রাত পোহালেই কলকাতা পুরভোট, কোন ইস্যুতে তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে বিজেপি
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে কুর্সি দখলের পর মমতার তৃণমূল উপনির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছে। এবার পের ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে বাংলায়। রাত পোহালেই পুরসভা নির্বাচন কলকাতায়।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে কুর্সি দখলের পর মমতার তৃণমূল উপনির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছে। এবার পের ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে বাংলায়। রাত পোহালেই পুরসভা নির্বাচন কলকাতায়। এবার কলকাতায় কোন দল এগিয়ে তা পূর্ববর্তী ভোটেকর ফলেই স্পষ্ট। ফলে একথা পরিষ্কার যে নিকাশি থেকে শুরু করে জল সমস্যা বা ডেঙ্গু- কোনও ইস্যুই এবার বিরোধীরা তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে।
কলকাতা পুরসভায় চিরকালই দক্ষিণপন্থীরা শক্তিশালী। বাম আমলেও কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি ছিল কলকাতা। সেই ধারা বজায় রেখে এখন তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতার রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। ২০১৫-র পুরসভা নির্বাচনেও দেখা গিয়েছিল তৃণমূল ৮০ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হয়েছিল। এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে কলকাতা পুরভোট নির্ধারিত সময়ের থেকে প্রায় বছর খানেক পরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত ২০-২১ বছরের মধ্যে তৃণমূল ১৬ বছর কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব সামলে এসেছে। এই সময়ে কলকাতা বদলে গিয়েছে বিস্তর। লন্ডন না হলেও কলকাতা ঝাঁ চকচকে হয়েছে। হয়েছে আলো-ঝলমলে। কিন্তু কলকাতার পুরনো রোগ সারেনি। কলকাতা আজও জলে ঢুবে যায় একটু বৃষ্টি হলে। পানীয় জলের সমস্যাও রয়ে গিয়েছে বিস্তর।
এই পরিস্থিতি তৃণমূল এবার ২০২১-এর ভোট লড়াইয়ে নামছে। তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী এবারের ভোটে কোনও রাজনৈতিক দল নয়। সিপিএম-কংগ্রেস তো প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার লড়াই করছে, আর বিজেপি এখনও কলকাতায় তৃণমূলকে ফাইট দেওয়ার মতো কোনও মুখ খুঁজে পায়নি। তাই কোনও রাজনৈতিক দলের থেকেই বড়ড কথা তৃণমূলকে লড়াউ করতে হবে কতকগুলি নাগরিক পরিষেবাগত সমস্যা নিয়ে।
কলকাতার সবথেকে বড় সমস্যা হল জল জমা। তা মেনে নিচ্ছে সাসক তৃণমূলও। সেই প্রসঙ্গে বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, জল জমা ঠেকানোই এখন সবথেকে বড় সমস্যা। তার জন্য তৃণমূলের বোর্ড অনবরত কাজ করে চলেছে। আমরা খাল সংস্কার করছি। ড্রেনেজ সিস্টেমকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কলকাতার ড্রেনেজ পরিকাঠামো তো পরিবর্তন করে দেওয়া সম্ভব নয়।
আর এভাবে যে জল জমা নিয়ে সমস্যা হয়েছে, তার জন্য তৃণমূলের বোর্ডকে পুরোপুরি দায়ী করাও যাবে না। এবার অসম্ভভ বৃষ্টি হয়েছে। রেকর্ড বৃষ্টিতে জল জমা সমস্যা যে কোনও শহরে থাকবে। নগরায়ন হয়েছে, কিন্তু প্রাচীন সিস্টেম রয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অন্য শহরের থেকে কলকাতায় তুলনায় কম জল জমার সমস্যা।
এছাড়া পুকুর ভরাট, বেআি নির্মাণ বা পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়েও। সেই সমস্যা মোকাবিলায় পুরসভা কাজ করেছে। কিন্তু এসূই পুরনো সমস্যা। বেআইনি নির্মাণ বা পুকুর ভরাট আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। পিরহাদ হাকিম বলেন তাঁর আমলে পুকুর ভরাট হতে দেননি। তবে বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে, তা ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে নমনীয়ও হতে দেখা গিয়েছে সাধারণের কথা ভেবে। ফলে কোনও ইস্যুই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেভাবে ধোপে টিকছে না। বিরোধীরা কোনও ইস্যুকেই সেভাবে হাতিয়ার করতে পারেনি।
তবে একথা বলা যায় যে, এবার সমস্ত নাগরিক পরিষেবার পাশাপাশি কলকাতা পুরসভায় বড় ইস্যু হবে করোনা মোকাবিলায়। করোনা বাইরাসের মহামারী রুখতে কতটা কার্যকরী রূপে দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরসভাকে। কলকাতার বিদায়ী মেয়র তথা পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমকে করোনা মহামারী রুখতে সামনে সারিতে রেখে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সামনে দাঁড়িয়েই করোনা মোকাবিলায় কলকাতাবাসীর পাশে থেকেছেন। এক্ষেত্রে ফিরহাদ হাকিম যে লেটার মার্কস পাবেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তা বলে তৃণমূল হালকাভাবে নেয়নি এবারের পুর নির্বাচনকে। এক ব্যক্তি এক পদ নীতি থেকে সরে এসে পুর প্রশাসন চালাতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশাসকদের প্রয়োজন বলেই অনেক পুরনো মুখকে প্রার্থী করা হয়েছে। মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করাও প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের। এক ব্যক্তি এক পদ নীতি জলাঞ্জলি দিয়ে তাঁরা পুরো ফর্মে ফিরে গিয়েছেন। এখন দেখার একুশের নির্বাচনে বিরোধীরা কতখানি বাধার প্রাচীর খাঁড়া করতে পারে তৃণমূলের সামনে।