সুপারি দিয়ে স্ত্রীকে খুন! গণধোলাইয়ে অপরাধ কবুল ‘গুণধর’ শিক্ষকের
এলাকায় প্রচার করা হয়েছিল, মৌমিতা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই মহিলা কারও সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে থাকলে স্থানীয় এলাকারই নির্জন স্থান থেকে উদ্ধার হবে কেন দেহ?
সুপারি কিলার দিয়ে স্ত্রীকে খুন করল শিক্ষক-স্বামী। স্ত্রী মৌমিতা ঘোষের মৃতদেহ উদ্ধারের তিনদিন পর প্রতিবেশীদের গণপ্রহারের মুখে পড়ে গুণধর স্বামী কবুল করল তার অপরাধ। এরপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বধূ হত্যার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্ত স্বামী উজ্জ্বল ভাস্কর ঘোষ ও তাঁর মা ছবি ঘোষকে। পুলিশের কাছে বাবার 'কীর্তি'র কথা সবিস্তারে জানিয়েছে ছ'বছরের ছোট্ট শিশু। সে বর্ণনা দিয়েছে, কীভাবে দুষ্কৃতীরা তুলে নিয়ে যায় তার মাকে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় স্টেডিয়াম পাড়ায়। ঘটনার সূত্রপাত ১৯ জুলাই। ওইদিন পানুহাটের দিঘির পাড় থেকে উদ্ধার হয় মৌমিতা ক্ষতবিক্ষত দেহ। অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মুখ। পুলিশ দেহ উদ্ধারের পর তদন্তে নামে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, তিনদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন মৌমিতা। মৌমিতার দেহ উদ্ধার পর প্রতিবেশীদেরও সন্দেহ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে মৌমিতার স্বামীর ভূমিকা সন্দেহজনক বলে মনে হয় প্রতিবেশীদের।
প্রতিবেশীরা জানান, এলাকায় প্রচার করা হয়েছিল, মৌমিতা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই মহিলা কারও সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে থাকলে স্থানীয় এলাকারই নির্জন স্থান থেকে উদ্ধার হবে কেন দেহ? মৌমিতার শাশুড়ি কান্নাকাটি করলেও, স্বামী উজ্জ্বল ভাস্কর ছিল স্বাভাবিক। তার ভূমিকা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়। অবশেষে স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন গুণধর স্বামী। তার কথায় উঠে আসে অনেক অসঙ্গতি।
এরপর গণধোলাই দিতেই সত্যিটা বেরিয়ে আসে। উজ্জ্বলভাস্কর স্বীকার করে নেয়, সে-ই খুন করিয়েছে স্ত্রীকে। এক লক্ষ টাকার সুপারি দিয়ে মৌমিতাকে খুন করা হয়। স্ত্রীকে খুনে হাত লাগায় সে নিজেও। এরপরই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় উজ্জ্বলভাস্কর ও তার মাকে। পুলিশে জেরায় ধৃত উজ্জ্বল ভাস্কর জানায়, এর আগে সে একবার জেলে গিয়েছিল। তখনই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এই খুনে দুই দুষ্কৃতীকে সুপারি দেয় সে।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটানোর পরও স্বাভাবিক ছিল উজ্জ্বলভাস্কর। নিয়মিত স্কুলেও যেত। উল্লেখ্য, উজ্জ্বলভাস্কর পাতাইহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক। এই ঘটনায় স্কুলেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইতিহাসের শিক্ষকের নির্মম আচরণে স্তম্ভিত গোটা স্কুল।
কী কারণে ওই শিক্ষক স্ত্রীকে এমন নির্মমভাবে খুন করল তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, এর আগে বধূনির্যাতনের অভিযোগে জেল খাটে শিক্ষক। সেই প্রতিশোধ নিতেই খুনের ষড়যন্ত্র করে সে। মৃতার ছ'বছরে ছেলে পুলিশকে জানায়, চারজন বাড়িতে ঢুকে তার মাকে তুলে নিয়ে যায়। মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তারা। তার বাবাও তখন সেখানে উপস্থিত ছিল বলে জানায় শিশুটি।