সিঙ্গুরের কংক্রিটের জঙ্গলে ফেরেনি সবুজ! শিল্প বনাম কৃষি একুশের ভোট-বাজারে
সিঙ্গুরের কংক্রিটের জঙ্গলে ফেরেনি সবুজ! শিল্প বনাম কৃষি একুশের ভোট-বাজারে
১৫ বছর কেটে গিয়েছে। সিঙ্গুর ফেরেনি স্বাভাবিক অবস্থায়। আজও হুগলির সিঙ্গুরের কারখানা চত্বর কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত। বহু ফসলি জমির উপর যে টাটার ন্যানো কারখানা গড়ে উঠেছিল, সেখানে ফেরেনি সবুজ। শিল্পও হল না, ফিরল না কৃষিও। তাই সিঙ্গুর আজও অঝোর নয়নে কেঁদে চলেছে। আবারও একটা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে, কিন্তু পরিবর্তন আসেনি!
সর্বশক্তি নিয়ে ডায়মন্ড হারবারে থাবা বসাতে উদ্যত বিজেপি, দুর্গ রক্ষার চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
একুশের নির্বাচনে মুখোমুখি হওয়ার আগে জয়নগরের সাত কেন্দ্রে কে কোথায় এগিয়ে
তৃণমূলের প্রাক্তনী মুকুলই বিজেপির প্রধান স্থপতি, মমতার চিন্তা কমাতে পারছেন না পিকেও
১৫ বছর আগের সিঙ্গুর ও ন্যানো কারখানা
১৫ বছর আগের সিঙ্গুর। শান্ত-সবুজ-প্রাণোচ্ছ্বল সিঙ্গুর। হঠাৎই বাম সরকারের আমলে এক লাখি গাড়ি ন্যানোর কারখানা হবে বলে ঠিক হল সিঙ্গুরে। কারখানা হবে বহু ফসলি জমিতে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে ২০০৬-এর মে মাসে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি হবে বলে ঘোষণা করে টাটা। তারপরই গর্জে ওঠ অনিচ্ছুক কৃষকরা। জানিয়ে দেন কোনওভাবেই তাঁরা মানবেন না জমি অধিগ্রহণ।
পিকের কৌশলে এগিয়ে মমতা! একুশের ভোট প্রচারে হাতিয়ার যখন সোশ্যাল মিডিয়া
কারখানা নির্মাণের বিরোধিতায় অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে
সেই শুরু হয়েছিল আন্দোলন। বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেয়েছিলেন টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা নির্মাণ করতে। আর বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুফসলি জমিতে কারখানা নির্মাণের বিরোধিতা করে অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন করেছিলেন।
বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন শোভন-বৈশাখীর! একুশে ভোটের মুখে মহাধাক্কা পদ্মশিবিরে
সিঙ্গুর যে তুরুপের তাস হবে
বামেদের টেক্কা দিতে সিঙ্গুর যে তুরুপের তাস হবে, তা বুঝতে দেরি করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর কৃষকদের সমর্থনে ২৬ দিনের অনশন তো ইতিহাস! ২০০৭ সালে ন্যানো গাড়ির কারখানার জন্য বামফ্রন্ট সরকার জমি তুলে দেন টাটার হাতে। ২০০৮-এ সেখানেও আন্দোলনে বসেন মমতা। টাটার হাতে তুলে দেওয়া ৯৯৭ একরের মধ্যে ৪০০ একর জমির মালিকেরা ওই জমি দিতে আপত্তি তোলেন।
সিঙ্গুরের কৃষি অধিকার ফেরালেও জমি ফেরতে কাঁটা
এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবেন তিনি। ক্ষমতায় এসেই আইন প্রণয়ন করেন জমি ফিরিয়ে দিতে। আইনি জটিলতায় আটকালে তা শীর্ষ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। শীর্ষ আদালতে জিতে সিঙ্গুরের কৃষি অধিকার ফেরালেও জমি ফেরতে কাঁটা রয়ে যায়।
তৃণমূলের দাবি, তারা কখনই শিল্প-বিরোধী নয়
একুশের প্রাক্কালে সিঙ্গুরে ঘুরে ফিরে আসছে শিল্প বার্তা। ২০১১ সাল থেকে সিঙ্গুর তৃণমূলের দখলে রয়েছে। ২০১৯-এ অবশ্য জনমত অন্য কথা বলতে শুরু করেছে। তৃণমূল দাবি করে, তারা কখনই শিল্প-বিরোধী নয়। তারা বহু ফসলি জমিতে শিল্প চান না। এরপর সিঙ্গুরে অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির ঘোষণা করেন তিনি।
শুভেন্দু যা বলবে তা-ই করবেন তৃণমূলের শিশির! মোদীর সফরের আগে জল্পনা তুঙ্গে
২০২১-এর ভোট-বাজারে সিঙ্গুর ফের ইস্যু
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চাইছে সিঙ্গুরে কৃষি হোক, শিল্পও হোক। তাই অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের পাশাপাশি জমি ফেরানোর প্রক্রিয়াও চলছে। সিঙ্গুরে জমি-হারা চাষিরা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা এবং ১৬ কেজি চাল পাচ্ছেন। আর এদিকে ২০২১-এর ভোট-বাজারে এবার সিঙ্গুর ফের ইস্যু হতে চলেছে।
ফের শিল্প বনাম কৃষির লড়াই সামনে চলে আসছে
সিঙ্গুরে এবার লড়াই কার্যত দুই তৃণমূলীর। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে বেচারাম মান্নাকে। আর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন মাস্টারমশায় রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। দুজনেই সিঙ্গুর আন্দোলনের অন্যতম মুখ। ফলত সিঙ্গুরের আন্দোলন এবার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ফের ইস্যু হয়ে উঠতে চলেছে। ফের শিল্প বনাম কৃষির লড়াই সামনে চলে আসছে।
বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে সিঙ্গুর আবার লাইম লাইটে
বামফ্রন্টও শিল্প-কৃষির লড়াইয়ের ফায়দা তুলতে চাইছে। সিঙ্গুর থেকে টাটাদের চলে যাওয়া বাংলার শিল্প সম্ভাবনার যে প্রভূত ক্ষতি করেছে, তা তারা তুলে ধরছে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে। সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত বামপ্রার্থী হয়েছেন তরুণ তুর্কি সৃজন ভট্টাচার্য। মোট কথা সিঙ্গুর আবার লাইম লাইটে।
নন্দীগ্রাম আন্দোলনও পরিবর্তনের সোপান তৈরি করেছিল
সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন যেমন মমতার নেতৃত্বে পরিবর্তনের পথ সুগম করেছিল, তেমনই নন্দীগ্রাম আন্দোলনও পরিবর্তনের সোপান তৈরি করেছিল। সেই নন্দীগ্রামেও লড়াই এবার কাঠে-খড়ে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের দুই পুরোধা এবার মুখোমুখি হয়েছেন। একদিকে মমতা অন্যদিকে শুভেন্দু। ফলে লড়াই মূলত হয়ে গিয়েছে তৃণমূলীদের মধ্যেই।
বাংলায় কি মমতাই শেষ কথা, নাকি ভবিষ্যৎ শুভেন্দু
ফলস্বরূপ নন্দীগ্রাম এবার হয়ে উঠেছে মোস্ট হাইপ্রোফাইল কেন্দ্র। পরিবর্তনের পীঠস্থানে এবার লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম শুভেন্দু অধিকারীর। বাংলায় যে এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা, তা বোঝাতে এই কেন্দ্রে তাঁকে জিততেই হবে। আবার শুভেন্দু যে বাংলার ভবিষ্যৎ তা বোঝাতে হারাতে হবে মমতাকে।
একেবারে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে নেমেছেন মমতা ও শুভেন্দু
কোনও পরোক্ষ লড়াই নয়, একেবারে প্রত্যক্ষ লড়াইয়ে নেমেছেন মমতা ও শুভেন্দু। সম্মুখ সমরে যে জিতবেন, তিনিই হবেন বাংলার মুখ। বাংলার ভবিষ্যৎ এবার বেছে নেওয়ার অধিকার পেয়েছে নন্দীগ্রাম। যে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পথ ধরে বাংলায় বাম জমানার অবসান ঘটেছিল, সেই নন্দীগ্রামই এবার বেছে নেবে বাংলার ভবিষ্যৎক।
কাকে বেছে নেয় নন্দীগ্রাম, নজর রাজনৈতিক মহলের
সুদূর নন্দীগ্রাম থেক বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হওয়া এবার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। নন্দীগ্রামের স্থানীয় মানুষও খুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখান থেকে প্রার্থী দেখে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আবার শুভেন্দু জেলারই ছেলে। তিনি আবার নন্দীগ্রামের ভোটার হয়ে 'ভূমিপুত্র' হয়েছেন। তাই কাকে বেছে নেয় নন্দীগ্রাম, সেদিকে নজর রাজনৈতিক মহলের।
মুকুল-শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে জিততে মমতা-পিকের পঞ্চবাণ, একুশের ভোটে তৈরি রণকৌশল
{quiz_525}