দেড় বছর পর দেখা হতেই বেরিয়ে এল বুকফাটা কান্না! ফেসবুক মিলিয়ে দিল মা-ছেলেকে
আবার বছর কুড়ি পরে... দেখা হয় যদি... আবার বছর কুড়ি পরে। জীবনানন্দ দাসের কবিতার সেই আবেগ ছিল না এখানে, ছিল আকুতি। এক সন্তানহারা মায়ের আকুতি। মাকে ফিরে পাওয়ার জন্য ছেলের উদ্বেগ।
আবার বছর কুড়ি পরে... দেখা হয় যদি... আবার বছর কুড়ি পরে। জীবনানন্দ দাসের কবিতার সেই আবেগ ছিল না এখানে, ছিল আকুতি। এক সন্তানহারা মায়ের আকুতি। মাকে ফিরে পাওয়ার জন্য ছেলের উদ্বেগ। অবশেষে তাঁরা ফিরে পেলেন একে অপরকে, মা পেলেন হারানো ছেলেকে, ছেলেও ফিরে পেলেন মাকে। দুজনের চোখের জল বাঁধ মানছিল না। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে শুধু কেঁদেই চলেছেন উমাদেবী। ছেলে অপূর্বর চোখেও মাকে ফিরে পেয়ে আনন্দাশ্রু ছলছল করছে।
এর মধ্যে কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। হাজার জায়গা ঘুরেও মায়ের সন্ধান পায়নি ছেলে। মা যে সেই দিদির বাড়ি যাবে বলে বেরিয়েছিল, আর ফিরে আসেনি। দিদির বাড়িতেও পৌঁছয়নি। তন্নতন্ন করে খুঁজেও মেলেনি সন্ধান। কী করেই বা মিলবে সন্ধান। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। জ্ঞান ফিরলেও স্মৃতি ফেরেনি। বাকশক্তিও রহিত হয়ে যায়।
দীর্ঘ চিকিৎসার পর যখন তিনি স্বাভাবিক হলেন, তখনই ফেসবুকের সূত্র ধরে ঘর-বাড়ি, ছেলে-মেয়ে ফিরে পেলেন উমাদেবী। ফেসবুকের সৌজন্যে মা-ছেলে একে অপরকে ফিরে পেলেন দেড় বছর পর। এ জন্য একশো শতাংশ কৃতিত্ব বনগাঁ হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালকর্মীদের। তাঁরা শুধু চিকিৎসায় সুস্থ করেই ক্ষান্ত হননি, সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ায় করে ফিরিয়ে দিয়েছেন উমা দেবীর হারানো সবকিছু। সবথেকে বড় কথা তাঁর সন্তানদের খোঁজ এনে দিয়েছেন তাঁরা।
২০১৭ সালের ২৩ মে। মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের উমাদেবী। তারপর থেকেই নিখোঁজ। ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস মায়ের খোঁজ চালিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। অবশেষে স্মৃতিশক্তি হারানো ও বাকশক্তি রহিত হয়ে যাওয়া উমাদেবী হঠাৎ চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাঁর স্মৃতিশক্তির ফিরে আসে। হাসপাতাল কর্মীদের তিনি জানান। তাঁর নাম, তাঁর ছেলের নাম। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা মনে করতে পারছিলেন না তিনি।
[আরও পড়ুন: বিজেপি সদস্য এক লাফে কমেছে ৩ কোটি! লোকসভার আগে অমিত-বয়ানে উদ্বেগ]
এবার হাসপাতালের কর্মীরা ফেসবুকে নদিয়ার অপূর্ব নামে সার্চ করতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টার পর একটি ছবি দেখে চিনতে পারেন উমা দেবী। তিনি জানান, ওই ছবিটি তাঁর ছেলের। কিন্তু সেখানেই সমস্যার সমাধান হয়নি। কেননা অপূর্বর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনও ফোন নম্বর ছিল না। তারপর ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ অ্যাকাউন্ট। কিন্তু আশা ছাড়েননি বনগাঁ হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন:পুজোর আগে 'ফি' মকুব! নবান্নে বড় ঘোষণায় সুখবর দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ]
অপূর্বকে ট্যাগ করে উমাদেবীর ছবি পোস্ট করা হয়। অপূর্বর ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা কয়েকজনকেও উমাদেবীর ছবি ট্যাগ করা হয়। তাতেই মেলে সাড়া। খোঁজ মেলে অপূর্ব। অপূর্ব মায়ের সন্ধান পেয়ে পাগলের মতো ছুটে আসেন বনগাঁ হাসপাতালে। দেখা হয় মা ও ছেলের। দীর্ঘ দেড় বছর পর সব জল্পনার অবসান হয়। হয় মধুরেণ সমাপয়েৎ।
[আরও পড়ুন:বাড়ছে তৃণমূল! একাধিক প্রাক্তন বিধায়কের যোগ, সংগঠন বাড়াতে হাতিয়ার এনআরসি]