কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হতেই রহস্যময় লোকেদের আনাগোনা, চঞ্চলাময়ীর সামনে ওরা কে
নামখানার দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে ক্রমশই বাড়ছে আতঙ্কের পরিবেশ। পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় এখনও এই স্কুলে হামলাকারীরা স্কুলের সামনে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
নামখানার দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে ক্রমশই বাড়ছে আতঙ্কের পরিবেশ। পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় এখনও এই স্কুলে হামলাকারীরা স্কুলের সামনে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নামখানা থানা থেকে এসপি সুন্দরবন- কারোর কাছেই মিলছে না কোনও সদুত্তর। নামখানা থানার বক্তব্য তদন্ত চলছে। ২৩ অগাস্ট নামখানার দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে স্থানীয় কিছু তৃণমূলনেতার নেতৃত্বে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জনের একটি দল শিক্ষকদের মারধর করে। সেই মারধরের ভিডিও প্রকাশ্যে আসে। হামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগও ওঠে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। আক্রান্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলের নানা দুর্নীতি এবং অনুন্নয়ন নিয়ে সরব তাঁরা। স্কুলের ঘাড়ে দেনার দায়ভার পৌঁছেছে ৬০ লক্ষ টাকায়। তারমধ্যে একের পর এক প্রকল্পের অর্থ নয়-ছয় হয়ে যাচ্ছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মানুষও জড়িত। যার জেরে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা ঘটানো হয়।
এই সব ঘটনার সূত্র ধরেই দিন কয়েক আগে সামনে আসে দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠের মিড-ডে মিল দুর্নীতির অভিযোগ। সামনে আসে একাধিক তথ্য়। কিছু অভিভাবক অভিযোগ করেন মিড-ডে মিল খাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের যে সংখ্যাটা রিপোর্টে দেখানো হয় তার থেকে অনেক কম সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী মিড-ডে মিল খায়। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক রত্নাকর রাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। এমনকী মিড-ডে মিল-এর দুর্নীতির অভিযোগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরের দিনই দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্য়াপীঠ-এ যান স্থানীয় বিডিও রাজীব আহমেদ। কিন্তু, সেখানে তারা ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য এবং মিড-ডে মিল বিতরণ করা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রধান নমিতা বেরা- কাউকেই পাননি।
এতসত্ত্বেও কিন্তু নাকি দৌরাত্ম্য কমেনি ২৩ অগাস্ট স্কুলে ঢুকে হামলা চালানো দুষ্কৃতীদের। দিন কয়েক ধরেই সকাল ১০টা থেকে দুর্গাপুর চঞ্চলময়ী আদর্শ বিদ্য়াপীঠের সামনের দোকানে এই সব দুষ্কৃতীদের জমায়েত চলছে। অভিযোগ, এই জমায়েতের লক্ষই হলেন আক্রান্ত শিক্ষকরা। কারণ, এই শিক্ষকরা স্কুলে ঢোকার সময় এই জমায়েত থেকে সমানে টিটকিরি-টিপন্নির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ এই টিটকিরির ফাঁকেই উড়ে আসছে নানা হুমকি। আক্রান্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, হামলার ঘটনায় তারা সুনির্দিষ্টভাবে বেশ কয়েক জনের নাম উল্লে করেছিলেন। হামলার যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তাতেও এদের হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, এর পরও স্থানীয় নামখানা থানা নিস্ক্রিয় বলেই অভিযোগ। পুলিশের এই নিস্ক্রিয়তাই সাহস যুগিয়েছে হামলাকারীদের।
এই হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে চিহ্নিতও করা গিয়েছিল। যেমন মিড-ডে মিল-এর দুর্নীতি প্রকাশের পর স্কুলের সামনে পিকেটিং করে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিরাজ খাঁ নামে এক তৃণমূলনেতার বিরুদ্ধে। সিরাজ খাঁ এখন তৃণমূল কংগ্রেস করলেও একটা সময় ছিলেন কংগ্রেসে। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে বস্তায় মুড়ে এক সিপিএম নেতাকে পেরেক গেঁথে হত্য়ার অভিযোগ ওঠেছিল। নামখানা থানাতেও তাঁর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের রয়েছে। এছাড়াও সিরাজ খাঁ-দের সঙ্গে এলাকায় এমন কিছু একদল লোককে দেখা যাচ্ছে যাঁদের স্থানীয় এলাকায় কেউ কোনওদিন দেখেননি। ষণ্ডামার্কা চেহারার এই লোকগুলিকে দেখে আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে দুর্গাপুরে।
২৩ অগাস্ট দুর্গাপুর চঞ্চলাময়ী আদর্শ বিদ্যাপীঠে ঢুকে পড়েছিলেন ধনঞ্জয় গিরি। তৃণমূল কংগ্রেসের এই বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে ২৩ অগাস্ট স্কুলের ভিতরে ঢুকে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ভিডিও-তে তাঁকে টিচার্স রুমে ঢুকে চিৎকার করে শিক্ষকদের অন্য একটি ঘরে যেতে নির্দেশ দিতে দেখা যায়। এই ধনঞ্জয় গিরি-কেও স্কুলের সামনে সমানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।
ধনঞ্জয় গিরির পাশেই ছিলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য। ভিডিও-তে তাঁকে ঠুঠো জগন্নাথের মতোই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তাঁর সামনে তাঁর শিক্ষকদের বহিরাগতরা এসে হুমকি দিয়ে, মারধর করে চলে গেলেও তিনি কিছুই করেননি বলে অভিযোগ।
আক্রান্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, এই ধনঞ্জয় গিরি, সিরাজ খাঁ-দের আনাগোনা স্কুলের সামনে এখন বেড়ে গিয়েছে। আতঙ্ক এতটাই গ্রাস করেছে তাঁদের যে কোনও মুহূর্তে ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন বলেও কেউ কেউ দাবি করেছেন। অভিযোগ, স্কুলে যে নানা ধরনের দুর্নীতি চলছে তাঁর অন্যতম মাস্টারমাইন্ড এই ধনঞ্জয় গিরি। অভিযোগ, তাঁর অঙুলি হেলনে কাজ করে চলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিস ভট্টাচার্য। মিড-ডে মিল দুর্নীতির একটা বড় অঙ্ক ধনঞ্জয় গিরির পকেটস্থ হয় বলেও অভিযোগ।
আক্রান্ত শিক্ষকদের অভিযোগ, অধিকাংশ শিক্ষকই এই স্কুলে হয়ে চলা দুর্নীতি নিয়ে তিতিবিরক্ত। পঠন-পাঠনের থেকে বেশি গুরত্ব পাচ্ছে দুর্নীতি। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এক ঘৃণ্য চক্রান্ত হয়ে চলেছে দিনের পর দিন। এর আগেও বহুবার তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতরের এক শ্রেণির কর্তার যোগসাজোশে বারবার ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে এই দুর্নীতি। এখন শিক্ষকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে ওঠায় মারধর করে আর হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধের চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ।