দলবদলু দুই বিধায়কের পাশে আসন, শুভেন্দু বয়কট করলেন রাজ্যপালের শপথ অনুষ্ঠান
দলবদলু দুই বিধায়কের পাশে আসন দেওয়ার রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
দলবদলু দুই বিধায়কের পাশে আসন দেওয়ার রাজ্যপালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে বসার আসন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এবং তার অদ্যাবধি পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
রাজ্যপালের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে গরহাজির ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল- কেন তিনি গরহাজির। শুভেন্দু বোমাটা ফাটালেন তারপরই। প্রথমে টুইটে, তারপর সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বিস্ফোরণ ঘটালেন। তিনি বলেন, ইচ্ছা করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়েছে। ১৯৫৬ ভোটে হারার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এইসব করা হচ্ছে।
শুভেন্দু এদিন গরহাজিরা থাকার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেন দলবদল করা দুই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসের পাশে তাঁর আসন রাখা হয়েছে। সেই কারণেই বিরোধী দলনেতার পদমর্যাদা অক্ষণ্ণ রাখতেই তিনি গরহাজির থাকলেন। তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পৌঁছেও গিয়েছিলেন কার্যত, কিন্তু এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছবি দেখে তিনি গরহাজির থাকেন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরও জানান, তিনি পরে রাজ্যপালের থেকে সময় চেয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। টুইট বার্তায় তিনি লেখেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেওয়ার ডক্টর সিভি আনন্দ বোসকে আন্তরিক অভিনন্দন। তার পাশপাশি তিনি অভিযোগ করেন, এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগ। ওই দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্রী অ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে তিনি একটি ছবিও পোস্ট করেন। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া দুই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসের আসন রয়েছে তাঁকর জন্য নির্দিষ্ট করা আসনের পাশে। বিভাগীয় মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বসার স্থান নির্ণয় করা হয়েছে বলে তিনি টুইটে লেখেন।
শুভেন্দু
অভিযোগ
করেন,
ওই
দুজনেরই
বিরুদ্ধে
দলত্যাগ
বিরোধী
আইনে
বিধায়ক
পদ
খারিজের
শুনানি
চলছে।
আগামী
দিনে
এরা
বিধায়ক
থাকবেন
কি
না
সংশয়
রয়েছে।
ওনারা
বিজেপির
টিকিটে
জিতে
এবং
পদত্যাগ
না
করেই
তৃণমূলে
যোগ
দিয়েছেন।
তিনি
লেখেন,
এসব
আর
কিছুই
নয়,
এটা
আসলে
অভদ্র
ও
নিকৃষ্টতম
রাজনীতির
একটা
বড়
নিদর্শন।
আসলে
'কম্পার্টমেন্টাল'
মুখ্যমন্ত্রী
'নন্দীগ্রামের
১৯৫৬'-এর
বেদনা
থেকে
এইসব
করছেন।
এই
ভাবে
কি
গায়ের
জ্বালা
মেটানো
যায়?
এখানেই থেমে যাননি শুভেন্দু, তিনি আরও লেখেন, ওনাকে 'নিরলস সাহিত্য সাধনার' জন্য বাংলা আকাদেমি পুরষ্কারের পরিবর্তে 'সাংবিধানিক নীতি রীতি কে হেয় প্রতিপন্ন' করার জন্য 'প্রতিহিংসামূলক আচরণের' পুরষ্কার দেওয়া উচিত। তিনি ভারতবর্ষের অন্যতম ফন্দিবাজ রাজনীতিবিদ, যিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার লোভে 'পোর্টফোলিও-বিহীন' কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। অর্থাৎ দফতর নেই, কাজকর্ম নেই কিন্তু মন্ত্রী থাকবেন এবং সুবিধে ভোগ করবেন!
শুভেন্দু আরও লেখেন, তিনি যদি এই ভেবে আমোদিত হন যে, আমার সাথে এমন অসভ্য আচরণ করে আমাকে বিরক্ত করা যাবে, তাহলে সেই গুড়ে বালি। ওনার মতো আমার 'চেয়ারে'র প্রতি এত লোভ আমার নেই। তাই আমি ওই আসনে বসব, আর উনি ভাববেন 'দেখ কেমন দিলাম' এটা হবে না। ওনার আত্মমর্যাদা জ্ঞান না থাকতে পারে, আমার রয়েছে। তাই আমি আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম না। কারণ আমার পক্ষে এই ধরনের আপত্তিকর ব্যক্তিদের পাশে বসা সম্ভব নয়।
Heartiest Congratulations to Dr CV Ananda Bose as he takes oath as the Governor of West Bengal.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) November 23, 2022
The Information & Cultural Affairs Dept; WB Govt has made the arrangements for the oath taking ceremony.
Seating arrangements as per the Minister in Charge @MamataOfficial's whim: pic.twitter.com/ovbTMqGsif
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু লেখেন, আমি মহামান্য রাজ্যপাল মহোদয়কে অনুরোধ জানিয়েছি, তিনি ওনার সময় ও সুবিধা অনুযায়ী আমাকে দেখা করার অনুমতি দিতে, এবং সেটা আজও হতে পারে। ওনাকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি রাজ্যে বেলাগাম দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও আর্থিক বিপর্যয়-সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত, তাই বিরোধী দলনেতা ও জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কর্তব্য রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানকে রাজ্যের সংকটের বিষয়ে অবহিত করা।
এই মর্মে এদিন শুভেন্দু অধিকারীকে একহাত নেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, কে শুভেন্দু অধিকারী, তিনি সাগর ছেঁচা মানিক নন। রাজ্যপালের শপথ অনুষ্ঠান নিয়েও রাজনীতি করছেন শুভেন্দু অধিকারী। অসৌজন্যতার নজির গড়লেন। আসলে তিনি ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেয়ে এসেছেন, তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন পদে থেকেছেন তিনি এবং তাঁর পরিবারের লোকজন। তাই এখন তিনি সকলের চোখে চোখ মেলাতে পারছেন না। কুণাল বলেন, শুভেন্দু অধিকারীর কু-কীর্তির কথা ঠিক সময়ে রাজ্যপালের কাছে পৌঁছে যাবে।