মিশন ২০১৯-এ বিজেপি কড়া নাড়ছে বাংলায়, ৮টি কেন্দ্রে প্রবল চিন্তায় তৃণমূল কংগ্রেস
এবার লোকসভা নির্বাচনে ৪২-এ ৪২ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভোট ময়দানে নামছে তৃণমূল। পাল্টা বিজেপি টার্গেট করেছে ২২ আসন। এই অবস্থায় প্রধান দুই প্রতিপক্ষ কত আসন পেতে পারে, এমন সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে
এবার লোকসভা নির্বাচনে ৪২-এ ৪২ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভোট ময়দানে নামছে তৃণমূল। পাল্টা বিজেপি টার্গেট করেছে ২২ আসন। এই অবস্থায় প্রধান দুই প্রতিপক্ষ আসন্ন লোকসভার আগে কতটা তৈরি। তারা কত আসন পেতে পারে, এমন সম্ভাব্য ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে নানা সমীক্ষা। সেই সমস্ত সমীক্ষা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি ১০টি আসনে তৃণমূল চিন্তায় রয়েছে।
লোকসভা ভোটের আর বাকি বড়জোড় ছ-মাস। এই অবস্থায় উভয় পক্ষই শান দিতে শুরু করেছে যে যার অস্ত্রে। আগামী ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে সভা করতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় সোনিয়া গান্ধী-সহ বিরোধী শিবিরের তাবড় নেতা-নেত্রীদের আনার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। আর বিজেপি পাল্টা মোদীকে এনে বাংলায় হাওয়া তুলতে চাইছে।
উত্তর কলকাতা
গত লোকসভা নির্বাচনে কলকাতার দুই কেন্দ্রেই প্রবলতর প্রতিপক্ষ রূপে দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে। এবারও তার পুনরাবৃত্তি হবে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সমীক্ষাও মনে করছে, বিশেষ করে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে বিজেপি কঠিন লড়াই দেবে। গতবার এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ২ লক্ষ ৪৭ হাজার। বিজেপির প্রার্থী ছিলেন রাহুল সিনহা তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হার মেনেছিলেন। এবার এই কেন্দ্রে বিজেপি আরও শক্তিশালী হয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কলকাতা দক্ষিণেও বিজেপি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিল। তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩৭৬। তবে উত্তরের মতো দক্ষিণ বাড়তে পারেনি বিজেপি। তা থেকেই অনুমান, বিজেপি এবার উত্তর কলকাতায় বড় চমক দিতে পারে।
আসানসোল
প্রবল মোদি হাওয়ায় গতবার এই কেন্দ্রটির দখল ছিল বিজেপির হাতে। বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৯৮৩। এবারও এই কেন্দ্রটি ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি, আশাবাদী বিজেপি। তৃণমূলের ৪২-এ ৪২ করার ক্ষেত্রে আসানসোল কেন্দ্র বড় অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে। সমীক্ষা রিপোর্টেও আসানসোলে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। এখনও এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রভাব যথেষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রভাব রয়েছে বাবুল সুপ্রিয়র। একেবারে বাতিলের খাতায় তাঁকে ফেলা যাবে না।
পুরুলিয়া
গতবার পুরুলিয়া কেন্দ্রে বিজেপি চতুর্থ হলেও, মুকুল রায়ের যোগদানের পর এই কেন্দ্রে বিজেপি অনের শক্তিশালী হয়েছে। তৃণমূলে প্রবল ভাঙন দেখা দিয়ছে। ২০১৪ লোকসভায় বিজেপি এই কেন্দ্র ৮৬ হাজার ২৩৬ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু বিজেপির বিশ্বাস জঙ্গলমহলে পালাবদলের সূচনা হয়েছে। সেই কারণেই পঞ্চায়েত ভোটে প্রভূত সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। সেই সাফল্যকে পাথেয় করেই এই কেন্দ্রে জিততে পারবে বলে মনে করছে বিজেপি। ফলে এই কেন্দ্রটিও তৃণমূলের লক্ষ্যপূরণে কাঁটা হয়ে উঠতে পারে।
মেদিনীপুর
সিপিআইয়ের হাতে থেকে গতবার এই কেন্দ্রটি তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছিল। এবার বিজেপি তৃণমূলের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর। ২০১৪ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হন বিশিষ্ট অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। প্রবোধ পাণ্ডার মতো হেভিওয়েটকে হারিয়েছিলেন তিনি। তবে বিজেপি এবার এই কেন্দ্রটিকে টার্গেট করছে। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৭১। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গড় এই কেন্দ্রটি। খড়গপুরে কংগ্রেসের রাজত্বে বিজেপি হানা দেওয়ার পর এবার মেদিনীপুর জয় করার ব্যাপারে বিজেপি অগ্রগণ্য বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মালদহ উত্তর
কংগ্রেসের গড় মালদহ। দীর্ঘকাল এই জেলার দখল কংগ্রেসের হাতে ছিল। কিন্তু এবারই প্রথম তাঁরা নড়বড়ে। ২০১৪ সালে কংগ্রেস গড় মালদহের এই কেন্দ্রে চতুর্থ স্থান লাভ করেছিল বিজেপি। তবে খুব কম ভোট তারা পায়নি। ১ লক্ষ ৭৯ হাজার ভোট পেয়েছিল সেবার। এখন মালদহে তারাই দ্বিতীয় শক্তি হয়ে উঠেছে। সেই কারণে এই কেন্দ্রটি এবার বিজেপি টার্গেট করেছে। তৃণমূলেরও উত্থান হয়েছে এই কেন্দ্রে। এবার এই কেন্দ্রের মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির হবে বলেই মনে করচে রাজনৈতিক মহল। মৌসম বেনজির নুর এখানে পিছিয়ে পড়তে চলেছেন বলে সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ।
কৃষ্ণনগর
নদিয়ার কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটিতে বিজেপি বরাবর শক্তিশালী। গতবার তারা পরাজিত হরলেও প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৭৩। যদিও এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপি তৃতীয় স্থান লাভ করে। যথারীতি কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে জয়ী হয় তৃণমূল। তবে এই কেন্দ্রের সাংসদ তাপস পাল এবার ব্যাকফুটে। বিজেপি এবার এই কেন্দ্রটিকে তাই টার্গেট করেছে। তার উপর তৃণমূলের সমস্যা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারছে না তারা।
বহরমপুর
মুর্শিদাবাদে অধীরের গড় তছনছ করে দিয়েছে তৃণমূল। তবে এখনও পরিক্ষিত নয় তৃণমূল কতটা তৈরি অধীর-গড়ে অধীরকে লড়াই দেওয়ার জন্য। তাই এই কেন্দ্রটিও তৃণমূলের সংশয়ে থাকবে। পঞ্চায়েতে যে কাজ অবলীলায় করতে পেরেছে তৃণমূল, লোকসভায় তা না করতেও পারে। ফলে ৪২-এ ৪২-এর স্বপ্ন অধীরের গড়ে এসে ধাক্কা খেতে পারে।
রায়গঞ্জ
২০১৪ সালে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে চতুর্থ হলেও ২ লক্ষ ৩ হাজার ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তারপর বাংলার ভোট বিন্যাস এই মুহূর্তে অনেকটাই বদলেছে। এই কেন্দ্রে মূল লড়াই হয়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএমের। বিজয়ী হয়েছিল সিপিএম। তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস-সিপিএম সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। সমানতালে বেড়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। দুই বর্ধিত শক্তি এবার পরীক্ষা দেবে। তার ফল কোনদিকে যাবে সেদিকে চেয়ে থাকতে হবে দু-পক্ষকেই। এই কেন্দ্রে লড়াই তাই ফিফটি-ফিফটি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৃণমূলের ৪২-এ ৪২ করায় যে কেন্দ্রগুলি অন্তরায় হতে পারে, সেগুলি একনজরে।