তাপস পালের মন্তব্য নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবকে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্য নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় জানান, সবকিছুর একটা পদ্ধতি রয়েছে। সে পদ্ধতি শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে দল তার অবস্থান নিয়েছে। দেশের কোনও রাজনৈতিক দল আজ পর্যন্ত অত তাড়াতাড়ি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাপস পালকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। লিখিতভাবে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ তাপস পালের জবাব পাওয়ার পরই দল আলোচনা করে দেখবে। আপাতত দল এবিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনা মর্মাহত ও হতবাক। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য সাবধান করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।
এমন কুরুচিকর মন্তব্যের পরও শুধু কী নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়াই যথেষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর মর্মাহত ও হতবাক হওয়া যথেষ্ট। সাংসদকে দলের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র সাবধান করেই ছেড়ে দেওয়া যথেষ্ট প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
২৪ ঘন্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে দল, নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তাপস পাল: মুকুল রায়
রাজনৈতিক দলগুলি তাপস পালের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। মুখ খুলেছেন সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও। তাপস পালের মতো ব্যক্তির জনপ্রতিনিধি থাকার কোনও অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন অনেকের। অনেকের বক্তব্য, প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, অনেকের দাবি , তাপস পালকে গরাদে ভরা হোক।
কে কী বলেছেন
রাজনৈতিক নেতারা
সিপিআই-এম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি : এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দল সংসদে তাপস পালের বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান মমতা শর্মা: তাপস পালকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা উচিত। এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের উচিত তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা: রাজ্যের সমস্ত মহিলাদের কাছে আবেদন জানাব প্রত্যেকটি থানায় গিয়ে এই সাংসদের বিরুদ্ধে এফআইআর করুক। যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা সেখানে তাঁর দলের সাংসদ এমন মন্তব্য করার পরও তৃণমূল নেত্রী নিরব। বারবার মুখ্যমন্ত্রীর এহেন নিরবতা পরোক্ষভাবে তাঁদের আপত্তিকর মন্তব্যকে সমর্থন বলেই মনে হয় আমাদের।
কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য : এখনই তাপস পালের সদস্যপদ বাতিল করা উচিত।
সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টরা
নাট্যকর্মী কৌশিক সেন: এধরণের আচরণ তৃণমূল কংগ্রেসের সংস্কৃতি। মণিরুল, আরাবুল-অণুব্রতদের সঙ্গে এক সারিতে উঠে এলেন তাপস পালও।
গায়িকা উষা উত্থুপ : আমি হতবাক, ওনার মুখে একথা ভাবতেই পারছি না। এদরণের মন্তব্যকে সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না, তবু আমার চেনা তাপসদার সঙ্গে এই তাপস পালের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছিনা।
পরিচালক অনীক দত্ত : ওনার জনপ্রতিনিধি থাকার কোনও অধিকার নেই। শুধু ওর কেন আরও অনেক এমন নেতারা রয়েছেন য়াদের জনপ্রতিনিধি থাকার অধিকার নেই। ওনার মেয়ে আছে। আমারও মেয়ে আছে। তার পরেও এ ধরণের মন্তব্য উনি করেন কী করে। আর কীসের এত মাথাগরম ওনার যাতে এমন একটা ভয়ঙ্কর মন্তব্য করে বসলেন তিনি আমার মাথায় ঢুকছে না। এখন সাফাই দিচ্ছেন রেপ নয় রেড বলেছেন। তাহলে কী যার বাড়িতে যখন তখন ঢুকে যাকে যখন খুশি গুলি করার অধিকার রয়েছে ওনার।
অভিনেত্রী মুনমুন সেন (তৃণমূল সাংসদও বটে): আপনারা কি ভাবেন আমার মাথা খারাপ, আমি এ নিয়ে মন্তব্য করব? আমি কোনও কথা বলব না।
কবি শঙ্খ ঘোষ : রাজনীতি কোন বর্বরতায় পৌছচ্ছে, এসবই তার লজ্জাজনক নজির।
লেখিকা তসলিমা নাসরিন: সারদা কাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাপস পাল। বিরোধী দলের মহিলাদের ধর্ষণ করিয়ে তিনি আবার প্রচারের আলোয় আসতে চাইছেন। বাঙালি অভিনেতাদের কাছে ধর্ষণ একটা মজার বিষয়। দেব বলছে, চিৎকার করতে পার বা উপভোগ করতে পারো। তাপস পাল বিরোধী দলের মহিলাদের ধর্ষণ করাতে চাইছেন। নারীবিদ্বেষী সমাজেই শুধু এটা সম্ভব। মহিলাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেওয়ার পরেও এক সাংসদকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন : তাপস পালের মন্তব্য শোনার পর মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে ঘেণ্যা করছে। দেশটা যে কোন ইতরামির পর্যায়ে পৌছিয়েছে তারই প্রমাণ এসব।