সূর্যগ্রহণের সঙ্গে রাহু-কেতুর কী সম্পর্ক! সূর্যকে গিলে ফেলা নিয়ে পুরাণ কথা
সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হলেই এখনও অনেক নিয়ম বাড়িতে। বিজ্ঞানের কথা কজনই বা মানে। কেন সূর্যগ্রহণ হয়, তা নিয়েও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বাইরে আরও একটা ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যা আসে না বলে বলা ভালো বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাসে ভর করেই এখনও সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ মানেন এক শ্রেণির মানুষ।

পুরাণে গ্রহণ গল্প
বিজ্ঞানের জ্ঞানের বাইরে আমরা যে একটা মত পাই, তা গল্প বললেও অত্যুক্তি হয় না। সেটা হল পুরাণ কথা। পুরাণ মতে, রাহু আর কেতু নামে দুই দানব সূর্য আর চন্দ্রকে গিলে ফেললেই হয় সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ। কিন্তু কেনই বা তারা গিলে ফেলে সূর্য বা চন্দ্রকে, তা নিয়েই বেশ মজার গল্প রয়েছে পুরাণে।

পান থেকে চুন খসলেই স্বর্গ আক্রমণ
সেই গল্প হল- দেবতাদের স্বর্গরাজ্য। সেদিকে কুনজর ছিল অসুরদের। পান থেকে চুন খসলেই স্বর্গ আক্রমণ করার রেওয়াজ ছিল অসুরদের। কতবার যে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে হয়েছে দেবতাদের, তার হিসেব নেই। একবার দেবতারা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে নারায়ণের শরণাপন্ন হয়েছেন। নারায়ণ সমুদ্র মন্থন করে অমৃত ভাণ্ড তুলে আনার দাওয়াই দিলেন।

বিষ্ণুর কথা মতোই কাজ
নারায়ণ বললেন, ওই অমৃত পান করলে দেবতারা অমরত্ব লাভ করবেন। তাহলে তারা স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। কিন্তু সমুদ্র মন্থন তো আর কথরা কথা নয়, সেখানে দানবদেরও নিয়োগ করতে হবে। একা দেবতাদের পক্ষে তা করা অসম্ভব। বিষ্ণুর কথা মতোই কাজ শুরু হল।

নাগরাজ বাসুকী হলেন দড়ি
মন্দার পর্বত দিয়ে মন্থন শুরু হল। নাগরাজ বাসুকী হলেন দড়ি। তাঁর মুখের দিকে দানবরা আর লেজের দিকে দেবতারা ধরে মন্থন করা হল সমুদ্র। সেই সমুদ্র থেকে উঠে এল অনেক কিছুষ সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এল চন্দ্রমা, এল ঐরাবত, কালো রক্ষের উচ্চৈশ্রবা ঘোড়া। তারপর এল পারিজাত পুষ্প। নির্গত হল বিষ। তা পান করে ব্রহ্মাণ্ডের রক্ষা করলেন শিব। শেষে এলেন ধণ্বন্তরী। তিনি সঙ্গে নিয়ে এলে অমৃত ভাণ্ড।

নারায়ণ মন্থন বন্ধ করার আজ্ঞা দিলেন
এদিকে বরুণ দেব সমুদ্র মন্থনে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের এই অভিযোগ নিয়ে নারায়ণের কাছে গেলেন। বিষ্ণু নারায়ণ বললেন, দুর্বাসা মুনির শাপে লক্ষ্মীদেবী তোমার কাছে আছেন, তাঁকে নারায়ণের কাছে ফিরিয়ে দাও, তারপর তিনি মন্থন বন্ধ করে দেবেন। সেইমতো চতুর্দোলায় চাপিয়ে লক্ষ্মীদেবীকে ফিরিয়ে দিলেন বরুণদেব। নারায়ণ মন্থন বন্ধ করার আজ্ঞা দিলেন।

অপরূপা নারীকে দেখে দানব অসুররা মোহিত
এদিকে অমৃত ভাণ্ড ধণ্বন্তরীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছেন অসুররা। তখনই মোহিনী বেশে হাজির হলেন নারায়ণ। অপরূপা সুন্দরী নারীকে দেখে দানব অসুররা তো মোহিত হয়ে গেলেন। অমৃত ভাগের দায়িত্ব পড়ল মোহিনীরূপী নারায়ণের উপর। দানবরা অপলক দৃষ্টিতে অপরূপা মোহিনীকে দেখতে থাকলেন। এদিকে অমৃত দেবতাদের মধ্যেই বিলিয়ে দিলেন নারায়ণ।

অমৃত শেষ হয়ে আসছে, খেয়ালই নেই দানবদের
অমৃত শেষ হয়ে আসছে, খেয়ালই নেই দানবদের। রাহু ও কেতু ঠিক লক্ষ রেখেছিলেন। তখন তাঁরা ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে দেবতাদের দলে। পান করে অমৃত। আর তা দেখতে পায় সূর্য ও চন্দ্র। নারায়ণকে তা জানাতেই নারায়ণ তাঁদের গলা ধড় থেকে আলাদা করে দেন তাঁর সূদর্শন চক্র দিয়ে। অমৃত খাওয়ার ফলে রাহু আর কেতুর মাথা অমর হয়ে মহাশূন্যে ঘুরতে থাকে।

পুরাণ মতে তখনই সুর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয়
যেহেতু সূর্য ও চন্দ্র তাদের কথা নারায়ণকে জানিয়ে দিয়েছিল, তাই রাহু-কেতুর রাগ তাদের উপর। সেই রাগের ফলেই যখনই তারা সুযোগ পায় সূর্য ও চন্দ্রকে গিলে ফেলে। পুরাণ মতে তখনই সুর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয়। যখন পুরোটা গিলে ফেলে তখন পূর্ণগ্রাস, যখন আংশিক গিলে ফেলে, তখন খণ্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয়।
শান্তি ও কল্যাণের বার্তা দেয় যোগ! মোদীর সুরেই আরও যা বললেন রাষ্ট্রসংঘের ডিরেক্টর জেনারেল