সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষ গৃহহীন হন আমফানে! জানেন কি সেই সংখ্যা?
২০২০ সালের মে মাস, করোনার থাবায় সেই সময় জর্জরিত গোটা দেশ সহ বাংলাও। কিন্তু দুর্যোগের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গের কপালে। রাজ্যের বুকে কালের মত আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান। এরকম ঝড় সত্যি এর আগে বাংলা কখনও দেখেছে কিনা তা সন্দেহ। আর ঠিক এই সময়ই করোনার পাশাপাশি আমফানের থাবা কেড়েছিল একাধিক প্রাণ। শুধুমাত্র তাই নয়, এই ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে ঘড়ছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। আর সেই পরিসংখ্যান সব রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। সংখ্যাটা জানলে শুধু অবাক নয়, বরং চোখ কপালে উঠতে বাধ্য।
'আইপিসিসি'র রিপোর্ট
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেছে ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা 'আইপিসিসি'। আর সেখানেই আমফানে হওয়া ক্ষয়-ক্ষতি সহ কত মানুষ গৃহহীন হয়েছিলেন সেই হিসেবও পেশ করা হয়েছে। সেখানে তথ্য সমেত উল্লেখ করা হয়েছে যে ঘূর্ণিঝড় আমফান ভূগোলের ইতিহাসে সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। 'আইপিসিসি'র হিসেব অনুযায়ী গোটা ভারতে এই সংখ্যা প্রায় ২.৪ মিলিয়ন, অর্থাৎ প্রায় ২৪ লাখ। এঁদের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ মানুষকে অন্যত্র স্থানাতর করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি শুধু বাংলাতেই আমফানের থাবায় প্রাণ গিয়েছে প্রায় ১০০ জনের, যা এককথায় নজির বিহীন।
জেনেভা মনিটরিং সেন্টারের পূর্বাভাস
জেনেভায় অবস্থিত 'দ্যা ইন্টারনাল ডিস্প্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার' আমফান সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছিল আগেই। এই সংস্থার অনুমান ছিল ২০২০ সালে এই ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসে বাংলাদেশ বা ভারতের বুকে আছড়ে পড়তে পারে যা প্রভাবিত করতে পারে মায়ানমার এবং ভুটানের আবহাওয়াকেও। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের গৃহহীন হওয়ার রেকর্ড তৈরি করেছে, যা এর আগে কখনও হয়নি।
ভূপেন্দর যাদবের বয়ান
কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব আমফানে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সম্পর্কে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে লোকসভায় একটি বয়ান পেশ করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, "অনেক গবেষণা পরিবেশের চরম ঘটনাগুলি নিরীক্ষণ করে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তা সবথেকে বেশি পরিলক্ষিত হয়। অ্যাট্রিবিউশনের বেশিরভাগ গবেষণাই সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলির উপর নির্ভর করে " তবে ইদানিং কালে দেখা যাচ্ছে যে দেশ জুড়ে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা একটু বেশিই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটছে জলবায়ুরও। এমনটাই মত কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রীর।
কে জে রমেশের মত
ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক কে জে রমেশের মতো বিশেষজ্ঞরা অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ঘূর্ণিঝড়ের এই ভয়াবহতা প্রসঙ্গে রমেশ বলেন, সমুদ্রের লবণ এবং জলের মতো মহাসাগরীয় অ্যারোসলগুলি সমুদ্রের উপর ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া বা তার তীব্রতার প্রাথমিক উত্স। লকডাউনের ফলে বাতাসে দূষণ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল, যা ঘূর্ণিঝড়ের উপর প্রভাব ফেলেছিল, নাহলে বাতাসের ধূলিকণার জন্য হয়ত আমফানের তীব্রতা আরও বেশি হত।"