ নানা অছিলায় আমাদের থেকে টাকা আদায় করছেন। ওঁর বিরোধিতা করলে হুমকি দিচ্ছেন, কারখানা কীভাবে চলে দেখে নেব। সবাইকে পুঁতে ফেলব।" লাগাতার উৎপাতের কথা জানিয়ে সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (হিউম্যান রিসোর্স) সুমিত চক্রবর্তী জামুড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও হাত-পা গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে অভিযোগ।
অভিযোগ জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককেও। যদিও এখনও কেউ উত্তর দেননি।
জামুড়িয়া ছাড়াও বর্ধমান জেলায় শ্যাম গোষ্ঠীর আরও পাঁচটি কারখানা রয়েছে। অসম, মেঘালয় এবং ওড়িশাতেও রয়েছে কারখানা। মোট কর্মী ১৫ হাজার। শুধু জামুড়িয়ার কারখানাতেই কাজ করেন তিন হাজার কর্মী। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে এই তিন হাজার কর্মী ও তাঁদের পরিবারকে অনাহারে দিন কাটাতে হবে।