আদিবাসী ভোট নিয়ে সম্মুখ সমরে বিজেপি বনাম তৃণমূল, কার কী পরিকল্পনা পঞ্চায়েতের আগে
আদিবাসী ভোট নিয়ে সম্মুখ সমরে বিজেপি বনাম তৃণমূল, কার কী পরিকল্পনা পঞ্চায়েতের আগে
মতুয়া ভোট নিয়ে তো লড়াই রয়েইছে তৃণমূল ও বিজেপির, এবার আদিবাসী ভোট নিয়েও সম্মুখ সমরে নামতে চলেছে যুযুধান দুই পক্ষ। অখিল গিরির করা রাষ্ট্রপতি-মন্তব্যের পর সেই লড়াই শুরু হয়েছে সেয়ানে-সেয়ানে। বিজেপি হাতে বড় অস্ত পেয়ে গিয়েছে। আর তৃণমূল সেই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে ঢাল জোগাড় করে নিয়েছে ইতিমধ্যেই।
২০১৯-এ যে আদিবাসী ভোট বিজেপির দিকে ঢলেছিল, তার অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছিল তৃণমূল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে। বাংলার শাসক দল তৃণমূল আদিবাসী ভোট সম্পূর্ণ করায়ত্ত করতে পাখির চোখ করেছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মতুয়া ভোটের পাশাপাশি আদিবাসী ভোট নিয়েও নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন মমতা।
বীরসা মুন্ডার জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মমতা বন্যোয়েপাধ্যায় আদিবাসীদের জন্য নতুন কিছু ঘোষণা করতে পারেন, এমনতা তার পরিকল্পনার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এখন দেখার আদিবাসীদের মন জয় করতে তিনি কী অবস্থান নেন তাঁর ঝাড়গ্রাম সফরে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝাড়গ্রাম সফর যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই বিজেপি যে অবস্থান নিয়েছে তাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তৃণমূলের মন্ত্রী অখিল গিরি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে যে কুরচিকর মন্তব্য করেছিলেন, তাকে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমেছে বিজেপি। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যে বিজেপি আদিবাসী ভোটের লক্ষ্য এই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াবে তা বলাই বাহুল্য।
তৃণমূলের দুর্নীতি ইস্যুর থেকে বিজেপির কাছে এখন বড় হয়ে উঠেছে অখিল গিরির রাষ্ট্রপতি মন্তব্যটি। এই ইস্যুতে তৃণমূলের আদিবাসীদের প্রতি মনোভাব যে নিকৃষ্ট, তা প্রচার করে বিজেপি ফায়দা তুলতে চাইছে পঞ্চায়েত ভোটে। বিজেপির সেই প্রচারকে ভোঁতা করতে তৃণমূল পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীর কিছু পুরনো ভিডিওকে সামনে এনেছে।
শুভেন্দু অধিকারীও আদিবাসী মহিলা তৃণমূল নেত্রী বীরবাহা হাঁসদাকে নিয়ে যে কটূ মন্তব্য করেছিলেন তা সামনে এনে ডিফেন্স করতে চাইছে। তার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী মহলে গিয়ে তাঁদের প্রতি সরকারের আনুগত্যের কথা বলবেন। এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কল্পতরু হয়ে বেশ কিছু পরিষেবহার কথা ঘোষণা করবেন।
আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে আদিবাসী ভোট তৃণমূলের দিকে ফেরাতে তৎপর তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যে আদিবাসী ভোটকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারও। তাই আদিবাসীদের জন্য রাজ্যে তরফে একাধিক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য দুয়ারে কর্মসূচিতে জমির পাট্টা বিষয়ক ব্যবস্থাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। তাঁর সরকার কী দিয়েছে আদিবাসীদের, ভবিষ্যতে কী দেবে তাও তুলে ধরবেন মমতা। সেইসঙ্গে বীরসা মুন্ডার মূর্তি উদ্বোধন করে আদিবাসী আবেগও উসকে দেবেন তিনি।
অখিল গিরির মন্তব্যকে আদিবাসী বিরোধী বলে প্রমাণ করে বিজেপি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফায়দা তুলতে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। রাজ্যজুড়ে প্রচারে ঝড় তুলতে উদ্যোগী গেরুয়া শিবির। তৃণমূল তাই চটজলদি জানিয়ে দিয়েছে, অখিল গিরির মন্তব্যের দায় তারা নেবে না। তড়িঘড়ি ক্ষমাও চেয়েছেন মন্ত্রী, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীও। তৃণমূল কংগ্রেস যে অখিল গিরির এই ধরনের মন্তব্যকে সমর্থন করে না তা বারবার ফলাও করে বলা হয়েছে।
অখিল গিরির ওই মন্তব্য আদিবাসী ভোটে প্রভাব পড়তে পারে, তা বুঝেই তৃণমূল পাল্টা প্রচার শুরু করে দিয়েছে। শুভেন্দুর ভিডিওকে সামনে এনে পাল্টা প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূলও। যে এলাকায় আদিবাসী মানুষের বাস বেশি সেই গ্রামে ও পাড়ায় গিয়ে ব্লক নেতারা জনসংযোগ করছেন। কার কী সমস্যা, তার সমাধান করছেন। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে মানুষের কৌতুহলের জবাব দিচ্ছেন। এইভাবে আদিবাসী ভোট ফেরানোর প্রক্রিয়া আরও বাড়ানো হয়েছে।
তৃণমূল থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আদিবাসীদের একটা বড় অংশ, তা তাদের বিশ্লেষণেই উঠে এসেছে। ২০১৯ সালে তৃণমূলের আদিবাসী ভোটেব্যাঙ্কে ধস নামিয়েই বাংলায় ১৮টি আসন দখল করেছিল বিজেপি। যদিও ২০২১-এ আবার সেই ভোট অনেকটাই তৃণমূল ফেরাতে সমর্থ হয়েছিল। তবে ঝাড়গ্রামে ভালো ফল করলেও বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার ভালো ফল করতে পারেনি তৃণমূল, এমনকী উত্তরের জেলা গুলিতেও তৃণমূল আদিবাসী ভোট ফেরাতে ব্যর্থ হয়। তাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে আদিবাসী ভোট ফেরাতে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিল তৃণমূল। বাধ সাধল অখিলের একৃটা মন্তব্য। বিজেপির পালে ফের হাওয়া লাগল তাতে।
এখানে উল্লেখ্য যে, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় বহুসংখ্যক আদিবাসীর বাস। লোকসভা ভোটের বিধানসভাওয়াড়ি ফল অনুযায়ী ১৬টি বিধানসভার মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল ১৩টি আর তৃণমূলের দখলে ছিল তিনটি আসন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ১৬টির মধ্যে তৃণমূলের দখলে যায় ৯টি আসন, বিজেপি পায় সাতটি। তৃণমূলের পক্ষে ৪৫ শতাংশ ভোট যায়, ৪৪ শতাংশের বেশি ভোট পায় বিজেপি। এখন দেখার আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে কার পাল্লা ভারী হয়। তারপর মহাসংগ্রাম ২০২৪-এর।
অভিশাপ হয়ে উঠছে জনবিস্ফোরণ! ভারতে জনসংখ্যার বৃদ্ধির নেপথ্যে যে দুটি রাজ্য