ফিরে দেখা ২০১৯ : বছর ঘুরলেও শোভনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঢাকা রইল অন্ধকারেই
বছর ঘুরে গেলেও তাঁর রাজনৈতিক কোনও স্থিতবস্থা নেই। পেন্ডুলামের মতো দুলছে তাঁর ভবিষ্যৎ। এক বৈশাখী ঝড়েই শোভন এলেমেলো হয়ে গিয়েছেন।
বছর ঘুরে গেলেও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন হল না। ২০১৯-এর শেষেও তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্ধকার দূর হল না। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েও তিনি সক্রিয় হতে পারলেন না। আজও তাঁর রাজনৈতিক কোনও স্থিতাবস্থা নেই। পেন্ডুলামের মতো দুলছে তাঁর ভবিষ্যৎ। এক বৈশাখী ঝড়েই এলেমেলো হয়ে গিয়েছেন শোভন। এখনও তিনি পথের দিশা খুঁজে পাননি।
আজও অজ্ঞাতবাসে বন্দি শোভন
একবার তৃণমূলে, তো একবার বিজেপির দিকে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর চার মাস কেটে গিয়েছে, তারপরও তিনি নিজেকে অজ্ঞাতবাসে বন্দি করে রেখেছেন। ভাইফোঁটার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ফোঁটা নিয়ে আসার পর ফের জল্পনা বেড়েছে। তিনি তৃণমূলে ফিরতে পারেন বলে জল্পনা বেড়েছে। কিন্তু আজ-কাল করে কেটে গিয়েছে দু-মাস। কোনও সিদ্ধা্ন্তে উপনীত হতে পারেননি তিনি।
শোভন তৃণমূলেই, পার্থর মন্তব্যে জল্পনা
দিন ১৫ আগে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় হঠাৎ বলে বসেন, শোভন তৃণমূলেই আছেন, কবে সক্রিয় হন সেটাই দেখার। তারপরই জল্পনার পারদ চড়েছিল আরও। শোভনের তৃণমূলে যোগদান তখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু কোথায় কী, কেটে গেল ২০১৯, শোভনের দেখা নেই তৃণমূলে, দেখা নেই বিজেপিতেও।
শোভনের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই
এরই মধ্যে মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগপত্র গ্রহণ কেরন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তারপরই জল্পনার পারদ চড়তে থাকে। ১২ দিন পদত্যাগপত্র পড়ে থাকার পর কেন গ্রহণ করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাহলে কি বৈশাখীর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইতি টেনে দিলেন শোভন-চ্যাপ্টারে! শোভনের ভবিষ্যৎ ফের প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল।
শোভনের তৃণমূলের ফেরার পথে বাধা
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পার্থর এই সিদ্ধান্ত শোভনের তৃণমূলের ফেরার পথে বাধার পাহাড় তৈরি করেছে নতুন করে। ভাইফোঁটায় দিদির বাড়িতে যাওয়ার পর শোভনের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছিল। তারপর থেকে শোভন-বৈশাখীকে সরকারি অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছিল নিয়মিত। কিন্তু পার্থর এই এক সিদ্ধান্তে শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনায় ফের জল ঢেলে দিল।
শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলের পথে কাঁটা
শোভন-বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও বৈশাখীকে সমানে আশ্বাস দিযে গিয়েছিলেন পার্থ। বলেছিলেন, মিল্লি আল আমিন কলেজের সমস্যার সমাধান করে দেবেন তিনি। ইস্তফা দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সম্মান নিয়েই তিনি শিক্ষকতা করতে পারবেন। তারপর দীর্ঘ দিন কেটে গিয়েছে। এবার পার্থ কিছু না জানিয়েই ইস্তফা গ্রহণ করে নিলেন। তাতেই শোভন-বৈশাখীর তৃণমূলে ফেরার পথ বন্ধ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শোভনকে নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দাবি
তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক প্রশ্নের উত্তরে দিন পাঁচেক আগে শোভনকে নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দাবি করেন। তিনি বলেন, শোভন যে দল ছেড়েছে, তা তিনি এখনও লিখিতভাবে জানাননি। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, শোভন তৃণমূলেই আছেন। এখন দেখুন তিনি কবে সক্রিয় হন। শোভনকে নিয়ে এহেন মন্তব্য ফের নতুন করে ভাবাতে শুরু করে রাজনৈতিক মহলকে।
দিন দিন বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে শোভনের
শোভন ভাইফোঁটার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়ার পরই বিজেপি কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছিল শোভনকে নিয়ে। দিলীপ ঘোষ তো তাঁকে কুড়িয়ে পাওয়া টাকার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তবে শোভন তৃণমূলে ঘরওয়াপসি করেননি অফিসিয়ালি। শোভন তিনমাস আগে বিজেপিতে গেলেও তিনি সক্রিয় হননি। বরং দিন দিন বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন।
ন-মাস অজ্ঞাতবাসে কাটিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন
তৃণমূলে ন-মাস অজ্ঞাতবাসে কাটিয়ে ঘটা করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শোভন ও বৈশাখী। দিল্লিতে গিয়ে বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে শোভন মুকুল রায়-কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র উপস্থিতিতে বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তখন থেকেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তারপর কলকাতায় ফিরে দিলীপের সংবর্ধনা মঞ্চে ডাল-ভাত বিতর্ক মাত্রা ছাড়ায়। এমনকী শোভন-বৈশাখী এরপর বিজেপি ছাড়ার বার্তাও দেন।
শোভনকে নিয়ে জল্পনার পারদ অন্য খাতে
ভাইফোঁটায় দিদির বাড়িতে যাওয়ার পর ফের জল্পনা বাড়িয়ে বিজেপির কো-অবজার্ভার অরবিন্দ মেননকে দেখতে ছুটেছিলেন শোভন-বৈশাখী। অসুস্থ হয়ে মেনন কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শোভন ও বৈশাখী তাঁকে দেখতে যান হাসপাতালে। তারপর থেকেই শোভনকে নিয়ে জল্পনার পারদ অন্য খাতে বইতে শুরু করেছিল আবার।
রত্নার ফোনে শোভনের ফোন থেকে মেসেজ
রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ এই ঘটনাকে শোভন-বৈশাখীর দু-নৌকায় পা দিয়ে চলা বলে মনে করছেন। এরই মধ্যে ভাইফোঁটারা দিল রত্নার ফোনে শোভনের ফোন থেকে মেসেজ যায় বলে অভিযোগ ওঠে। সেই মেসেজ দেখে দিদি অখুশি হয়েছেন বলেই শোভন ফের অন্য পন্থা নিলেন বলেই মনে করে রাজনৈতিক মহল।
রত্নাকে করা সেই মেসেজ
উল্লেখ্য, ভাইফোঁটার দিনই দিদির বাড়িতে যাওয়ার পর রত্নার ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেই মেসেজে লেখা- সত্যের জয় হল। এবার তো মিউচুয়াল ডিভোর্স দাও। বৈশাখীর সম্মানের জন্য লড়ে জিতলাম তো। এরপর মেসেজে কথা কাটাকাটিও হয় শোভন-রত্নার। সেই মেসেজ দিদিকে দেখানোর পরই অন্য ধারায় বইতে থাকে শোভনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা। যদিও ওই মেসেজ শোভন করেননি বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বিজেপি সম্পর্কে মত জানান বৈশাখী
যদিও বৈশাখী আগেই বিজেপি সম্পর্কে মতপ্রকাশ করেন। বৈশাখী বলেন, শোভনবাবু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। উনি চেয়েছিলেন আমিও সক্রিয় রাজনীতিতে থাকি। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই পদে পদে অপমানিত হচ্ছি। বিজেপির সঙ্গে এই মুহূ্র্তে আমাদের কোনও যোগ নেই। তবে এই কথা বলার পরদিনই তাঁরা উভয়েই ফের বিজেপির পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননকে দেখতে যান।