মুকুলের 'শৈত্য' কাটতে না কাটতেই বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম দিলীপ! দ্বৈরথ একুশের আগেই
মঞ্চে গলায় গলায় ভাব কিন্তু মুকুল রায় বনাম দিলীপ ঘোষের মতোই মাত্র ২৮ দিনেই সম্পর্কে শৈত্য তৈরি হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী বনাম দিলীপ ঘোষেরও। মুকুল রায় যোগ দেওয়ার মুহূর্ত থেকেই একটা লড়াই শুরু হয়েছিল।
মঞ্চে গলায় গলায় ভাব কিন্তু মুকুল রায় বনাম দিলীপ ঘোষের মতোই মাত্র ২৮ দিনেই সম্পর্কে 'শৈত্য' তৈরি হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী বনাম দিলীপ ঘোষের। মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার মুহূর্ত থেকেই একটা লড়াই শুরু হয়েছিল দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। তা এতদিনে তো কমেইনি, বরং দিন দিন বেড়েছে। শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পরও দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশই প্রকট হচ্ছে।
দিলীপ ঘোষের অনুষ্ঠানে গরহাজির শুভেন্দু অধিকারী
সম্প্রতি দিলীপ ঘোষের জন্য একটি অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে থাকার কথা ছিল শুভেন্দু অধিকারীরও। হাওড়ার ওই অনুষ্ঠানে পরে সময় দেননি শুভেন্দু। তিনি দলে নতুন এলেও তাঁর গুরুত্ব যে নেহাত কম নয় তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ওই অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল মুকুলেরও। মুকুল রায় দিলীপ ঘোষ আসার আগেই চলে গিয়েছিলেন।
ফাঁক তৈরি হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের মধ্যে
বঙ্গ বিজেপিতে কোথায় কোন কর্মসূচিতে কে কে থাকবেন তা স্থির হত রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কেন্দ্রীয়ভাবে। এখন কিন্তু তা হচ্ছে না। যে যার মতো করে স্থানীয় নেতৃত্বকে কর্মসূচির দিনক্ষণ জানিয়ে দিচ্ছেন। কে কোথায় কী কর্মসূচিতে রয়েছেন, তা জানা যাচ্ছে না। আর জানা গেলেও তা একেবারে শেষ মুহূর্তে। ফলে একটা ফাঁক তৈরি হচ্ছে নেতাদের মধ্যে।
দিলীপ ঘোষকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী
শুভেন্দু অধিকারী আসার পর তিনি নিজের মতো করে অনেক কর্মসূচি করছেন। নেতৃত্বের তোয়াক্কা না করেই তিনি মেদিনীপুরে একাধিক সভা ঠিক করে ফেলছেন। আবার তাঁর জনপ্রিয়তার নিরিখেই অনেক জায়গায় তিনি অন্যদের তুলনায় বেশি প্রচার পেয়ে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে একটা ঠান্ডা লড়াই চলছে
বক্তা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারী অনেক এগিয়ে। আবার নেতা বা জননেতা হিসেবেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। সেই নিরিখি অনেক ক্ষেত্রেই দিলীপ ঘোষ বা অন্যান্য আদি বিজেপি নেতারা পিছিয়ে পড়ছেন। ফলে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যে একটা ঠান্ডা লড়াই তৈরি হচ্ছে তা যোগদানের পরের সভা থেকেই সহজে অনুমান করা যাচ্ছে।
দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ফারাক বোঝা গিয়েছিল মঞ্চেই
শুভেন্দু বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথম সভা করতে গিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ডাকে বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। সেখানে দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ফারাক বোঝা গিয়েছিল মঞ্চেই। দিলীপ ঘোষের জন্য বরাদ্দ ছিল সিংহাসন আর পাশে শুভেন্দুর জন্য চেয়ার। দিলীপ ঘোষ সিংহাসনে বসে তাঁর দিকে পা নাড়াতে নাড়াতে গল্প করলেন।
দিলীপ ঘোষের সভায় গেলেনই না শুভেন্দু
এরপর ঝাড়গ্রামের সভায় সেই ভুল শুধরে নিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। আবার তার পরবর্তী নন্দীগ্রামের সভায় প্রথা ভেঙে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে বক্তব্য রাখতে পাঠিয়েছিলেন শুভেন্দু। শেষে হাওড়ায় দিলীপ ঘোষের সভায় তিনি গেলেনই না। শুভেন্দু স্বাগতম লেখা পোস্টার পড়লেও দূরত্ব বজায় রইল দিলীপ ঘোষের সঙ্গে। মুকুলও আগেভাগে কেটে পড়লেন ওই সভা থেকে।
দিলীপ-মুকুলকে দিল্লিতে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হল
রাজ্য বিজেপি নেতাদের মধ্যে এই সমন্বয়ের অভাব টের পেয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই দিলীপ-মুকুলকে দিল্লিতে ডেকে ফের সতর্ক করে দেওয়া হল বলেই রাজনৈতিক মহলের অভিমত। শুক্রবার সন্ধ্যায় অমিত শাহের বাসভবনে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার বৈঠক হয়। সেখানে দিলীপ-মুকুলের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ এবং অমিত চক্রবর্তীও।
বিজেপিতে যোগ দেওয়া নবাগতদের যথাযোগ্য মর্যাদা
অমিত শাহ এই বৈঠকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ক্ষমতা দখলই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। তাই একসঙ্গে চলতে হবে। গোষ্ঠীকোন্দল শিকেয় তুলে রাখতে হবে। বিজেপিতে যোগ দেওয়া নবাগতদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। ঠারেঠোরে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, শুভেন্দু দলে নবাগত হলেও তাঁকে যথাযথ সম্মান দিতে হবে।