
বাংলায় ফিরছে ভাঙনের রাজনীতি! তৃণমূল ও বিজেপির বাকযুদ্ধে সিঁদুরে মেঘ রাজ্য-রাজনীতিতে
বাংলায় যত ভোট এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ভাঙন জল্পনা। দল ভাঙলে তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই সিদ্ধহস্ত। যে প্রবণতা ২০১৯-এর আগে থেকে শুরু হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে, তা আবার ফিরে আসতে চলেছে বাংলায়। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উভয়েই হুঙ্কার ছাড়ল দলকে ভাঙার। বিজেপি আবার ডিসেম্বর ধামাকার বার্তাও দিয়ে রেখেছে তৃণমূল সরকারকে।

তৃণমূলকে ছত্রখান করেও ফায়দা তুলতে পারেনি বিজেপি
২০২১-এর আগে তৃণমূল ভেঙে বিজেপি ত্রাস সঞ্চার করছিল বাংলায়। কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলকে। বিজেপি নাগাড়ে যোগাদান মেলা করিয়ে তৃণমূলকে ছত্রখান করেও ফায়দা তুলতে পারেনি ২০২১-এর ভোটে। এমনকী শুভেন্দু-মুকুল-রাজীবদের নিয়েও মমতা-ক্যারিশ্মাকে ম্লান করতে পারেনি তারা। একুশের নির্বাচনে তো হেরেইছে, তার পরবর্তী উপনির্বাচন ও পুরনির্বাচনেও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বাংলায় ফের ফিরছে ভাঙনের রাজনীতি, তা নিশ্চিত
ভোট পরবর্তী সময়ে ঠিক উল্টো স্রোত দেখা দিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিজেপি ছেড়ে ফের ঘরে ফেরার জোয়ার পড়ে গিয়েছিল একুশের ভোটের পরে। বিগত এক বছর ধরে দলবদলের হিড়িক একটু থমকে ছিল। বিশেষ করে বড় কোনও দলবদল হয়নি। কিন্তু আবার তা শুরু হতে চলেছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে। অন্তত বিজেপি ও তৃণমূল যেভাবে একের পর এক হুঙ্কার ছাড়ছে, তাতে বাংলায় ফের ফিরছে ভাঙনের রাজনীতি, তা নিশ্চিত।

বিজেপির নজরে তৃণমূলের ৩০ থেকে ৪০ জন বিধায়ক
বিজেপি পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাংলার মুখ করে এনেছে মিঠন চক্রবর্তীকে। তাঁকে বিভিন্ন জেলায় জেলায় ঘুরিয়ে জনসংযোগের কাজ করাচ্ছে বিজেপি। তিনিই প্রথম সুর তুলেছেন ভাঙনের। তৃণমূলের ২১ জন বিধায়ক তাঁর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন বলে হুঙ্কার দিয়েছেন। তারপর বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, এমনকী রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেছেন তৃণমূলের ৩০ থেকে ৪০ জন পা বাড়িয়ে রয়েছেন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য।

শুভেন্দু অধিকারীর ডিসেম্বর ধামাকাও রয়েছে
আর তারপর শুভেন্দু অধিকারীর ডিসেম্বর ধামাকার বিষয়টি তো আছেনই। তার ফলে ডিসেম্বরে তৃণমূল সরকার পড়ে যাওয়ার একটা আবহ তৈরি করা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীকে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে ডিসেম্বরেই ধামাকা হবে, ২০২৪-এ যদি লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হয় বাংলায়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পরে অবশ্য তিনি বলেছেন, সরকার ফেলে দেবো, তা একবারও আমরা বলিনি। তবে ডিসেম্বরে যা ঘটবে, তারপর তৃণমূল সরকার চালাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে যায়!। এরপর ছোটো-বড়ো সমস্ত বিজেপি নেতাদেরই মুখে শোনা যায় ডিসেম্বর ধামাকার কথা।

পাঁচ সেকেন্ডের জন্য দরজা খোলার বার্তা, ভাঙন জল্পনা তীব্র
এই পরিস্থিতিতে পাল্টা হুঙ্কার ছাড়লেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির ডিসেম্বর ত্রাসকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কাঁথির সভা থেকে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য দরজা খোলার বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি প্রায়ই বলেন, আমি দরজা খুললে বিজেপির পুরো দলটাই শেষ হয়ে যাবে। শুধু আমাদের নেতা-কর্মীরা চাইছেন না বলে আমরা দরজা বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু এখন একবার খুলে দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে। তাঁর এই কথায় ফের ভাঙন জল্পনা উঁকি দিয়েছে বিজেপিতে।

বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার জন্য কারা লাইনে রয়েছেন?
তিনি সাফ জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে ছোট্ট করে দরজাটা খুলতে চান ৫ সেকেন্ডের জন্য। তারপর মঙ্গলবার সংহতি দিবসে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সেই জল্পনা আরও উসকে দিয়েছেন। তিনি সাফ করে দিয়েছেন, এবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসার জন্য কারা লাইনে রয়েছেন? তৃণমূল মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিজেপির একাধিক সাংসদ, বিধায়ক ও পদাধিকারী পদ্ম-পতাকা ছেড়ে জোড়া ফুলের পতাকা ধরতে মুখিয়ে রয়েছেন।

ওঁরা কিন্তু কেউ দলবদলু নন, ৯৯.৯৯ শতাংশই বিজেপি
শুধু তাই নয়, কুণাল ঘোষ জানিয়ে দিয়েছেন, অভিষেকের কাছে একের পর এক আবেদন আসছে। একাধিক বিজেপি সাংসদ ও বিধায়ক, এমনকী পদাধিকারী নেতারাও তৃণমূলে আসার জন্য চিঠি দিয়েছেন অভিষেককে। অনেকে যেমন চিঠি লিখেছেন, অনেকে আবার হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসটাইম কলও করেছেন। আর এঁরা কিন্তু কেউ দলবদলু নেতা নন। এঁদের ৯৯.৯৯ শতাংশ বিজেপি। অভিষেকের পর কুণালের মুখে এতটা প্রত্যয় দেখে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে জল্পনা। রাজ্য রাজনীতিতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

শুভেন্দুর ভবিষদ্বাণী সত্যি হলে আর দরজা খুলতে হবে না
তবে তৃণমূলকে পাল্টা দিতে ছাড়েননি বঙ্গ বিজেপির মুখপা্ত্র শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এসব শুধু চাপ কাটানোর স্ট্র্যাটেজি। শুভেন্দুর ডিসেম্বর ভবিষদ্বাণী সত্যি হলে আর দরজা খুলতে হবে না তৃণমূলকে। ওরা বরং দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকুক। আর দরজা শেষ পর্যন্ত কারা খোলে, সেটা দেখা যাবে পরে। আর এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি, তৃণমূল নেতাদের দয়া করে রাতের বেলা ফোন করে বিরক্ত করতে মানা করুন।
Mamata Banerjee: মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কোন পথে হাঁটবে দল? রণকৌশল নির্ধারণে সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা