সন্দেশ খাওয়ানোর অপরাধ! ৮০ বছরের বাবা-কে বেধড়ক চড় ছেলের, ভাইরাল হল ভিডিও
লুকিয়ে-লুকিয়ে স্ত্রী-কে সন্দেশ খাওয়াতে গিয়েছিলেন ৮০ বছরের মানিকলাল বিশ্বাস। মিষ্টি বলতে একটা সময় পাগল ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের বিল্ডিং মোড়ের বাসিন্দা মানিকলালের স্ত্রী। কিন্তু সুগারের রোগী হয়ে যাওয়ায় আর মিষ্টি খাওয়া হয় না তাঁর। তারপরে বার্দ্ধক্যের অসুস্থতা খাওয়া-দাওয়াতেও থাবা বসিয়েছে। পুজো গেল। কিন্তু একটু মিষ্টিও দাঁতে কাটেননি মানিকলালের স্ত্রী। তাই পকেটে করে স্ত্রী-র জন্য সন্দেশ নিয়ে এসেছিলেন মানিকলাল। চুপি-চুপি তাঁকে সন্দেশটা আনতে হয়েছিল কারণ, ছেলে এবং পুত্রবধূ টের পেলে হয়ে গেল। হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়। পকেটে থাকা লুকনো সন্দেশ স্ত্রী-র মুখে তুলে দিতেই ঘরে চলে আসে ছেলে। আর যাবেন কোথায়। ঘরে ঢোকার দরজায় বাবা-র কলার ধরে ছেলের আস্ফালন শুরু হয়ে যায়। এরপরই মানিকলালের বছর চল্লিশের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস বৃদ্ধ-বাবার কলার ধরে সমানে গালে চড় মারতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে মানিকলালের গালে ১০-১২টা চড় কষায় ছেলে প্রদীপ।

অসহায় বৃদ্ধের ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয় থাকা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। মানিকলাল বিশ্বাস এবং তাঁর ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস ও পুত্রবধূ- কেউই ঠাহর করতে পারেননি যে গোটা ঘটনাই মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি হয়ে যাচ্ছে। এই ভিডিও এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেওয়া হয়। পরে তা ভাইরাল হয়ে যায়। অশোকনগর থানা ঘটনার তদন্তে নামে। ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পরে মানিকলালের অভিযোগের ভিত্তিতে ছেলে প্রদীপকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, বছর চল্লিশের প্রদীপ প্রায়ই বাবা-মাকে মারধর করত। সে কথা তাঁরা জানতেন। কিন্তু, ঠিকমতো প্রমাণ হাতে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে প্রদীপের বিরুদ্ধে কিছু করা যাচ্ছিল না বলেই প্রতিবেশীদের দাবি। এই ভিডিও-টি মোবাইল বন্দি হতেই অনেকে হাফ ছেড়ে বাঁচেন।

গোটা ঘটনায় হতবাক মানিকলাল। তাঁর জন্য ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে তা মানতে পারছেন না। তাঁর মতে, যাইহোক না কেন ছেলে বলে তো কথা। ছেলে যে প্রায়ই শাসানি ও মারধর করত তা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন মানিকলাল।
স্থানীয় বহু মানুষই জানিয়েছেন প্রদীপ যে বাবা-মা-কে মারধর করে তা সকলেই জানতেন। প্রদীপ অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কর্মী। এর আগে ছেলের মারধর ও অবঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায়-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই যাত্রায় মানিকলাল-কে পুলিশের দ্বারস্থ হতে বলেছিলেন বিধায়ক। কিন্তু, পিতৃস্নেহে ভরা মনে ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে চাননি মানিকলাল। তাঁর যুক্তি ছিল পুলিশ এলে ছেলেটা চাকরি নিয়ে সমস্যায় পড়বে। কিন্তু, মানিকলালের এই অবস্থানও অত্য়াচারী ছেলের অদৃষ্ট-কে বদলে দিতে পারল না।