টেট দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক বিশ্বজিৎ, মমতা-পার্থকে সৎ সাহস দেখানোর চ্যালেঞ্জ
টেট দুর্নীতি। এবারেও বিধানসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু। সিপিআইএম, কংগ্রেস তো বটেই, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও টেট কেলেঙ্কারি ইস্যুতে নিশানা করছে বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে। কালনার এই তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মেদিনীপুরের একই মঞ্চ থেকে অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপির পতাকা নেন। তৃণমূলে যতদিন ছিলেন ততদিন তাঁকে টেট দুর্নীতিতে বিদ্ধ করেনি শাসক দল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনেও জয়লাভও করেন। তবে তিনি বিজেপিতে যেতেই বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলতে বিরোধী দলগুলির মতোই রাজ্যের শাসক দলের নেতৃবৃন্দ আক্রমণ করছেন বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে। কালনা থেকে তৃতীয়বার বিধায়ক হওয়ার লক্ষ্যে তিনি লড়বেন বিজেপির টিকিটেই। তাঁর সমর্থনে ১৩ এপ্রিল কালনায় প্রচারে আসার কথা রয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার। তার আগে টেট কাঁটায় বিদ্ধ হতেই বিশ্বজিৎ পাল্টা সৎ সাহস দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের দিকেই।
টেট দুর্নীতি হয়েছে
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ওয়ানইন্ডিয়া বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে আজ বলেন, তৃণমূল এখন হতাশায় ভুগে এ সব বলছে। ২ মে রেজাল্ট, বাংলা থেকে নির্মূল হওয়ার দিন গুনছে। বিরোধী দলগুলির মতো আমিও তো বলছি টেট দুর্নীতি হয়েছিল। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে আমি শিক্ষামন্ত্রীও ছিলাম না, পরীক্ষার খাতাও দেখিনি, নিয়োগের দায়িত্ব যে কর্তাদের হাতে ছিল তাঁদের মধ্যেও আমি ছিলাম না।
প্যানেল বাতিল হোক
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু আরও বলেন, ২০১৪ সালে যে ১৬-১৭ হাজার ছেলে-মেয়ের চাকরি হয়েছে প্রাথমিকে তার সবটাই সারা বাংলার তৃণমূল বিধায়ক, নেতাদের সুপারিশেই। সরকারের সৎ সাহস থাকলে প্যানেল বাতিল করুক। যাঁদের নাম বাদ হবে তখনই বুঝতে পারবেন তাঁরা কারা, কাদের মিটিং-মিছিলে হাঁটেন। তাঁরা কে কত টাকা কাকে দিয়েছেন তাও তো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তৃণমূল পচে গিয়েছে
বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান ও প্রশাসক পদ সামলানো দেবপ্রসাদ বাগকে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তৃণমূলের উপরমহলকে জানিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। কাজের কাজ হয়নি। এবার ভোটে জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বিশ্বজিৎ বলেন, আগের থেকেও জেতার ব্যাপাারে আমি এবার বেশি আত্মবিশ্বাসী। ১০ বছর ধরে নৈরাজ্য চলেছে। ২০১৫ সালের পৌরসভা ভোটে ছাপ্পা, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ছাপ্পা, কাউন্টিংয়ে পর্যন্ত কারচুপি হয়েছে। কাটমানি আর কমিশনে দলটা পচে গিয়েছে। কাটমানির জন্যই নতুন রাস্তায় ৩ মাসের মধ্যে গর্ত হয়ে গিয়েছে। বাড়ি বা শৌচালয় করে দিতেই কাটমানি! তৃণমূল পচে গিয়েছে বলেই ১৭ তারিখের ভোটে মানুষ দু-হাত ভরে আশীর্বাদ করবেন। আগেরবারের চেয়েও বেশি, ৩০-৪০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতব।
