ফেসবুক লাইভে তৃণমূল কর্মীদের খুনের হুমকি ভাঙরের কাইজারের, ক্ষিপ্ত রেজ্জাকের নালিশ দলকে
এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে হাওয়া গরম। তারমধ্যে এবার নিজের দলের লোকেদেরই খুন করে দেহ পুঁতে দেওয়ার হুমকি দিলেন ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি কাইজার আহমেদ।
এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে হাওয়া গরম। তারমধ্যে এবার নিজের দলের লোকেদেরই খুন করে দেহ পুঁতে দেওয়ার হুমকি দিলেন ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি কাইজার আহমেদ। এমনকী, ফেসবুক লাইভ করে এই হুমকি দেওয়া হয়। রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীপদ বিলি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের নানা খবর মিলছে। এই ঘটনা তারই প্রতিফলন।
নিছক প্রার্থী পদ বিলি নিয়েই শুধুমাত্র এই হুমকি? এমনটা কিন্তু রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কেউই মানতে চাইছেন না। কারণ, কাইজার আহমেদ যে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ফেসবুক লাইভ করে চমকিয়েছেন তাঁরা কেউ যেমন তেমন ব্যক্তি নন। এঁদের মধ্যে একজনের নাম রউফ ডাক্তার। যিনি ভাঙরের তৃণমূল নেতা এবং বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার ভাইপো। এর সঙ্গে কাইজারের হুমকির সামনে যিনি পড়েছেন তাঁর নাম তাহের আলি। অপর জন বিনয়। এঁরা দু'জনেই ভাঙর ১ নম্বর ব্লকের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত এবং আপাতত দু'জনেই রেজ্জাক শিবিরের প্রতিনিধি বলে পরিচিত।
মঙ্গলবারের এই ফেসবুক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। কারণ, নিজের অফিসে ডেকে এনে নিজের দলেরই নেতা-কর্মীদের এভাবে ফেসবুক লাইভ করে হুমকি দেওয়ার ঘটনা কেউ খুব একটা আজ পর্যন্ত প্রত্যক্ষ করেননি। তিনিটি অংশে ভিডিওটি ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার হাতে পৌঁছয়। তাতে দেখা যাচ্ছে প্রথম ভিডিওটিতে রউফ ডাক্তার কাইজার আহমেদের অফিসে বসে আছেন। কেউ একজন সেই ছবি ফেসবুকে লাইভ করছেন। কাইজারের অনুগতরা আবার রউফের আসা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়াও দেয়। ভিডিও-তে এদের গলা পাওয়া গেলেও চেহারা সামনে আসেনি। কেউ কেউ আবার রউফের আসা নিয়ে তাঁকে গালাগালি দিয়েও প্রতিক্রিয়া দেয়।
দ্বিতীয় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কাইজার আহমেদ তাঁর টেবিলে বসে আছেন। তাঁকে ঘিরে বসে আছেন তাঁর অনুগতরা। সামনে একটি সবুজ চেয়ারে এসে বসেন রেজ্জাক মোল্লার ভাইপো রউফ ডাক্তার। আর তার পাশে বেঞ্চে বসে আছেন তাহের আলি এবং বিনয়। এদের সকলকে ঘিরে রেখেছে কাইজারের লোকেরা। চেয়ারে বসেই রউফ জানান, সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে ঢোকার পরই তাঁদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। তিনি আর রাজনীতির মধ্যে থাকতে চান না। বরং ডাক্তারি নিয়েই তিনি ব্যস্ত থাকতে চান। তাই কাইজারকে তিনি পাশে চাইছেন। ভিডিও-তে একজায়গায় কাইজার বলেন, রউফদের আসলে তৃণমূলে এসে পাখা গজিয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসা রেজ্জাক মোল্লাকে জেতানোর জন্য তাঁরা জান-প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছেন। আর সেই রেজ্জাক মোল্লার লোক রউফ তাঁদের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। রউফ প্রত্যুত্তরে জানান, কাইজারের আশীর্বাদেই তিনি স্থানীয় ক্লাবের সেক্রেটারি হয়েছেন। কিন্তু, ক্ষিপ্ত কাইজার বলেন, সেই সেক্রেটারি হওয়ার পর ক্লাবে যাতে তিনি না ঢুকতে পারেন তার ব্যবস্থা করেছেন রউফ। কাইজার আরও বলেন যে, 'গাছেই উঠতে পারলেন না, অথচ এক কাঁদি খাওয়ার শখ।' তৃণমূলের লোকেদের কাছে আগে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোরও পরামর্শ রউফ ডাক্তারকে দেন কাইজার।
তৃতীয় ভিডিওটি-তে দেখা যাচ্ছে রীতিমতো হুমকির মেজাজেই রউফ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলছেন কাইজার। তিনি অভিযোগ করেন রউফের ঘনিষ্ঠ আসগার মনোনয়নপত্র জমা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। রউফ ডাক্তার নাকি নিজেই সেই টাকার পরিমাণ নিয়ে দর কষাকষি করেছেন। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আসগার একজন রাতের অন্ধকারে ৩০ হাজার টাকাও ফেরত দিয়ে আসে বলে দাবি করেন কাইজার। তিনি পরিস্কার বলেন যে,- 'আসগারকে আমরা ছাড়ব না।' কাইজার আরও দাবি করেন যে জলা জমি ভরাট করা নিয়ে রউফ 'রেজ্জাকসাহেব'-এর নাম নিয়ে থানার ওসি-কেও 'চমকেছেন'। এমনকী ওসি-কে ৪ দিনের মধ্যে বদলি করে দেবেন বলেও নাকি রউফ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন কাইজার। বিডিও-কে রউফ এবং তাঁর লোকেরা চমকেছেন বলে জানান কাইজার। রউফ, তাহের ও বিনয়ের প্রাণ মাটিতে পুঁতে ফেলারও নাকি শপথ নিয়েছেন তাঁর অনুগতরা। এমনটাও হুঁশিয়ারি দেন কাইজার। এমন কাজের জন্য পুলিশের কাছে গিয়ে তাঁর ছেলেরা আত্মসমর্পণ করবে বলেও দাবি করেন কাইজার।
ফেসবুক লাইভে দলের অন্দরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার এমন অভিনব প্রচার নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইতে ফোন করা হয়েছিল রেজ্জাক মোল্লাকে। তিনি পরিস্কার বলেন, এই নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। চারিদিকে অনেকে অনেক কিছু বলছেন। দলকে সমস্তটাই তিনি জানিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন। এরবেশি আর কিছু বলবেন বলেও জানিয়ে দেন।
কথা বলা হয়েছিল কাইজার আহমেদের সঙ্গে। তাঁর সাফ জবাব, কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি। কিছু মানুষ দল বিরোধী কাজ করেছিল, তাই তাঁদের বোঝানো হচ্ছিল। আসলে কাইজাররা জানেন না বোঝানোর যদি এটা পদ্ধতি হয় তাহলে সোশ্য়াল মিডিয়ার জামানায় তা কতটা ভাইরাল হতে পারে। এই অজানার জন্য হয়তো ফেসবুকে লাইভ করে হিরো সাজতে গিয়েছিলেন কাইজার আহমেদরা। কিন্তু, বিষয়টা তো ব্যুমেরাং হয়ে গেল! তা কি বুঝতে পারছেন কাইজার!