শোভন যেন তৃণমূলেরই নেতা! নারদা-কাণ্ডের গ্রেফতারিতে দূরে ঠেলতে পারলেন না মমতা
শোভন চট্টোপাধ্যায় ভোটের মুখে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে জল্পনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে পরত পরতে, কিন্তু একুশের ভোটে তিনি নিজেকে নিরপেক্ষই রেখেছিলেন।
শোভন চট্টোপাধ্যায় ভোটের মুখে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তৃণমূলে যোগ দেননি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে জল্পনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে পরত পরতে, কিন্তু একুশের ভোটে তিনি নিজেকে নিরপেক্ষই রেখেছিলেন। সোমবার নারদ-কাণ্ডে গ্রেফতারের পর তৃণমূলের তিন বিধায়ক-মন্ত্রীর সঙ্গে মিশে গেল শোভনের নামও।
শোভন গ্রেফতার হতেই দূরত্ব যেন অনেক ঘুচে গেল
শোভন চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের বিরাট জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানান ঘটা করে। তাঁর তৃণমূলে ফেরা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে যায়। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তাতেও তৃণমূলের প্রতি নমনীয়তা প্রকাশ পায়। এদিন তৃণমূলের তিন মন্ত্রী-বিধায়কের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও গ্রেফতার হতেই দূরত্ব যেন অনেক ঘুচে গেল।
শোভনকে আলাদা চোখে দেখেননি ‘দিদি' মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁকে আলাদা করে দেখেননি। তৃণমূলের তরফে আইনজীবীরাও শোভনকে নিয়ে ভিন্ন কথা বলেননি। সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্রদের সঙ্গেই আলোচিত হয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনা পরম্পরায় মনে হয়নি শোভন অন্য কোনও দলের নেতা।
খাতায় কলমে শোভন বিজেপি নেতা হলেও...
শোভন চট্টোপাধ্যায় মুখে বলেছেন বিজেপির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু খাতায় কলমে তিনি এখনও বিজেপি নেতা। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন তাঁকে নিয়ে টানাপোড়েন চলেছে। শেষমশ ভোটের কিছুদিন আগে তিনি বিজেপিতে কিছুদিনের জন্য সক্রিয় হয়েছিলেন। কিন্তু প্রার্থী বিতর্কে তিনি আবার সরে আসেন। ভোটে সে অর্থে অংশ নেননি।
তৃণমূলে ফিরতে আর তাঁর বাধা কোথায় শোভনের?
বিজেপির সঙ্গে সেই দূরত্ব তৈরির পর এদিন তাঁকে গ্রেফতার হতে হল নারদকাণ্ডে। বিজেপিতে গিয়েও তিনি গ্রেফতারি এড়াতে পারলেন না। গ্রেফতার যখন হলেনই, তাহলে তৃণমূলে ফিরতে আর তাঁর বাধা কোথায়? এমনটাই আলোচনা শোনা যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল কিন্তু এদিন শোভনকে আলাদা করে দেখেনি।
স্নেহের কাননকে কখনই দূরে সরাননি মমতা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁকে কোনওদিনই আলাদা চোখে দেখেননি। তাই তো বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও তাঁকে ভাইফোঁটা দিয়েছেন। এবারও করোনা পরিস্থিতিতে তাঁকে ভাইফোঁটার উপহার পাঠিয়েছেন। দিদিকে ব্যক্তিগত স্তরে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি উপহারও পাঠিয়েছেন শোভন। অর্থাৎ স্নেহের কাননকে কখনই দূরে সরাননি মমতা।
শোভনের তৃণমূলে ফেরা সময়ের অপেক্ষা মাত্র?
এদিনও শোভনের গ্রেফতারিতে সেই ছবিও ফুটে উঠেছে। শোভনকে আলাদা করে দেখেননি তিনি। ফিরহাদ, সুব্রত ও মদনের সঙ্গে শোভনের পাশেও থেকেছে তৃণমূল। এদিনের পর শোভনের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব কমে গেল একেবারেই। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা এরপর শোভনের তৃণমূলে ফেরা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
শোভনের ফেরার পথ সুগম হবে তৃণমূলে!
এদিন শোভনের গ্রেফতারির পর সিবিআই দফতরে ছুটে গিয়েছেন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। নিজাম প্যালেসে গিয়ে বেহালা পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শোভনের জন্যই সিবিআই দফতরে এসেছি। আইনজীবী দিয়েছি, দেখা যাক কী হয়। রত্নার এই অবস্থানও শোভনের ফেরার পথ সুগম করবে বলে অভিমত।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা
তারপর শোভনকে নিয়ে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও যে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তায় কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করেছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তা উল্লেখযোগ্য। বৈশাখী বলেন, কেন্দ্রের সরকার করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর। করোনা থেকে তবু বেঁচে ফেরে। কিন্তু ভারতের সরকার আরও ভয়ঙ্কর। আজ গণতন্ত্রের কালো দিন। লজ্জার দিন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্যাপ্টেন মানছেন!
এছাড়া তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্যাপ্টেন বলে অভিহিত করেছেন। চার নেতাকে গ্রেফতারির ঘটনায় নিজাম প্যালেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থানে বসেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকার প্রশংসা করে বৈশাখী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন উনি ক্যাপ্টেন। উনি যে সবার মুখ্যমন্ত্রী, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। বৈশাখীর মুখে এদিন ফিরহাদ হাকিমের নামেও প্রশংসাসূচক শব্দ শোনা যায়। এরপর মনে হওয়া স্বাভাবিক বরফ গলছে। প্রশস্ত হচ্ছে শোভনের ফেরার পথ।