বটবৃক্ষে বাঁধা ভূতের দল, ভূত-চতুর্দশীতে মাত্র একরাতের জন্য মুক্তি পান তেনারা
এ এক ভূতের মুক্তির উপাখ্যান। আজও এক বটগাছকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে রয়েছে কত না কল্পকথা। কত বিশ্বাস। কত কাহিনি। মানুষের বিশ্বাসে মাত্র এক রাতের জন্য ভূত মুক্তি পায় এ গ্রামে।
এ এক ভূতের মুক্তির উপাখ্যান। আজও এক বটগাছকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে রয়েছে কত না কল্পকথা। কত বিশ্বাস। কত কাহিনি। মানুষের বিশ্বাসে মাত্র এক রাতের জন্য ভূত মুক্তি পায় এ গ্রামে। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বিশ্বাস বহন করে চলেছেন গ্রামবাসীরা। ভূত চতুর্দশীর রাতে মুক্তিলাভ, পরের দিনই ফের মন্ত্র-তন্ত্রে গাছে বাঁধা পড়ে ভূতেরা।
আসানসোলের মহিশীলা গ্রামের এক নম্বর কলোনির শ্মশানঘাটে ভূত চতুর্দশীর দিন থেকে সাজো সাজো রব। এই গাছেই ভূতদের বেঁধে দিয়েছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপার প্রধান শিষ্য বনমালী ভট্টাচার্য। প্রায় ৭০ বছর আগের সে কাহিনি আজ মিথে পরিণত হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস গাছে বাঁধা পড়া তেনারা আজও রয়ে গিয়েছেন স্বমহিমায়।
তাই প্রতি বছর ভূত-চতুর্দশীর পূণ্যদিনে সেই ভূতের দলকে মদ-মাংস দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। তারপরই তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয় গাছের বাঁধন খুলে। ভূত চতুর্দশীর রাতে তাঁরা ঘুরে-বেড়ান। রাতভর পূজার্চনার পর আবার তাঁদের বেঁধে দেওয়া হয় গাছে। কালীপুজোর রাতে তাঁরা বাঁধা পড়ে বটবৃক্ষে। সারা বছর ভূতেরা বাঁধা থাকেন। অপেক্ষা পরের বছরের ভূত চতুর্দশীর ভোগ প্রাপ্তি ও মুক্তিলাভের।
আসানসোলের রায় পরিবাররের জমিদার তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্যকে জমি দান করেছিলেন আশ্রম গড়ে তোলার জন্য। মহিশীলার পিয়ালবোড়োর ওই শ্মশান সংলগ্ন নির্জন স্থানে তিনি নিজের সাধনা ক্ষেত্র করে তুলেছিলেন। কিন্তু আশ্রম করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। ওই স্থানে যে ভূতের উপদ্রব ছিল বিরাট। এমনই উপদ্রব যে, গ্রামের কেউ মারা গেলে রাতে শ্মশানে নিয়ে যেতেও ভয় পেতেন গ্রামবাসীরা।
[আরও পড়ুন: হঠাৎ গা ছমছম, কে যেন পা দোলাচ্ছে গাছে! চোখ মেলতেই হাওয়া, আতঙ্ক গ্রামে]
সেখানেই কি না আশ্রম করবেন তান্ত্রিক বনমালী ভট্টাচার্য। তারপরই তন্ত্রমন্ত্রের জোরে তিনি ভূতেদের বেঁধে ফেলেছিলেন। সুবিশাল বটগাছে তাঁদের বেঁধে রেখেছিলেন। সেই তন্ত্রমন্ত্র থেকে মুক্তির কোনও উপায় ছিল না। বনমালী ভট্টাচার্যই বিধান দিয়ে গিয়েছিলেন ভূত চতুর্দশীর দিনে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার। তারপর কালীপুজোর রাতে তাঁদের ফের বটবৃক্ষে বেঁধে দেওয়ার। সেই রেওয়াজ এখনও চলছে।
এখন আর আশ্রম স্থানে শ্মশান নেই। আছে আশ্রমের পঞ্চমুণ্ডির আসন। বনমালী ভট্টাচার্যের ছেড়ে যাওয়া আসনে পূজার দায়িত্ব সামলান শম্ভুনাথ ভট্টাচার্য। কার্তিক অমাবস্যার আগে ভূত চতুর্দশীতে কালীপুজো করা হয় সেখানে। শিবাভোগ ও ভৈরব ভোগ দান করা হয়। ভোগের উপাচার মদ আর মাংস। কালীপুজোর পরে ভূতেদের বেঁধে দেওয়া হয়। এই রীতি আজও চলে আসছে পরম্পরা মেনে।