সামনে কঠিন 'যুদ্ধ', তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে 'বার্তা' সিপিএম-এর
ছোট রাজ্য হলেও, ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বড় ধাক্কা। পাঁচ বছর আাগে বাম বিরোধী হিসেবে ত্রিপুরায় যে যাত্রা তৃণমূল শুরু করেছিল, তার কোনও অংশই রইল না সেখানে।
ছোট রাজ্য হলেও, ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বড় ধাক্কা। পাঁচ বছর আাগে বাম বিরোধী হিসেবে ত্রিপুরায় যে যাত্রা তৃণমূল শুরু করেছিল, তার কোনও অংশই রইল না সেখানে। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য রাজনীতিতে যা প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য ছিল ২০১৯-এর আগে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সেই লক্ষ্যে ২০১৭ থেকেই শুরু হয়েছিল প্রয়াস। কংগ্রেস ছাড়াও রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সমাজবাদী পার্টি, জনতা দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। এমন কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া না মাড়ালেও সংসদে বিজেপি বিরোধী অনেক ইস্যুতেও তৃণমূলের সুরে সুর মেলাতে দেখা গিয়েছিল সিপিএম-সহ বাম দলগুলিকে। কিন্তু শনিবারে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের ফল যে সেই লক্ষ্যে বড় ধাক্কা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও সিপিএমকে দোষ দিয়ে বিজেপির জয়কে খাটো করে দেখে বিবৃতি জারি করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ত্রিপুরা বিধানসভায় জয়লাভের পর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জানান, তাঁদের পরের লক্ষ্য বাংলা। এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, পিঁপড়ের ডানা গজালেও সে পাখির মতো হতে পারে না। বিজেপির এই জয়কে মানি ও মাসল পাওয়ারের জয় বলে অভিহিত করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তাদের স্বপ্ন দেখা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এটা সিপিএমের পরাজয়, কিন্তু বিজেপির জয় নয়।
ভারতের রাজনীতিতে কিছুটা পিছনের দিকে গেলে দেখা যাবে, সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই কংগ্রেস এবং আঞ্চলিকদলগুলির সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া চেয়েছিলেন। কিন্তু এই চেষ্টার বিরোধিতা করেছিলেন সিপিএমেরই প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত-সহ সিপিএম-এর কেরল শাখা।
ত্রিপুরায় সিপিএমের হারের পরেই তৃণমূলের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি বিরোধী যুদ্ধে সিপিএম অন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নেয়নি। এই হারের জন্য সিপিএম-কেই দায়ী করেছিলেন তিনি। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি সিপিএমকে ত্রিপুরায় জয়ী হিসেবেই দেখতে চান। শনিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিবৃতির পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বৃদ্ধি রোধ করতে নতুন স্ট্র্যাটেজি নিতে চলেছে তৃণমূল। কেননা পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গিয়েছে বিজেপির ফলাফল সিপিএম এবং কংগ্রেসের থেকে ভাল। বেশিরভাগ জায়গাতেই তারা দ্বিতীয় হিসেবে শেষ করছে।
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিমের অভিযোগ, ত্রিপুরায় কংগ্রেস ও তৃণমূল বিজেপির সঙ্গে মিশে যাওয়াতেই সেখানে জয়লাভ করেছে বিজেপি। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা বিজেপিকে উৎসাহিত করেছে। বিজেপিকে কোনও সাহায্য না করে পশ্চিমবঙ্গে তাদের দুর্গ রক্ষা করুক তৃণমূল। এমনটাই মন্তব্য করেছেন তিনি।
উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিজেপি যে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তা মেনে নিয়েছেন সেলিম। অনেকটা ত্রিপুরার লাইনেই এই কাজ করছে বিজেপি। যদিও সেলিমের দাবি, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি এক নয়। তবে অনেক আগে থেকেই বিজেপির বিপদ সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। সামনের যুদ্ধ যে আরও কঠিন তাও মেনে নিয়েছেন সেলিম।
তবে সেই যুদ্ধে তৃণমূল এবং সিপিএম একসঙ্গে লড়াই করে কিনা এখন সেটাই দেখার।