বিজেপি নয় রাম মন্দির বানাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! টুইটারে মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ বর্ষণ সুজনের
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি-র মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই রাজ্যে তৃণমূল বিরোধীরা বারবারই বলে এসেছেন বিজেপি ও টিএমসি ভাই-ভাই। এমন দাবিতে সবার আগে অবশ্যই রয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস।
তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি-র মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এই রাজ্যে তৃণমূল বিরোধীরা বারবারই বলে এসেছেন বিজেপি ও টিএমসি ভাই-ভাই। এমন দাবিতে সবার আগে অবশ্যই রয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। এমনকী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের বিরুদ্ধেও বিজেপি-কে অকারণে বাড়তি রাজনৈতিক প্রচার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দুটোকেই সাম্প্রদায়িক দল বলেও কাঠগড়ায় তুলেছেন বহু সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা।
তৃণমূল ও মমমতার বিরুদ্ধে বিজেপি আঁতাতের এই বিতর্কের মাত্রা এবার আরও বেড়ে গিয়েছে। যিনি এই বিতর্কে ঘি ঢেলেছেন তিনি সাগরের কপিলমুনি আশ্রমের মোহন্ত। কারণ, ২৫ ডিসেম্বর সাগরে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়েই কপিলমুনি আশ্রমের মোহন্ত ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রী হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ই রাম মন্দির বানাবেন।
মোহন্তর এই বয়ানেই এখন রাজ্য-রাজনীতির পালে হাওয়া তুলেছে। টুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছেন বিধানসভায় বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক সুজন চক্রবর্তী। সিপিএম বিধায়ক টুইটারে লিখেছেন, 'গঙ্গাসাগরের মোহন্ত অথবা পুরোহিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আশীর্বাদ করেছেন এই বলে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে বিজেপি-র বলে আসা রামমন্দির-এর আশ্বাসকে বাস্তবায়িত করবেন। এই বিশ্বাস মমতার ছদ্মবেশকে সকলের সামনে প্রকাশ করে দিয়েছে এবং সেই সঙ্গে তাঁর পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে যে আরএসএস-এর ইচ্ছা পূরণে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসল প্রতিদ্বন্দ্বী! সাবধান।'
The priest/mohonto of Gangasagar #WB blessed @MamataOfficial that she becomes PM for speedy implementing @BJP4India's pledge of #Rammandir. This confidence threw away d disguise she wears & exposed her as a real competitor of @narendramodi for serving the purpose of #RSS! Beware. pic.twitter.com/PLO76mArBV
— Dr.Sujan Chakraborty (@Sujan_Speak) December 27, 2018
এই টুইটে সুজন চক্রবর্তী সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও আপলোড করে দেন। এমন টুইটে অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও, মোহন্ত-র রাম মন্দির নিয়ে মন্তব্যের মধ্যেই মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সর্ব-ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন। রাম মন্দির নিয়ে মোহন্তর মন্তব্য়ে সরাসরি বিরোধিতা করতেও দেখা যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের এই প্রসঙ্গে মৌনতাকেই হাতিয়ার করতে চাইছে তৃণমূল বিরোধীরা। বিশেষ করে সিপিএম ও কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেসের অতি হিন্দুত্ববাদী মূলক কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইমামদের ভাতা ঘোষণা করে বিতর্কে জড়ান। সে সময় তাঁর বিরুদ্ধে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করার অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী নক্কারজনকভাবে সংখ্য়ালঘু তোষণের রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি রাজ্য জুড়েই বিজেপি-র কর্মসূচি-কে ভিত্তি করে হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির বিস্তার ঘটেছে। রামনবমীর পদযাত্রা থেকে শুরু করে নানা ধরনের হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এমনকী রথযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি, যা এখন আদালতের বিচারাধীনে রয়েছে। বিজেপি-র এই সব হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির মোকাবিলা করতে বীরভূমে মাঝে ব্রাহ্মণদের গীতা ও গোদান উৎসব হয়েছে। এমনকী, বর্ধমান শিল্পাঞ্চলে একাধিক স্থানে মন্দির গড়ার কথাও ঘোষণা করেছে তৃণমূল। বীরভূমে আবার তৃণমূল কংগ্রেসের অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে খোল-করতাল বিতরণ উৎসবও পালিত হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল এখন বিজেপি-র মোকাবিলায় হিন্দুত্ববাদী লাইন নিয়েছে। তাই, রাজনীতির কারবারিরা এখন কপিল মুনি আশ্রমের মোহন্তের 'রাম মন্দির' মন্তব্যে তণমূলের সেই হিন্দুত্ববাদী লাইনের যোগই দেখতে পাচ্ছেন। মোহন্তের মন্তব্য়ে সরাসরি বিরোধিতা না করাটাও আসলে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সেই হিন্দুত্ববাদী লাইনের প্রতি দায়বদ্ধতা বলেই মনে করা হচ্ছে। এই কারণেই এখন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে তীব্র রাজনৈতিক আক্রণে বিদ্ধ করতে চাইছে সিপিএম। এককালে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করার পর ডানপন্থী থেকে বামপন্থী হয়েছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামকাণ্ডে মমতা তাঁর বামপন্থাকে অতি বামপন্থায় নিয়ে গিয়ে সিপিএম এবং তার সহযোগী দলগুলিকে মাত দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। এবার বিজেপি-কে রুখতে মমতা তাই হিন্দুত্ববাদী বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহলের এই অংশ।