একই ‘গুরু’র শিষ্য হয়েও রাম-লক্ষ্মণ নন তাঁরা, মতাদর্শগত প্রভেদ তথাগত-সৌগতর
একই ‘গুরু’র শিষ্য হয়েও রাম-লক্ষ্মণ নন তাঁরা, মতাদর্শগত প্রভেদ তথাগত-সৌগতর
ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসা, রক্তপাত এবং শরণার্থীদের দুর্দশার কাহিনি তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলেছিল। এবং হিন্দুত্বের সমর্থনে তিনি সমর্পিত করেছিলেন তাঁর রাজনৈতিক জীবন। তিনি হিন্দুত্বের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে উঠেছিল। এই ছিলেন তথাগত রায়। একই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও ভাই সৌগত আদর্শ করেছিলেন গান্ধীবাদ।
রায় পরিবারের দুই ভাই ও দুই আদর্শ
কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী বর্ধিষ্ণু রায় পরিবারে বড় হয়ে উঠেছেন তথাগত। বড় হয়ে উঠেছিলেন পূর্ব বঙ্গ, যা দেশ বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠেছিল এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ হয়ে যায়, সেখানকার নানা কাহিনি, উদ্বাস্তুদের বেদনা ও যন্ত্রণা কাহিনির মধ্যেই তাঁর বড় হয়ে ওঠা। তথা হিন্দু শরণার্থীদের ত্রাণকর্তা সংঘের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন তথাগত। কিন্তু তাঁর ছোট ভাই সৌগত রায় বাংলায় কমিউনিস্ট নিপীড়নের মধ্যে বড় হয়েছিলেন এবং গান্ধীবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।
দুই ভাইয়ের একজনই আদর্শ, মত ভিন্ন
দু'জনেরই পরামর্শদাতা ছিলেন প্রমথনাথ বিশি। একজন ভারতীয় লেখক, শিক্ষাবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গের সংসদ সদস্য প্রমথনাথ ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য ছিলেন। তাঁকেই তথাগত আর সৌগত তাঁদের জীবনে বিভিন্ন আদর্শ মেনে নিয়েছিলেন।
মতাদর্শগত প্রভেদ তথাগত-সৌগতর
সম্প্রতি মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসেবে ইস্তফা দেওয়া তথাগত রায় বলেন, বিশি স্যার ছিলেন তীব্র বাম বিরোধী এবং চরম গান্ধীবাদী। সৌগত তাঁর চিন্তার একটি অংশ পেয়েছিল এবং আমি অন্য একটি অংশ পেয়েছি। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, সৌগত গান্ধীবদ্ধ মতাদর্শে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল এবং আমি বিশি স্যারের কাছ থেকে বাম বিরোধী অংশ পেয়েছি। তবে হিন্দু আদর্শ আমার ব্যক্তিগত অধিগ্রহণ।
আরএসএস এবং বিজেপির দিকে ঝোঁক তথাগতর
জম্মু ও কাশ্মীরের হযরতবাল মাজারের ঘটনাটি তাঁকে আরএসএস এবং বিজেপির দিকে ঝুঁকতে সহায়তা করে। কিছু শিক্ষার্থী পালিয়ে গিয়ে আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েছিল। তারা যে অগ্নিপরীক্ষা পেরিয়েছিল তা বর্ণনা করেছিল। শরণার্থীদের উপর যে অত্যাচার চালানো হয়েছিল তাতে আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে আমি ভারতীয় রেলওয়েতে যোগ দিয়েছি। কিন্তু ১৯৯০ সালে আমি চাকরি ছেড়ে দিই এবং বিজেপিতে যোগ দিই। কারণ শরণার্থীদের দুর্দশার বিষয়টি আমার মনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে।
বিজেপিতে প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি তথাগতর
বিজেপিতে আমি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছি এবং আমি অভ্যন্তরীণ দলীয় সমস্যার মুখোমুখিও হয়েছিলাম। ২০০২ সালে বিজেপি বেঙ্গল সভাপতি করছিল আমাকে। আমি ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাজ্য বিজেপি সভাপতি ছিলাম এবং তখন বিজেপি চায়নি বাংলায় কোনও অংশীদার থাক। কারণ রাজনীতি মেরুকৃত হয়েছিল, বলেন তথাগত রায়।
রাম-লক্ষ্মণ না হলেও সদ্ভাব-সম্মান অটুট
এখন তথাগত আর সৌগত দু-ভাই কি আদতে রাম-লক্ষ্মণ? এ প্রসঙ্গে তথাগত বলেন, হ্যাঁ, আমাদের আলাদা মতাদর্শ আছে, তবে আমরা একে অপরের সাথে ইন্টারেক্ট করি। আমরা প্রায়শই যোগাযোগের জন্য সময় পাই না। তবে আমরা বেশিরভাগ সময় টেলিফোনে কথা বলি। আমরা রাজনৈতিক তত্ত্ব, ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি এবং আমরা ভারতীয় রাজনীতিতে চিনা এবং পাকিস্তানি বিপত্তি এবং এনআরআই প্রভাব সম্পর্কে ধারণা বিনিময় করি।
বিজেপির বর্তমান নেতৃ্ত্ব ও তথাগত
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের কি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার আছে? সে সম্পর্কে তথাগত বলেছিলেন, হ্যাঁ, কিছু অঞ্চল আছে, যেখানে রাজ্য বিজেপির আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবে আমি চাই না এখন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। গত লোকসভা নির্বাচনের লক্ষণীয় পারফরম্যান্স সত্ত্বেও আমরা টানা তিনটি উপনির্বাচনে হেরেছি। এর মধ্যে দিলীপ ঘোষের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
রাজ্যপাল এবার মুখ্যমন্ত্রী হতে চান! মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির মুখ হতে সরব নিজেই