লকডাউনের পরও কিছু রাজ্য করোনা সংক্রমণ রোধে ব্যর্থ, ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ
লকডাউনের পরও কিছু রাজ্য করোনা সংক্রমণ রোধে ব্যর্থ, ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ
এক ডজনেরও বেশি রাজ্যে লকডাউন ও কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি হওয়া সত্ত্বেও কোভিড–১৯ লড়াইয়ে সেরকম কোনও পার্থক্য নজরে পড়ছে না। তথ্যের বিশ্লেষণে এই রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে জুলাইতে আনলক ২–এর সময় তারা তিনটে স্পষ্ট কারণের জন্য পিছলে গিয়েছে। সেগুলি হল প্রবৃদ্ধির হার (সংক্রমণের প্রবৃদ্ধি), দ্বিগুণ হওয়ার সময় (মোট সংক্রমণের দ্বিগুণ হওয়ার সময়) ও পজিটিভিটির হার (টেস্ট হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা পজিটিভ)।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও ত্রিপুরাতে জুলাইয়ের সময় নয়ত বা সম্পূর্ণ বা আংশিক অথবা ছোট করে লকডাউন করা সত্ত্বেও সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। অন্যদিকে, জুলাইতে আনলক ২-এর সময় রাজস্থান, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়ের অবস্থাও একই ছিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও মহামারি পারদর্শী যামিনী এন রাও বলেন, ‘লকডাউনের কারণে সংক্রমণ ধীরগতিতে ছড়ায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের আনলক করতে হবে এবং যদি না আমরা ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বাধা দেওয়ার উপায় না রাখি তবে মহামারিটি আবার শুরু হবে।' জর্জ ইনস্টিটিউট অফ গ্লোবাল হেল্থের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ওমেন জন জানিয়েছেন যে প্রত্যেক পজিটিভ কেসের দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিছু রাজ্যে খুব ভালো টেস্ট হচ্ছে যেখানে তারা খুব দৃঢ়ভাবে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সনাক্ত, আইসোলেশন, সংক্রমণের সংখ্যাগুলিকে ধরে রেখেছে।' মহামারিবিদ গিরিধারা আর বাবু জানান, দুর্বল পরীক্ষা এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাসমূহ সহ বৃহৎ জনসংখ্যার ঘনত্ব উচ্চ সংক্রমণের মাত্রাকে দায়ি করে। জুলাইয়ে পাঁচ রাজ্যের কেমন পারফর্ম করেছে তা দেখে নেওয়া যাক।
অন্ধ্রপ্রদেশ
(জুলাই ১৮ থেকে কিছু জায়গায় সম্পূর্ণ লকডাউন ছিল)
সক্রিয় কেসের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা এই রাজ্যের এবং ৩১ জুলাই পর্যন্ত মোট কোভিড-১৯ সংক্রমণে তৃতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্র। তথ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, করোনার জীবাণু ১৩টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। জুলাইয়ের শেষে যেখানে অন্ধ্র সরকার টেস্টিং ১১১ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে, তাও ১ জুলাইয়ের সঙ্গে ৩১ জুলাইয়ের সক্রিয় কেসগুলি তুলনা করলে তা আটগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে, সরকারের লকডাউনের প্রচেষ্টা কোনও কাজে দেয়নি।
জুলাইয়ে করোনা প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৪২ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ, জুনে যা ছিল ৪.৬৯ শতাংশ। জুনের ১৪.৯ দিন থেকে জুলাইয়ের ৯.৪৩ দিনের মধ্যে রাজ্যে সংক্রমণ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। যা দেশে চরম দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বিগুণ হার।
কর্নাটক
(রাজধানী বেঙ্গালুরু এবং শহর ও গ্রাম উভয় জেলাতেই ১৪ জুলাই থেকে ২২ জুলাই ন'দিনের লকডাউন)
