মার্চে কাজ হারানোর শঙ্কায় প্রায় ২ লক্ষ শিক্ষক, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোমবার বিকাশ ভবন অভিযান
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে কাজ হারানোর শঙ্কায় ১লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা। যাঁদের মধ্যে নব্বই শতাংশেরই বয়স ৫৫ বছরের উপরে। যার জেরে সোমবার বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন এই শিক্ষকরা।
লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে কাজ হারানোর শঙ্কায় ১লক্ষ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা। যাঁদের মধ্যে নব্বই শতাংশেরই বয়স ৫৫ বছরের উপরে। যার জেরে সোমবার বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন এই শিক্ষকরা। সমস্যা বেঁধেছে ন্যাশনাল ওপেন স্কুল-এর ডি.ইএল.ইডি পরীক্ষার দুটো পেপারের পরীক্ষা বাতিলে। এই পরীক্ষা বাতিলের জন্য কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সপ্তাহের শুরুর দিনে বিকাশ ভবন অভিযানে নামছেন কয়েক হাজার শিক্ষক।
গোটা ঘটনায় ন্যাশনাল ওপেন স্কুল-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন শিক্ষকরা। এতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগে সরব হয়েছেন তাঁরা। ২০ এবং ২১ ডিসেম্বর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ডি.ইএল.ইডি-র ৫০৬ ও ৫০৭-এর পরীক্ষা হয়। কিন্তু, চার দিন পরেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের কথা বলে এই দুই পেপারের পরীক্ষা বাতিলের কথা ঘোষণা করে ন্যাশনাল ওপেন স্কুল বা এনওএস। এই বিঞ্জপ্তিতে জানানো হয় উত্তর দিনাজপুরে প্রশ্নের হেফাজতের দায়িত্বে থাকারা এই ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই এই পরীক্ষা বাতিল হওয়াতেই যাবতীয় গণ্ডগোল।
এনসিটিই-র নির্দেশনামা অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যেই সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষককে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি নিতে হবে। যাঁদের এই ডিগ্রি নেই তাঁদের জন্য ন্যাশনাল ওপেন স্কুল অনলাইনে এই ডি.ইএল.ইডি-র ডিগ্রি-র সুযোগ দিচ্ছে। এনসিইআরটি-র অনুমোদনেই অনলাইনে এই কোর্স করাচ্ছে এনওএস। কিন্তু, ৫০৬ নম্বর পেপার যা আন্ডারস্ট্যান্ডিং চিলড্রেন ইন ইনক্লুসিভ কন্টেক্সট এবং ৫০৭ নম্বর পেপার যা কমিউনিটি অ্য়ান্ড এলিমেন্টারি এডুকেশন-এর পরীক্ষা বাতিলের পর আরও কয়েকটি পেপারের পরীক্ষা বাকি। ৫০৬ ও ৫০৭ নম্বর পেপারের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে এনওএস। ডি.ইএল.ইডি পরীক্ষা প্রক্রিয়া ১৫ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে। এরপর ফল প্রকাশের জন্য হাতে মাত্র ১৫ দিন থাকছে। এই অল্প সময়ের কীভাবে ফল প্রকাশ হবে তা নিয়ে শঙ্কায় এই রাজ্যের অন্তত ১ লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কোনওভাবেই যে এনসিটিই-র নির্দেশ অনুযায়ী ৩১ মার্চের মধ্যে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিল করা যাবে না তাতে একপ্রকার নিশ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ফলে, ৩১ মার্চের পর শিক্ষক প্রশিক্ষণের ডিগ্রি না থাকাদের হাল কী হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না শিক্ষকরা।
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় স্তরে যে খানে একই সঙ্গে পরীক্ষা হচ্ছে সেখানে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কেন পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে। একই প্রশ্নপত্রে রাজস্থান-সহ আরও কয়েক রাজ্যে পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে কেন পরীক্ষা বাতিল হবে না? প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তথ্য-প্রযুক্তির জামানায় শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারাদেশেই তা মুহূর্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। এটা পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের দফতরের বঞ্চনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুতরাং, এই প্রশ্নফাঁসকাণ্ডের যথোপযুক্ত তদন্ত হওয়া দরকার। এই জন্য সিবিআই তদন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হতে পারে বলে মনে করছেন মইদুল। ইতিমধ্যেই শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে এবার পথে নেমেও আন্দোলনে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। ডিসেম্বরের শেষেই কলকাতায় এনওএস-এর দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কয়েক শ'শিক্ষক। সোমবার বেলা ১২টায় করুণাময়ী-তে জমায়েত হচ্ছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। অন্তত ১৫টি গাড়িতে করে কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষকরা সেখানে জমায়েত হবেন। এরপর সেখান থেকে একটা বিশাল মিছিল বের করা হবে। যা যাবে বিকাশ ভবনে। সেখানে বিক্ষোভ জমায়েতের সঙ্গে সঙ্গে একদল প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে দেখা করবেন। এই সাক্ষাৎকালে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ জানাবে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।
শিক্ষকদের অভিযোগ, পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর তা বাতিল হওয়ার পিছনে যথেষ্টই রহস্য রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এর পিছনে রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিও রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে কর্মসংস্থানে একটা কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির চেষ্টার সম্ভাবনাও তাঁরা উড়িয়ে দিতে রাজি নন। ১লাখ ৬৯ হাজার শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে। চাকরিজীবনের শেষপ্রান্তে এসে তাঁদের এখন শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রমাণ দাখিলের বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। অনেক কষ্ট করেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে অনলাইনে ক্লাস নোট নিতে হয়েছে। প্রযুক্তিগত অজ্ঞানতার বেড়া টপকে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। কিন্তু বাতিল দুই পেপার নিয়ে ফের পরীক্ষা দেওয়াটা এই সব প্রবীণ শিক্ষকদের পক্ষে সমস্যার। বাতিল দুই পেপারের পরীক্ষা নাকি এবার সিবিইএসসি স্কুলগুলিতে নেওয়া হতে পারে। এর ফলে আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে। এই সব শিক্ষকদের অভিযোগ, আগে তাঁরা এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে সেন্টারে পরীক্ষা দিতে পারছিলেন। কিন্তু, সিবিইএসসি স্কুলে পরীক্ষা হলে এক্সাম সেন্টারের দূরন্ত ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চও। এনওসি কর্তৃপক্ষকে এই নিয়ে ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করা হয়। কিন্তু সেই ফোন কেউ তোলেননি।