শেষের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু আরও বলেন, তৃণমূলের এখন বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ হয়েছে। ওই জন্যই এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। ২ তারিখ দিদির ঘুম ভাঙবে। আমার অভিযোগগুলি ঠিক ছিল না বেঠিক তা সেদিনই তিনি বুঝতে পারবেন।
শুভেন্দুর কথাতেই বিজেপিতে
দলের শীর্ষস্তরে অভিযোগ জানিয়েও সাড়া না পেয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথাও ভেবেছিলেন বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। মত বদলান শুভেন্দু অধিকারীর আহ্বানে। বিশ্বজিতের কথায়, ১০ বছর ধরে তৃণমূলের নৈরাজ্য দেখে মানুষ পরিবর্তনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছেন। তৃণমূলের জেলা ও রাজ্য সভাপতিকে লিখিত জানিয়েছি ব্লক সভাপতি, কালনার চেয়ারম্যানের মতো ব্যক্তিদের কার্যকলাপ সম্পর্কে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও জানিয়েছি। যাঁর সম্পর্কে অভিযোগ করলাম তাঁকেই শহর সভাপতি নিয়োগ করার পর মনে হয়েছিল, আমার কাজ শেষ। রাজনীতি করব না। ২ মাস কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছিলাম না। মিডিয়াতেও বলা হয়েছিল, বিধায়ককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তিনি কিছু বলছেন না ইত্য়াদি। শুভেন্দু অধিকারী একদিন আমাকে বললেন বিজেপিতে যোগদানের জন্য। কয়লা, বালি, মাটি- সব কিছুতে যারা তোলা তুলছে সেই তোলা তোলার সরকারকে সবক শেখাব। বিজেপিতেও সকলে আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। দলের সৈনিকদের পরিশ্রমেই সাফল্য আসবে, দলকে কালনা বিধানসভা আসনটি উপহার দিতে চাই।
সৌগতকে চাপ
বিশ্বজিৎ কুণ্ডু আবার জানালেন, তিনি কখনোই বলেননি তৃণমূলে থাকবেন। বিশ্বজিতের কথায়, আমার কাছে সৌগত রায়ের ফোন নম্বরই নেই। কোনও বাক্যালাপই হয়নি। তাও উনি কেন ও সব বলেছিলেন জানি না। মনে হয় ওঁর মতো ভদ্র, শিক্ষিত মানুষকে চাপ দিয়েই মিথ্যা বলানো হয়েছিল। কারণ উনি নিজে থেকে মিথ্যা বলার লোক নন, ওঁকে শ্রদ্ধাই করি।
প্রাধান্য সেতু
এসটিকেকে রোডের সঙ্গে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের যোগাযোগের জন্য কালনা ও নৃসিংহপুরের মধ্যে সেতু তৈরির ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল এখন বলছে বিধায়কের অনীহাতেই সেতু তৈরির কাজ এগোয়নি। বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বললেন, এখানেও মিথ্যাচার! সেতুর টাকার অ্যালটমেন্ট হয়েছিল। কিন্তু বোঝা গিয়েছে সরকারের ভাঁড়ারে টাকা নেই। সরকার নির্ধারিত দামে অনেক চাষিই অনুমতি প্রদান করেছিলেন এসডিও অফিসে জেলাশাসকের সামনেই। জেলাশাসক-সহ অনেক কর্তা জমির বিষয়টি সরেজমিনে দেখেও যান। যদি সেই চাষিদের চেক দেওয়া হতো তাহলে ৮০ শতাংশ কাজ এগিয়ে যেত। অনেকের বাড়ি ভাঙা পড়ছিল। সেই ক্ষতিপূরণ বা সব ধরনের জমির তো এক দামও হয় না। তাও যেখানে জমির দাম বেশি সেখানে জমির দাম বাড়ানোর কথাও হয়। কিন্তু বিপুল ঋণভারে জর্জরিত সরকারের আসলে টাকাই নেই। তাই মুখে যা বলছে কাজে তা করতে পারবে না। ক্ষমতাতেও আসবে না। ডাবল ইঞ্জিন সরকার হলে এক বছরের মধ্যে এই সেতুর কাজ শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন কালনার বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।