'ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল', অনুব্রতকে পাশে রেখেই বিজেপির 'জয়গান' গাইলেন মুকুল
অনুব্রত মন্ডলকে পাশে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য মুকুল রায়ের! কলকাতা পুরনির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। যদিও সামনে রাজ্যের বকেয়া পুরনির্বাচনগুলি রয়েছে। আর এই অবস্থায় আজ বীরভুমে যান তৃণমূলের 'চাণক্য' মুকুল রায়। আর সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমনটাই বিস্ফোরক দাবি তাঁর। শুধু তাই নয়, মুকুল আরও বলেন, ''এই পৌর নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে।'' একেবারে বীরভুমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মন্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে এহেন মন্তব্য মুকুলের। যা নিয়ে রীতিমত হইচই রাজ্য-রাজনীতিতে।

সত্যিই কি অসংলগ্ন মুকুল!
দীর্ঘদিন সেভাবে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। দীর্ঘদিন পর অনুব্রত মন্ডলের খাসতালুকে পা রাখেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসার পরেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মুকুল রায়কে। পুরনির্বাচনে তৃণমূলে রণকৌশল জিজ্ঞেস করতেই মুকুলের জবাব, নির্বাচনে সারা পশ্চিমবাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে। তাঁর এহেন মন্তব্য রীতিমত অস্বস্তিতে পড়ে যান অন্যান্য নেতারা। পাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে একজন মুকুলকে ভুল ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তা ধরতেই ফের মুখ খুললেন মুকুল। এরপর রীতিমত বোমা ফাটালেন তিনি। বললেন, ''তৃণমূল তো বটেই। ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।''

চোখে মুখে অস্বস্তি!
এহেন মন্তব্যের পরে ফের কয়েকজন তা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অনুব্রত মন্ডল। বরং যতদ্রুত সম্ভব মুকুলকে সরানোর চেষ্টা করেন কেষ্টা। কিছু না বলতে চাইলেও এই মন্তব্য অস্বস্তিতে যে তাঁকে ভালো পড়তে হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায় অনুব্রত মন্ডলের চোখে মুখেই। যদিও সেখানে উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, শারীরিক ভাবে খুবই অসুস্থ মুকুল রায়। আর সেই কারনেই এমন অসংলগ্ন কথা বলে ফেলেছেন বলে দাবি স্থানীয় নেতৃত্বের।

বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে
ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে তৃণমূল শিবির। শুধু তাই নয়, অস্বস্তিতে মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুও। তিনি জানিয়েছেন, প্রত্যেক পুরসভাতেই তৃণমূলের জয় হবে। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে বাবার মানসিক অবস্থা ঠিক নেই বলে দাবি শুভ্রাংশুর। তাঁকে বাইরে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করানোর ভাবনা চিন্তা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে এসএসকেএমে, অ্যাপোল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে অযথা জটিলতা না তৈরির দাবি শুভ্রাংশুর।

ঘটনা নতুন কিছু নয়!
এই ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও এহেন মন্তব্য করেছেন মুকুল। গত ৬ অগস্ট কৃষ্ণনগরে বসে রীতিমত দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দেন। মুকুল বলেন, তৃণমূল পর্যুদস্ত হবে এবং বিজেপি নিজের ক্ষমতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে। পিছন থেকে ভুল শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তিনি আরও বিষয়টি জটিল করে ফেলেন। এমনকি পরবর্তীকালে বিধানসভাতে দাঁড়িয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে শোনা যায় তৃণমূল নেতাকে। সেই সময়ে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মুকুলের ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন।
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে!
একদিকে বীরভুমে দাঁড়িয়ে যখন বিজেপির সুখ্যাতি গাইছেন অন্যদিকে বিধানসভার অধ্যক্ষের কাছেও মুকুল জানাচ্ছেন, তিনি নাকি কোনও দিন তৃণমূল যোগ দেনইনি। এমনকি তিনি এখনও বিজেপিতে আছেন বলেই আইনজীবী মারফৎ জানান। মুলত বিধায়ক পদ খারিজ মামলার শুনানিতে এমনটাই জানান মুকুল। ফলে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে মুকুলের এহেন মন্তব্য কি শুধুই বেফাঁস নাকি এর পিছনে রয়েছে গভীর কোনও ষড়যন্ত্র?