স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ পর্ব ঠিক কেমন ছিল! স্বামীজির আধ্যাত্নবাদ একনজরে
তাঁর সঙ্গে তুলনায় হয়তো আসতে পারে কোনও বিশাল বটবৃক্ষের ছায়া। যে ছায়া গ্রীষ্মের তপ্ত দিনে শীতল মুগ্ধতা দেয় পথিককে।
তাঁর সঙ্গে তুলনায় হয়তো আসতে পারে কোনও বিশাল বটবৃক্ষের ছায়া। যে ছায়া গ্রীষ্মের তপ্ত দিনে শীতল মুগ্ধতা দেয় পথিককে। ঠিক তেমনই স্বামী বিবেকানন্দের জীবন-দর্শন রণক্লান্ত সমাজের বুকে এনে দেয় স্বস্তির মুগ্ধতা। ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতির ভেদের উর্ধ্বে উঠে কেবল মনুষ্যত্ব নিয়ে এগিয়ে চলা এই সন্ন্যাসীর জন্মদিবসে পালিত হয় জাতীয় যুব দিবস। আর এই বছরেও তা সাড়ম্বরে পালিত হতে চলেছে। এই পূণ্যাত্মার জন্মদিবসের প্রাক্কালে একবার আলোকপাত করা যাক স্বামীজির আধ্যাত্ম জীবনের দিকে। যে জীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়ে গিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব।
স্বামীজি ও শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ
ঘনিষ্ঠদের কাছে একবার স্বামীজি বর্ণনা করেছিলেন ১৮৮১ সালের সেই যুগান্তকারী ঘটনা। যে সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসেন বিবেকানন্দ। বাংলার বুকে তখন নবজাগরণের এক দৃপ্ত মশাল জ্বলতে শুরু করেছে সবে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতির সঙ্গে বাঙালির আধ্যাত্ম চেতনাতেও তখন যুক্তিবাদ জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে। আর সেই সময় শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ স্বামীজির।
স্বামীজির চোখে কেমন ছিল শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম দর্শন?
স্বামীজি জানিয়েছিলেন, শ্রীরামকৃষ্ণকে প্রথম দর্শনে অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ বলে মনে হয়েছিল তাঁর। এত সরল ভাষায় সেদিন রামকৃষ্ণ কথা বলতে শুরু করেছিলেন যে স্বামীজি তাঁর কাছে কৌতূহল নিয়ে পৌঁছে যান। স্বামীজি জিজ্ঞাসা করেছিলেন ,'মহাশয় আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?' এরপরই স্বামীজি এক গুরুতর প্রশ্ন করেন। চিনি বলেন,' আপনি কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেন?'
এরপর কোন জবাব দিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ?
শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামীজির উত্তরে ইতিবাচক জবাব দিয়ে বলেছিলেন সেদিন, ' আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাঁহাকেও ঠিক সেই রূপে দেখি। বরং আরও স্পষ্টতর আরও উজ্জ্বল রূপে দেখি।' শ্রী রামকৃষ্ণের এই বক্তব্যই পাল্টে দেয় স্বামীদির আধ্যাত্ম চেতনা। পাল্টে যায় স্বামীজির জীবন দর্শন। বাংলা যখন এক অগ্নিগর্ভ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার লড়াইয়ে সেই সময় এগিয়ে চলেছে, তখন দেশকে উদ্বুদ্ধ করার আরও একটি অধ্যায় উঠে আসতে শুরু করল স্বামীজির হাত ধরে। যে স্বামীজি মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ নির্বিষেশে খুঁজে পেতে লাগলেন ঈশ্বরকে।
গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক
প্রাথমিকভাবে কিছুতেই শ্রীরামকৃষ্ণের সমস্ত কথায় সায় দিতে পারছিলেন না যুবক নরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্তু পরমহংসদেবের ব্যক্তিত্বের ব্যাপ্তি তিনি অস্বীকারও করতে পারেননি। বার বার এক অদ্ভূত নেশায় তিনি ছুটে যেতেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। বহুবার রামকৃষ্ণকে যে পরীক্ষাও করতে গিয়েছিলেন স্বামীজি , সেকথা জানাতে ভোলেননি এই বীর সন্ন্যাসী।
মনে সন্দেহ ওঠে শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই অবতার.... এরপর তকী ঘটে?
শোনা যায়, একবার সন্ন্যাস গ্রহণ করার পরেও স্বামী বিবেকানন্দের মন থেকে একটি সন্দেহ দূর হচ্ছিল না। আর তা হল.. শ্রীরামকৃষ্ণ কি সত্যিই অবতার? যা ভাবতে ভাবতেই স্বামীজি হঠাৎ চোখের সামনে দেখতে পান পরমহংসদেবের ঘরের সামনে এক অদ্ভূত দৃশ্য। ঘরের একদিকে শ্রীরাম অন্যদিকে শ্রী কৃষ্ণ। আর তখনই সজল নয়নে স্বামীজি নিজের প্রতি অস্বস্তি বোধ করেন। অন্যদিকে, তখন পরমহংসদেব নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন। প্রসঙ্গত,মনভাবেই বারবার স্বামীজির সমস্ত কৌতূহলের নিরসন শ্রীরামকৃষ্ণ করে গিয়েছেন।
স্বামীজির সন্ন্যাস
১৮৮৭ সালে স্বামীজি শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেন নরেন্দ্রনাথ। আর দীক্ষা গ্রহণের পর তিনি হয়ে ওঠেন স্বামী বিবেকানন্দ। যদিও এই সন্ন্যাস গ্রহণের আগের পর্যায়টি ছিল এক্কেবারে অন্যরকম। রাত ৩ টেয়ে উঠে মন্ত্র জপ থেকে শুরু করতে হত নরেনদের। এরপর স্নান সেরে ধর্মচর্চার মধ্য দিয়ে দ্বৈত ও অদ্বৈতবাদ নিয়ে বহু তর্ক বিতর্কে অংশ নিতে দেখা যেত যুবক নরেন্দ্রনাথকে। আর এই সমস্ত পর্ব কাটিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন সন্ন্যাসী। হয়ে ওঠেন যুব সমাজের এক আদর্শ।
১২৬ বছর আগের শিকাগোতে দেওয়া স্বামী বিবেকানন্দের সেই বক্তৃতার প্রাসঙ্গিকতা কতটা আজকের ভারতে?