নিজের বাড়িতে অনুগামীদের সঙ্গে বৈঠক শুভেন্দুর, ছন্দপতনের মাঝেই ফের ভাঙনের রেখা তৃণমূলে
বঙ্গ রাজনৈতিক মহলে বর্তমানে সব থেকে বড় প্রশ্ন, ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলা পশ্চিম মেদিনীপুর, সেই সভায় কি থাকবেন শুভেন্দু অধিকারী এবং তাঁর অনুগামীরা? মঙ্গলবার রাতে সেই সংক্রান্ত ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। তবে সন্ধ্যার সেই ইতিবাচক বার্তায় ফের প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিল ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই।

অভিষেক-শুভেন্দুর মাঝে অদৃশ্য ফাটল
নাম না করে আক্রমণ প্রতি আক্রমণের পারদ জমছিল দুপক্ষেই। কখনও লিফট প্রসঙ্গ। কখনও আবার প্যারাসুট। তারই মাঝখানে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়া। অপরজনের সরাসরি কটাক্ষ। শুভেন্দু অধিকারী আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এক অদৃশ্য ফাটল যেন ক্রমেই বাড়ছিল। এই আবহেই মঙ্গলবার এক মোড় ঘোড়ানো বৈঠকে সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল সৌগত রায়ের তরফে। তবে সেই ইতিবাচক বার্তায় ফের আশঙ্কার কালো মেঘ।

মিডিয়ায় সৌগত রায়ের বক্তব্য নিয়ে অসন্তুষ্ট শুভেন্দু
গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে যে মিডিয়ায় সৌগত রায়ের বক্তব্য নিয়ে অসন্তুষ্ট শুভেন্দু রায়। এদিন সকালেই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে হোয়াটসঅ্যাপ করে শুভেন্দু নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে জানা গিয়েছে এই ঘটনার আগে কাঁথিতে নিজের বাড়িতে অনুগামীদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপরই এই হোয়াটসঅ্যাপ এবং পরবর্তীতে মিডিয়াতে সেই খবর ফাঁস হয়।

শুভেন্দু পর্ব শান্তিতে মিটবে আদৌ?
শুভেন্দু পর্ব শান্তিতে মেটানোর জন্য এই সৌগত রায়কেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। যে সৌগত রায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারীর সুসম্পর্ক সর্বজনবিদিত। বহু বছর ধরে এই দুই নেতা শুধু রাজ্যে নয়, দিল্লিতেও আন্দোলন করেছেন । একে অপরের মতিগতি খুব ভালোভাবে বোঝেন। আর তার জন্যই সৌগত রায়কেই দায়িত্ব দিয়েছিল দল। মিডিয়াতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিশির অধিকারী নিজেও সব সমস্যা মেটানোর পক্ষে ছিলেন।

৬ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল শুভেন্দু
সেই অনুযায়ী সব মিটে গিয়েছে বলে প্রচারও করছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিশেষ করে মিডিয়াতে শুভেন্দু-অভিষেক দূরত্ব মিটে যাওয়ার বিষয়ে সরব ছিলেন সৌগত রায়। তবে এদিন সৌগতকেই মুখের উপর শুভেন্দু বলে দেন, এভাবে কাজ করা যায় না। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুরে মমতার বৈঠকের আগেরদিন, অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল। তবে তার আগেই বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন সৌগত রায়।

সৌগতকে ধোঁয়াশা বাড়ানো বার্তা পাঠান শুভেন্দু
মঙ্গলবারের বৈঠক নিয়ে সৌগত রায় ইতিবাচক বার্তা দিলেও শুভেন্দু কিন্তু চুপ ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি মুখ খুললেন, তখন ফের তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যতের উপর ঝুলিয়ে দিলেন প্রশ্ন চিহ্ন। এরই মাঝে এদিন জানা যায় যে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতৃত্ব একান্ত বৈঠকের জন্যে এদিন পৌঁছায় শুভেন্দুর বাড়িতে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ এই বৈঠক চলে। এরপরই সৌগতকে ধোঁয়াশা বাড়ানো বার্তা পাঠান শুভেন্দু।

কী করবেন দাদার অনুগামীরা?
মূলত মুর্শিদাবাদ এবং মালদার কংগ্রেস প্রভাবিত এলাকায় তৃণমূলের ভিত গড়ে দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এর আগে শুভেন্দুর পদত্যাগের পরদিনই মালদার নেতৃত্বের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক ডাকলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন মৌসম বেনজির নূর। যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল বিস্তর। কারণ মৌসমকে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এনেছিলেন শুভেন্দুই।

'সব ভালো আছে?'
এদিকে সৌগত রায়কে পাঠানো শুভেন্দুর এই বিস্ফোরক বার্তা গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়ার আগেই মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বের সঙ্গে শুভেন্দুর এই বৈঠক যে খুব তাৎপর্যপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। কারণ তৃণমূল যে ভাবে 'সব ভালো আছে' দেখাতে চাইছে, পরিস্থিতি মোটেও সেরমটা নয়। এবং গত কয়েক মাস ধরেই 'দাদার অনুগামী' পোস্টার বিভিন্ন স্থানে দেখা গেলেও সরাসরি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে শুভএন্দুর বৈঠক আগে দেখা যায়নি। যা ঘিরে জল্পনা বেড়ে বিস্তর।

এবার বঙ্গ রাজনীতির ক্রিজে নামবেন কলকাতার মন জয় করা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক