ধর্ম বিতর্কের ঊর্দ্ধে উঠে এক অনন্য নজির হাওড়া প্রশমার, যে কাহিনি সকলকে গর্বিত করবে
শিক্ষাঙ্গনে ধর্ম যে কোনও মাপকাঠি হতে পারেনা তাপ্রমাণ করে দেখি য়ে দিল হাওড়া উদয়নারা.ণপুরের প্রথমা সাসমল।
হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্য অর্জন করে এক অনন্য নজির গড়ল হিন্দু ঘরের মেয়ে প্রশমা শাসমল। মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মেয়েদের মধ্যে তৃতীয় হয়েছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের প্রশমা। বাংলা ওয়ানইন্ডিয়া ডট কমের মুখোমুখি হয়েছিল সে।
দেশে ধর্মীয় হিংসার আবহের মধ্যেই হাওড়ার খলতপুর হাইমাদ্রাসার হিন্দু ছাত্রী প্রশমা ,সংহতির এক উজ্জ্বল নির্দশন। হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা রাজ্যের মধ্যে সে দখল করেছে অষ্টম স্থান, মেয়েদের মধ্যে তৃতীয়। এই পরীক্ষায় প্রশমা পেয়েছে ৯১.৯ শতাংশ নম্বর। শুধু প্রশমা নয়, তার পরিবারের আরেক সদস্যও মাদ্রাসার পড়ুয়া। প্রশমার ভাই প্রমিত শাসমলও খলতপুর মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
প্রশমা ভবিষ্যতে পদার্থ বিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় বলে জানিয়েছে। এছাড়াও বরাবরই যে তার লক্ষ ছিল পরীক্ষায় ভালো ফল করার, তা জানাতে ভোলেনি প্রশমা। তার এই সাফল্যের পিছনে মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাহায্য অনস্বীকার্য বলেও জানায় প্রশমা।
প্রশমা আরও জানায় ,এরআগে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরেরই গড়ভবানীপুর উষারানী করাতী বালিকা বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী ছিল সে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে সে এই খলতপুর হাই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তখন থেকেই সে এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে প্রশমা। প্রশমার দাবি,পড়াশুনার দিক দিয়ে আগের বিদ্যালয়ের সাথে এই মাদ্রাসার কোনও তফাৎ আছে বলে তার কখনওই মনে হয়নি।
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের কুরুচিশিবপুরের বাসিন্দা প্রশমার বাবা প্রশান্ত শাসমল পাঁচারুল গ্রাম পঞ্চায়েতের জব অ্যাসিস্টেন্ট পদে কর্মরত । তিনি জানান," জানতাম এই মাদ্রাসার লেখা পড়ার মান খুব ভালো, সেই কারণেই মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এখানে ভর্তি করেছিলাম। আমার সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিল প্রশমার ফলেই তা প্রমাণ হল"। প্রশমার মা ঝুমা শাসমল জানালেন ,মেয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দিনে সাত-আট ঘন্টা পড়াশোনা করত। মাদ্রাসার শিক্ষকরা প্রশমার পড়াশোনার দিকে বরাবর নজর রাখতেন। পরীক্ষার আগে কয়েকটি বিষয়ের জন্য তারা গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও তিনি জানান।
হিন্দু মেয়েকে কি ভেবে মাদ্রাসায় ভর্তি করলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ঝুমা দেবীর বক্তব্য, আমার মেয়ে বরাবরই খুব মেধাবী। আমি জানতাম এই মাদ্রাসার পড়াশোনার মান অত্যন্ত ভালো মানের। মেয়ের মেধার বিকাশের জন্য একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছিল, সেটি মাদ্রাসা হোক বা অন্য কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান !পাশাপাশি তিনি আরও জানান, যে অনেকের মনের মধ্যে ভূল ধারণা রয়েছে যে মাদ্রাসায় ভালো মানের পড়াশোনা হয়না। এই ধারণা সম্পূর্ণ রূপে ভূল।
প্রশমা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও এই খলতপুর হাই মাদ্রাসা থেকেই দেবে বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। শুধু প্রশমাই নয়,এই খলতপুর হাই মাদ্রাসা থেকে এবারের মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে সপ্তদশ স্থান অধিকার করে নজির গড়েছে মলয় মাঝিও। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭২০। এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক তথা খলতপুর আল আমীন মিশনের সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানান তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীদের এরকম সাফল্যে তিনি আনন্দিত এবং গর্বিত।তিনি আরও জানান মঙ্গলবারই প্রশমাকে এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নুরুল ইসলাম আরও জানান খলতপুর মাদ্রাসা থেকে এই বছরে তেত্রিশ জন ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষায় বসেছিল।তাদের মধ্যে এগারো জন ছেলে এবং বাইশ জন মেয়ে। মেয়েদের মধ্যে নয় জন হিন্দু ছাত্রী। তেত্রিশজন ছাত্র ছাত্রীই উত্তীর্ণ হওয়ার পাশাপাশি তদের মধ্যে ছয়জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই সাফল্যকে ঘিরে মাদ্রাসায় এখন উৎসবের পরিবেশ।
{promotion-urls}