অভিষেক গড়ে ফের ভাঙন, তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আরও এক 'মমতার সৈনিক'
অভিষেক গড়ে ফের ভাঙন, তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আরও এক 'মমতার সৈনিক'
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে ফের ভাঙন! ভাঙন অব্যাহত তৃণমূল কংগ্রেসে। দলের সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিলেন হবিবুর রহমান বৈদ্য। বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকার মল্লিকপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন হবিবুর। গত কয়েকদিন আগেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দীপক হালদার। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফের দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূল শিবিরে ভাঙন। ভোটের আগে রাজ্যজুড়ে একের পর এক জায়গায় ভাঙন ধরছে শাসকদলে। যদিও তাতে কিছু যায় আসে না বলেই বারবার দাবি করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, সাগর থেকে এক বালতি জল তুলে নিলে যেমন জল শেষ হয় না, তেমনই কে গেল আর কে এল তাতে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলই মত শাসকদলের সঙ্গে। দলের কাছে কর্মীরাই সম্পদ বলে মনে করছেন নেতৃত্ব। আর তাঁদের নিয়েই ফের ক্ষমতায় সরকার আসবে বলে মত তৃণমূলের।
কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না, অভিযোগ হবিবুরের
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রহমানের বেশ গুরুত্ব ছিল। দীর্ঘদিন ধরে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। আজ সোমবার হঠাৎ করেই মল্লিকপুর অঞ্চল সভাপতি, বারুইপুর ব্লক কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা কমিটির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন হবিবুর রহমান বৈদ্য। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের উপর একরাশ ক্ষোভ উগরে দল ছাড়লেন তিনি। বারুইপুরের তৃণমূলত্যাগী নেতা হবিবুর রহমান বৈদ্যের অভিযোগ, দলে এখন কাজের পরিবেশ নেই। দীর্ঘদিন ধরে কাজ যে তিনি করতে পারছিলেন না সে বিষয়ে ইস্তফাপত্রে বিস্তারিত জানিয়েছেন হবিবুর রহমান। একই সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সদ্য প্রাক্তন এই তৃণমূল নেতা।
হবিবুরের মুখেও 'গুটি পোকা' তত্ত্ব
তাঁর দাবি, দলে থেকে কিছু মানুষ ক্ষতি করছে দলের। যারা কাজ করতে চায় তাঁদের কাজ করতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ হবিবুরের। যদিও কারা তাঁরা সেই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি তিনি। তবে তিনি দল চাইলে অবশ্যই শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাতে পারেন বলে জানিয়েছেন হবিবুর রহমান বৈদ্য। আগামিদিনে উপপ্রধানের পদও যে তিনি ছাড়বেন সে বিষয়ে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন হবিবুর রহমান বৈদ্য। তবে আগামিদিনে মানুষের সেবা করতে চান বলেই জানিয়েছেন তিনি। তবে আগামিদিনে বিজেপিতে তিনি যোগ দেবেন কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সাংবাদিকদের হবিবুর রহমান বৈদ্য জানিয়েছেন, সময়েই সে কথা বলবে। অর্থাৎ তাঁর বিজেপি যোগের জল্পনা জিইয়ে রাখলেন হবিবুরসাহেব।
উল্লেখ্য, এর আগে একাধিক তৃণমূল ত্যাগী নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছিল এই গুটি পোকা তত্ত্ব। তাঁদের দাবি ছিল, দলে এমন কিছু মানুষ আছে যারা দলটাকে শেষ করে দিচ্ছে। এবার সেই তত্ত্বই তৃণমূলত্যাগী বারুইপুর ব্লক কমিটির সদস্যের মুখে।
কাজ না করার অভিযোগ ভিত্তিহীন!
বারুইপুর পশ্চিমের তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক সভাপতি গৌতম দাস বলেন, ''উনি ইস্তফা পত্র দিয়েছেন। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কাজ না করতে পারার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। উনি আবার কীভাবে কাজ করতে পারছিলেন না! প্রশ্ন তোলেন বারুইপুর পশ্চিমের তৃণমূল কংগ্রেস ব্লক সভাপতি। তাঁর দাবি, তৃণমূল দলটা সাগরের মতো। এক বালতি জল তুলে নিলে তাতে কিছু যায় আসে না বলেই দাবি ওই তৃণমূল নেতার।
শোভন-দীপক হালদার প্রভাব!
গত কয়েকদিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের বিধায়ক দীপক হালদার। যদিও বিধায়ক পদ না ছাড়লেও তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। তবে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যে, ইস্তফা দেওয়ার আগে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছিলেন দীপকবাবুর এরপরেই দলত্যাগ। ফলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর ডায়মন্ডহারবারে কিছুটা সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দায়িত্ব রয়েছে দিপোক হালদারের উপর। সেক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় সেখানে তাঁরও প্রভাব একটা কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাংগঠনিক জেলার (পূর্ব) সহ-সভাপতি বসন্ত শেঠিয়া বলেন, ''কেউ যদি দলে আসতে চায় স্বাগত। আমাদের দলে এসে কাজ করার সুযোগ পাবে।'' যদিও হবিবুর সাহেবও তাঁর বিজেপি যোগের বিষয় একটা ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফল অনুযায়ী, বারুইপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় বিজেপির থেকে ৩৫ হাজার ৩২ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগণার একাধিক কেন্দ্রে তৃণমূলই এগিয়ে ছিল। এমনকি খোদ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদারের বিধানসভা কেন্দ্রেও পিছিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু ভটের আগে যেভাবে শাসকদলে ভাঙন ধরছে তাতে সেই ফলাফল ধরে রাখাটা রীতিমত চ্যালেঞ্জের বলেই মনে করা হচ্ছে। ।
বাম-কংগ্রেসের জোটে জট তিন জেলায়! প্রশ্ন আব্বাস সিদ্দিকির দলকে সামিল নিয়েও