গণবিবাহের গোটা আসর 'হাইজ্যাক', তৃণমূল-ভিএইচপি টানাপোড়েনে কী ঘটল আলিপুরদুয়ারে
গণবিবাহের গোটা আসর 'হাইজ্যাক', তৃণমূল-ভিএইচপি টানাপোড়েনে কী ঘটল আলিপুরদুয়ারে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও শ্রী হরি সৎসংঘ সমিতির উদ্যোগে গণবিবাহের আয়োজন করে। এই খবর পেয়ে গণবিবাহ আটকে দিল পুলিশ। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এই গণবিবাহকে কার্যত হাইজ্যাক করে নিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। গণবিবাহ নিয়ে শুরু হয় জমজমাট রাজনৈতিক নাটক। গোটা জেলায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়।
আলিপুরদুয়ারে গণবিবাহ
সোমবার আলিপুরদুয়ার শহরের বিএম ক্লাব ময়দানে একটি গণবিবাহের আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও শ্রী হরি সৎসংঘ সমিতি। আলিপুরদুয়ার গণবিবাহ সমিতি এরা সমস্ত আয়োজন করে। আলিপুরদুয়ার গণবিবাহ সমিতি গঠন করে প্রায় ১৮০ জোড়া গরীব যুগলকে তারা এক সঙ্গে বিবাহ দেওয়ার আয়োজন করা হয়।
এলাকায় চাঞ্চল্য
নির্ধারিত এই কর্মসূচির মাত্র একদিন আগে আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ চৌপতি গণবিবাহের প্রচার করার সময় আটক করে থানায় নিয়ে আসে। উদ্যোক্তাদের আলিপুরদুয়ার থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। উদ্যোক্তারা আলিপুরদুয়ার থানায় এসে পুলিশের সঙ্গে দেখা করলে পুলিশ এই গণবিবাহের উদ্যোক্তাদের নাম ঠিকানা বিস্তারিত জানতে চায়। এছাড়া যাদের গণবিবাহের মঞ্চে বিবাহ দেওয়া হবে তাদের নাম ঠিকানা বিস্তারিত চেয়ে পাঠায়।
হস্তক্ষেপ পুলিশের
আলিপুরদুয়ার বি এম ক্লাবের মাঠে গিয়ে গণবিবাহের মঞ্চও খুলে দেয় পুলিশ। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ এর পরেই পুলিশ আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় যেখান থেকে গরীব মানুষেরা এই গণবিবাহের মঞ্চে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল তাদের ধরপাকড় করতে শুরু করে। আলিপুরদুয়ার ও শামুকতলা থেকে মোট তিনজনকে গণ বিবাহ অনুষ্ঠানের উদ্যোগতাকে আটক করে পুলিশ। আর রাত পার হতেই শুরু হয় নুতুন নাটক। যে সমস্ত যুগলদের ডেকে থানায় নিয়ে এসেছিল পুলিশ তাদেরকেই বিবাহ দেওয়ার আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলা থানার তুরতুরি বেলতলা এলাকায় এইরকম একটি গনবিবাহের আয়োজন করা হয়।
তৃণমূল-ভিএইচপি দ্বন্দ্ব
আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন বঞ্চুকামারি, মাঝের ডাবরি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও গণ বিবাহের অনুষৎান হয়।এই সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নেত্রীরা। মাঝের ডাবরিতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেকা তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি মৃদুল গোস্বামি। আলিপুরদুয়ার গনবিবাহ সমিতির সভাপতি রতন তরফদার বলেন, শাসকদলের তল্পিবাহক এ পরিণত হয়েছে পুলিশ প্রশাসন। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাদের গণবিবাহের অনুষ্ঠান ভন্ডুল করে পুলিশ। যে সমস্ত যুগলের বিবাহ হওয়ার কথা ছিল তাদের সম্মান ও অসুবিধার কথা বিবেচনা করে আমরা এই গণবিবাহের অনুষ্ঠান বাতিল করি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পুলিশ তাদেরকে ধরে এনে শাসকদলের হাতে তুলে দেয়। শাসক দল তাদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গণবিবাহের আয়োজন করেছে। আমরা শাসক দল ও পুলিশের এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সামাজিক অনুষ্ঠানে পুলিশের এই হস্তক্ষেপ কোনদিন মেনে নেবে না সমাজ।
একে অপরকে দোষারোপ
জানা গিয়েছে আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া মাঝের গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যুব তৃণমূল কংগ্রেসের আয়োজন করা গণবিবাহ উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী। তিনি বলেন " তারা কোথায় গণবিবাহের আয়োজন করেছিল তা আমি জানিনা। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পুলিশি অনুমতি নিয়ে আমাদের ছেলেরা গণবিবাহের আয়োজন করেছিল। আমি নিজে মাঝে রডাবরিতে এরকম একটা গণবিবাহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। ফুটবল খেলার নিয়ম না জেনে কেউ যদি মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে পড়েন তাহলে আর আমরা কি করব।
কী বলছে পুলিশ
বিষয়টি নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, আলিপুরদুয়ার শহরে গণবিবাহের কোনো অনুমতি ছিল না। পুলিশি অনুমতি ছাড়া এই ধরনের অনুষ্ঠান করা যায় না। সেই কারণে আমরা এই অনুষ্ঠান করতে দেইনি। গ্রামেগঞ্জে কোথায় কি হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে খবর ছিল কিছু মানুষকে জোর করে হিন্দু ধর্মের মন্ত্র উচ্চারণ করে এই গণবিবাহের আয়োজন করা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।