ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে সিন্ডিকেট তোলার বাড়বাড়ন্ত, কোটি কোটি টাকার থলে যাচ্ছে 'পার্টি ফান্ডে'
সীমান্তজুড়ে সিন্ডিকেট রাজ। পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে চলছে চাঁদার জুলুম। আর আপত্তি করলেই জুটছে হুমকি-চোখরাঙানি। সিন্ডিকেটের দাপটের শিকার ট্রাক চালক ও খালাসিরা।
সীমান্তজুড়ে সিন্ডিকেট রাজ। পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে চলছে চাঁদার জুলুম। আর আপত্তি করলেই জুটছে হুমকি-চোখরাঙানি। সিন্ডিকেটের দাপটের শিকার ট্রাক চালক ও খালাসিরা। রাজ্য জুড়ে ট্রাক ধর্মঘটের প্রথম দিনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে সীমান্ত রোডে।
মূলত পুলিশি জুলুম সহ ছয় দফা দাবিতে সোমবার থেকে রাজ্য জুড়ে ধর্মঘটে নেমেছে ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন। রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মধ্যে পণ্য আমদানি রফতানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উত্তর ২৪ পরগণার সীমান্তবর্তী অঞ্চল।
ভিন রাজ্য থেকে বিভিন্ন পন্য বাংলাদেশে আমদানি- রপ্তানি হয় বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে। ইট, বালি, পাথর, ফল, ফুল, সবজি, তেল বিভিন্ন কাঁচামাল যায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকেও এদেশের বিভিন্ন রাজ্যে যায় বিভিন্ন পন্য। এই যাতায়াতের পথে বিভিন্ন ট্যাক্স দিয়ে থাকেন পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা। টোল ট্যাক্স বা পৌরকরের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স দিয়ে যাতায়াত করতে হয় ট্রাক গুলোকে।
কিন্তু ট্রাক চালক ও খালাসিদের অভিযোগ, 'বিভিন্ন নিয়মী কর ছাড়াও নতুন করে কর ধার্য করা হয়েছে এই আমদানি রপ্তানির ট্রাকগুলোর উপর। সেখানে বসিরহাট ব্রিজ থেকে ঘোজাডাঙ্গা বর্ডার অব্দি যেতে একটা অংকের টাকা দিতে হয় ট্রাক গুলিকে। তার কোনোটিতে লেখা 'শ্রমিক ইউনিয়ন', কোনোটিতে 'কর্মহীন শ্রমিক বাঁচাও কমিটি' কোনোটি 'বর্ডার গাইড'। এই রকম বিভিন্ন নামে বিল ছাপিয়ে ট্রাক গুলির উপর থেকে কর আদায় করে বেশ কয়েকটি ছেলে।
মূলত বসিরহাট থেকে ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে কল বাড়ি, কালীবাড়ি মোড় এইসব অঞ্চলগুলোতে বাঁশ ফেলে ট্রাক আটকানো হয়। এরপর ট্রাকচালকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি বিল। যদি টাকা না দেওয়া হয় তাহলে ট্রাক যেতে দেওয়া হয় না। ট্রাক চালকদের গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় বলে জানান ট্রাক চালক সুরিন্দর সিং। তবে স্থানীয় ট্রাক গুলোর ক্ষেত্রে মাসোয়ারার ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের জন্য একটি পরিচয় পত্রের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে সিন্ডিকেট।
সারা বাংলা ট্রাক মালিকদের সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সজল ঘোষ জানান, 'এই সবটাই হয় স্থানীয় প্রশাসনের সমর্থনে। পুলিশই জুলুম করে টাকা নেয়। এটা সীমান্তে আসা ট্রাক গুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ। ট্রাক ড্রাইভাররা বহুবার আক্রান্ত হয়েছে। আমরা একাধিক অভিযোগ করে ফল পায়নি। তাই আজ ধর্মঘটের পথে।'
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক পিছু ভিন্ন ভিন্ন মূল্য ধার্য করা রয়েছে। খালি ট্রাক গেলে ২০০ টাকা, পাথর বোঝাই গাড়ি ১৩০০ টাকা, আলু, পটল, পেঁয়াজের মতো আনাজ বা সবজির গাড়ি পিছু ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আরও জানা গিয়েছে, প্রত্যেকদিন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০টির বেশি পণ্যবাহী গাড়ি এখান দিয়ে যাতায়াত করে। তাহলে যদি প্রত্যেক গাড়ি থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ বা ১৫০০ করে টাকা নেওয়া হয় তাহলে দিনে কয়েক লক্ষ টাকা উঠছে। মাসে কোটি কোটি টাকা আদায় করছে সিন্ডিকেট। তবে সিন্ডিকেটের দাবি, 'এই টাকার একটা অংশ ভোগ করছে সিন্ডিকেট। অন্য অংশ যায় পার্টির ফাণ্ডে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নেতা জানান, 'বছর খনেক আগে থেকে গরু পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এই নতুন ব্যবসা চালু হয়। এর নেপথ্যে রয়েছে বসিরহাটেরই এক শীর্ষ নেতা। যার অঙ্গুলি হেলনেই হয় সমস্ত কিছু। দীর্ঘদিন ধরে বসিরহাটে গরু পাচারের হোতা ছিলেন তিনি। গরু বন্ধ হতেই এই ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সাম্প্রতিক এক বস্তা সোনার বার সমেত ধরাও পড়েছিলেন তিনি। সোনা ছাড়াও প্রশাসনের নাকের ডগায় ভিন্ন বেআইনি কারবার চালিয়ে আসছেন তিনি।' তবে এনিয়ে প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগই নেই বলে জানান বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার। তবে তদন্ত করে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এনিয়ে রা বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসু এই ঘটনাকে তোলাবাজির লেটেস্ট নিদর্শন বলে আক্ষা দিয়েছেন। তার কথায়, 'এর আগেও সিপিএম তোলাবাজি করত তবে সেটা আন-রেজিস্টার ছিল। এখন এটা স্বীকৃত তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট রাজে পরিণত হয়েছে।'