গাড়ি ভর্তি করে ঢুকছে সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেনজির সন্ত্রাসের ছক
বিশেষ সূত্রে খবর রাজ্যের বাইরে থেকে এই উত্তরবঙ্গে থেকে অন্তত কয়েক হাজার পেশাদার দুষ্কৃতী কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ছড়িয়ে গিয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই রাজ্যে দফায় দফায় শুরু হয়েছে দুষ্কৃতী হামলা। বিশেষ করে মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে চরমে উঠেছে হিংসাত্মক ঘটনা। রোজই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বারবার দুষ্কৃতী হামলার ছবি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। ইতিমধ্যে রাজ্যে মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে অন্তত ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যদিও, একটি মৃত্যুর জন্য রাজনৈতিক দলের নিজস্ব গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব-কেই দায়ী করা হচ্ছে। জখম হয়েছেন অন্তত শ'খানেক মানুষ। বৃহস্পতিবার বীরভূমের নলহাটিতে মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতী হামলায় সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোম-এর মাথা ফাটানো হয়।
স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি থেকে শুরু করে সিপিএম, কংগ্রেস এই সব হামলার জন্য তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে। বহুস্থান থেকেই অভিযোগ আসছে যারা হামলা চালাচ্ছে তাদের কারোর মুখই পরিচিত নয়। এলাকার মানুষ বলে কাউকে বোধ হচ্ছে না। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা তোপ দেগে বলেছেন, এই সব হামলা সাজানো ঘটনা। বিজেপি বহু স্থানে বাইরে থেকে লোক এনে বোমাবাজি করে তার ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রচার করছে। যদিও, বিজেপি এই অভিযোগ মানতে নারাজ। এমন হামলা চললে কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন বিজেপি-র রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষ। মনোনয়ন জমায় এমন বেনজির দুষ্কৃতী হামলা নিয়ে মুখ খুলেছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনিও তৃণমূলের দিকে এই হামলার জন্য আঙুল তুলেছেন। পুলিশের আইজি আইন-শৃঙ্খলা অনুজ শর্মার দাবি, এই হামলা চালাচ্ছে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। কিন্তু, কাদের মদতে এই দুষ্কৃতীরা রাজ্যে ঢুকছে? সে প্রশ্নে নিরুত্তর থেকেছেন আইজি আইন-শৃঙ্খলা।
এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে এক ভয়ঙ্কর তথ্য। বিশেষ সূত্রে খবর রাজ্যের বাইরে থেকে ও উত্তরবঙ্গে থেকে অন্তত কয়েক হাজার পেশাদার দুষ্কৃতী কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ছড়িয়ে গিয়েছে। বাসে-ট্রামে নয় এই সব দুষ্কৃতীরা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছে। এদের কাছে আছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। ৯ এমএম পিস্তল থেকে শুরু করে ৭এমএম পিস্তল, অগুনিত বোমা, ধারাল অস্ত্র এবং হকি স্টিক। বিশেষ এই সূত্রের দাবি, মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত এই দুষ্কৃতীরা ময়দান কাঁপাবে। এদের কাজই হল মনোনয়ন জমাকেন্দ্রে হামলা করা এবং ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা। কাজে বাধা সৃষ্টিকারীদের প্রাণে না মেরে ফেলা ছাড়া আর যে কোনও স্তর পর্যন্ত এই দুষ্কতীরা মারধর করবে বলেও খবর।
গত কয়েক দিনে কলকাতা দিয়ে সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকায় অন্তত এমন ১২০০ দুষ্কৃতী ঢুকে পড়েছে। এরমধ্যে ৪৭৫ জনের একটি দল প্রবেশ করেছে ডায়মন্ড হারবারে। রায়চকের একটি বিলাসবহুল হোটেলে এই দুষ্কৃতীরা থাকলেও পুলিশ প্রশাসনের দাবি তাঁদের কাছে এমন কোনও খবর নেই। এমনকী পঞ্চায়েত নির্বাচনের সরকারি ভার ন্যস্ত ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসকের সঙ্গেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, একবার ফোন ধরে মিটিং-এ ব্যস্ত আছি বলে রেখে দেন। এরপর তাঁকে যতবারই ফোন করা হয় তিনি ফোন ধরেননি।
পুলিশেরও একটি সূত্রের দাবি করা হচ্ছে এই দুষ্কৃতীরা একটি দলে ৪০ জন করে থাকছে। এরপর এরা এলাকায় থাকা মনোনয়ন কেন্দ্রে ঢুকে পড়ছে। সেখানে অপারেশন চালিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্য মনোনয়ন কেন্দ্রের উদ্দেশে। বিশ্বস্ত সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কারোরই কথা বলা বারণ। এমনকী, তাদের ছবি বা ভিডিও তোলার উপরেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু, এই দুষ্কৃতীদের তত্বাবধান করছে কারা? কারাই বা এমন নির্দেশ দিচ্ছে? সে ব্য়াপারে মুকে রা'। কেউ টু শব্দটিও করছেন না।
জানা গিয়েছে এই সব দুষ্কৃতীদের বিহার ও উত্তর প্রদেশ এবং সিকিম ও দার্জিলিং থেকে আনা হয়েছে। ব্যয় করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আতঙ্ক এতটাই চরমে যে মনোনয়ন কেন্দ্রের কাছে পা মাড়াতে চাইছে না সংবাদমাধ্যমের কোনও প্রতিনিধি। পুলিশ প্রশাসনের একটাই কথা এমন কোনও দুষ্কৃতীদের বিষয়ে তাদের কাছে কোনও খবর নেই। বহিরাগতরা হামলা করছে ঠিকই। কিন্তু তা নিয়ে তদন্ত চলছে বলেই প্রশাসন তার বক্তব্য জানিয়ে দিচ্ছে।
ডায়মন্ড হারবারের দুষ্কৃতীদের যে ৪৭৫ জনের দল ঢুকেছে তারা কাকদ্বীপ থেকে নামখানা, ডায়মন্ড হারবারে হামলা চালাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। মনোনয়ন জমায় বেনজির দুষ্কৃতী হামলায় বিজেপি-র রাহুল সিনহা, দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে সিপিএম-এর সূর্যকান্ত, সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানরা সরব। পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধেও নিস্ক্রিয় থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। বিজেপি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার পথে কংগ্রেসও।
ডায়মন্ড হারবারে ঢুকে পড়া দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসককে অবগতও করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। কিন্তু, এতে কত দূর লাভ হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
এমনকী বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, তারা যাতে এই হামলার প্রতিরোধ করতে না পারেন তার জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বসছে পুলিশ পিকেট। কিছু বেগরবাই দেখলেই পুলিশ চেকপোস্টে আটকে যাচ্ছে বিরোধী দলের কর্মীরা।