ফের শুরু লড়াই, সাহায্যের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে আম্ফান তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবন
ফের শুরু লড়াই, সাহায্যের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে আম্ফান তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবন
হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গাছগাছালি, ঘরবাড়ি, সাজিয়ে আবার মূল স্রোতে ফেরার লড়াই সুন্দরবনের মানুষের। সব হারিয়ে ক্ষীণ দৃষ্টিতে সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে সুন্দরবন। সবেমাত্র ক্ষত শুকাতে শুরু করেছিল, কিন্তু একটি রাত বদলে দিল সবকিছুই। ২০০৯ সালের এই মে মাসের শেষ সপ্তাহেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব কিছু শেষ করে দিয়েছিল আয়লা। গৃহপালিত প্রাণী থেকে শুরু করে হাজারে হাজারে সুন্দরবনবাসীর মৃত্যুমিছিল লেগে গিয়েছিল কয়েকদিনে।
লক্ষাধিক মানুষ আয়লার তাণ্ডবে ঘর ছাড়া ছিল। বাসভূমি, কৃষিভূমি, জলাভূমি সবই এক হয়ে গিয়েছিল নদীগর্ভের কাছে। অসহায় নিঃস্ব মানুষ বিষাক্ত জন্তুদের সাথে রাত কাটিয়েছে গ্রামের গাছে গাছে, কিছু মানুষ সারি বেঁধে পাড়ি দেয় নগরের পথে। বিগত কয়েক বছর বুলবুল বা ফনি এলেও সেই ভাবে আক্রমণ সবাতে পারেনি সুন্দরবনের দিকে। কিন্তু ১১ বছর আগেই সেই স্মৃতি যেন উসকে দিল ২০২০ র আম্ফান। হয়তো আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মৃত্যুর সংখ্যা আটকানো গিয়েছে অনেক, তবুও গত ২০ মে র আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা অনেক বেশি।
সরকারি মতে দক্ষিন ২৪ পরগণার চারটি ব্লকে সব চয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এবং উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁ, সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদের ব্লক গুলো সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। যার গোটাটাই সুন্দরবন কে কেন্দ্র করে। উত্তর ২৪ পরগনার এই ব্লক গুলো কমপক্ষে ৫,২০০টি মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। দক্ষিণ 24 পরগনা এই সংখ্যাটা দ্বিগুণ। অধিকাংশ বনভূমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আরফানের এই তান্ডব থেকে বাদ যায়নি বসিরহাটের মতো শহরাঞ্চলও। দুই ২৪ পরগনা জুড়েই লন্ডভন্ড অবস্থা।
ঝড়ের দুই দিন পর জল-কাদা ভেঙে উত্তর ২৪ পরগনা সন্দেশখালিতে যেতেই নদীর ঘাট থেকে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা ছুটে কাদা মাটি মেখে এসে দাঁড়ালেন শ্যামলী, রুমানা, শাবানা সাবিত্রীরা দিন তিনেক আগেও সেখানেই ছিল তাঁদের মাটির বাড়িটা। কিন্তু আজ তা ভেঙে ঢুকে গিয়েছে নদীর গর্ভে। তাই ঘরে রাখা কিছু জিনিস যদি খুঁজে পায় সেই চেষ্টাই করছিল তারা। ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন তাদের দিন কাটছে আশ্রয় শিবিরে।
অন্যদিকে, প্রাণহানি বাড়তে পারে ভেবেই নদী লাগোয়া এলাকার সাড়ে ছ'শো বাসিন্দাকে সাগরদ্বীপের শিবিরে সরিয়ে আনা হয়। আমপানের দু'দিন পরে শুক্রবার ত্রাণ শিবির থেকে বাড়ি ফিরলেন ঘোড়ামারার সাড়ে ছ'শো বাসিন্দা। প্রাণ বাঁচাতে শিবিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু গবাদি পশু, জমি-জিরেত সবই পড়ে ছিল ওই ছোট্ট দ্বীপটাতে। এ দিন ফিরে বেশির ভাগই ঘর ফিরে পাননি। খোঁজ নেই গবাদি পশু, হাঁস-মুরগিরও। আমপানের ছোবলে দ্বীপ লাগোয়া নদী-বাঁধ কোথাও ভেঙেছে, কোথাও ক্ষয়ে সবটাই চলে গিয়েছে জলের তলায়।
দ্বীপের
বাসিন্দারা
জানান,
প্রায়
সব
কাঁচা
বাড়িই
ক্ষতিগ্রস্ত।
ঝড়-বৃষ্টি
এবং
খাবারের
অভাবে
অনেক
গবাদি
পশু
অসুস্থ
হয়ে
পড়েছে।
প্রশাসনের
পক্ষ
থেকে
ত্রিপল
বিলি
করা
হয়।
আপাতত
ভাঙা
বাড়ির
উপরে
ত্রিপলের
ছাউনি
দিয়ে
বাসযোগ্য
করা
হচ্ছে।
যাঁদের
পুরো
বাড়ি
মাটিতে
মিশেছে,
ত্রিপলের
ছাউনিই
আপাতত
তাঁদের
ভরসা।
ঘরে
ফেরা
সুমিত্রা
দাস,
মহাদেব
পাত্ররা
অবশ্য
এমন
ঘটনায়
অভ্যস্ত।
ঝড়ের
সতর্কতা
জারি
হলেই
তাঁদের
ঠাঁই
হয়
সাগরের
ত্রাণ
শিবিরে।
বাড়ি ফিরে এমন দৃশ্য যে দেখতে হবে, তা জানতেন তাঁরা। আয়লা ঝড়ে তাঁরা এই দ্বীপেই ছিলেন। দেখেছেন তার ভয়াবহতা। কিন্তু ত্রাণ শিবির থেকে আমফানের যে রূপ দেখেছেন তাঁরা তাতে এখনও আতঙ্কিত তাঁরা। ফলে ঘর বাড়ি যে আর ফিরে পাবেন না, তা জানতেনই। অনেকেই গবাদি পশু-হাঁস-মুরগিরও খোঁজ পাননি। সকলেই বলছেন, ''আরও এক বার নতুন করে শুরু করতে হবে। ঘরে মজুত করে রাখা চাল-ডালটুকুও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।'' প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ দিন ত্রিপলের সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়েছে শুকনো খাবারও। তবুও এভাবে আর কতদিন ? চাই সরকারি সাহায্য । আবার সব কিছু গুছিয়ে আগের রূপে ফিরতে চায় তারা।
দা, কুড়ুল হাতে রাস্তায় ! পরিস্থিতির মোকাবিলা নিয়ে 'বড়' বার্তা দিলীপের