গোটা দেশজুড়ে জুনে সক্রিয় ও নতুন কেসের ক্ষেত্রে কর্নাটক সপ্তম স্থানে ছিল, কিন্তু জুলাইয়ের শেষে তা সর্বোচ্চ সক্রিয় কেসে তৃতীয় নম্বরে চলে আসে। মোট সংক্রমণের ক্ষেত্রেও কর্নাটক দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিল। জুনের ২৮ ও ২৯ তারিখ বাদে দৈনিক কেসের ক্ষেত্রে কর্নাটক হাজারের আশেপাশেই থাকত, তবে জুলাই মাসে, রাজ্যটি প্রায় প্রতিটি দিনই একটি নতুন রেকর্ড দিয়ে শুরু করেছিল। ১ জুলাই রাজ্যে যেখানে মোট সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৬,৫১৪ তা জুলাইয়ের শেষে গিয়ে দেখা যায় ১,২৪,১১৫। লকডাউন অনুসরণ করার পরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন যে লকডাউনের কোনও প্রভাব পড়েনি রাজ্যে।
উত্তরপ্রদেশ
(সপ্তাহান্তের লকডাউন যা ১০ জুলাই থেকে শুরু হয়)
দেশের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার রাজ্য বাজে থেকে খারাপের দিকে এগোয় জুলাইতে এবংকোভিড-১৯-এর প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে জুনের ৩.৫০ শতাংশ থেকে ৪.১৬ শতাংশ বাড়ে জুলাইতে।
সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হয় জুনের ২০ দিন থেকে জুলাইয়ের ১৬.৮২ দিনের মধ্যে। অন্যদিকে পজিটিভ কেসের সংখ্যা ১ জুলাই ১.৮১ শতাংশ থেকে ৩১ জুলাই ৩.৮২ শতাংশ বাড়ে। উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যও সপ্তাহান্তে লকডাউন চালু করার পরেও সক্রিয় কেসের ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় তালিকায় তিনটি নম্বরে উঠে এসেছিল।
পশ্চিমবঙ্গ
(২৩ জুলাই থেকে আংশিক লকডাউন)
জুনে সক্রিয় কেসে গোটা দেশের মধ্যে নবম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু তারপরই জুলাইতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও পজিটিভ কেসের সংখ্যা বাড়ার জন্য তা ষষ্ঠ স্থানে চলে আসে। যেখানে ১ জুলাই রাজ্যে রেকর্ড ১৯,১৭০টি কেস ছিল, সেখানে মাসের শেষে তা রেকর্ড ৭০,১৮৮ কেসে গিয়ে দাঁড়ায়। জুনে করোনা প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩.৯৬ শতাংশ ছিল সেখানে জুলাইতে তা বেড়ে ৪.২৬ শতাংশ হয়। এছাড়াও সক্রিয় কেসের ক্ষেত্রে সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে সক্রিয় কেসের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার বিষয়টি এ রাজ্যে একটু হলেও উন্নত হয়েছে, জুনের ১.৬৭ দিনের তুলনায় এখন জুলাইতে কেস দ্বিগুণ হচ্ছে ১৬.৪৩ দিনের মাথায়।
বিহার
(১৬ জুলাই থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন রাজ্যে)
বিহার রাজ্যটি জুন মাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হিসাবে গোটা দেশের তালিকায় দশের আশেপাশে ছিল। জুলাইয়ের শেষে তা ৫০,৯৮৭ সংক্রমণ নিয়ে দশম স্থানে বিরাজমান। অন্যদিকে সক্রিয় কেস ১৭,০৩৮ জন নিয়ে তা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে। ১ জুলাই রাজ্যে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ২,৩২০ থেকে ছ'গুণ বৃদ্ধি পেয়ে তা জুলাইয়ের শেষে গিয়ে দাঁড়িয়েথছে ১০,২০৪টি কেসে। সংক্রমণের প্রবৃদ্ধি জুনে ৩.১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে জুলাইতে ৫.৩১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
জুনের ২২ দিনের মাথায় যেখানে রাজ্যে দ্বিগুণ সংখ্যা হত তা জুলাইতে ১৩ দিনের মাথায় হচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার জন্য বিহার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রাজ্য ব্যাপী লকডাউন কার্যকর করবে। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সম্প্রতি জানিয়েছেন যে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের জন্য এভাবে সংক্রমণ বাড়ছে।