দুর্নীতিগ্রস্ত জেলাশাসককে গ্রেফতার করে কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে শিলিগুড়ির সিপি
কিন্তু বদলির আগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে গেলেন জয়রামন। স্পষ্ট জানিয়ে গেলেন, "আমি কোনও ভুল কাজ করিনি। যা করেছি ঠিকই করেছি। এর জন্য কোনও আফসোস নেই। জনস্বার্থে করেছি।"
মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমারকে গ্রেফতার করে শনিবার হই চই ফেলে দিয়েছিলেন জয়রামন। কিন্তু প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও কথা বলেননি তিনি। কিন্তু এদিন 'আমি কোনও ভুল করিনি' বলে প্রশাসনিক এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই শোনা গেল তাঁর গলায়। একইসঙ্গে মুখ্য়সচিব সঞ্জয় মিত্রর "জয়রামন য়া করেছেন ভুল করেছেন" বক্তব্যকেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গেলেন তিনি। এমনটাই মনে করছে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ।
পুলিশ কর্তাদের একাংশের ধারণা জয়রামনের বদলি পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
রাজ্য পুলিশের ডিজির তলব পেয়ে আজই জয়রামন কলকাতায় আসছেন। কোন পরিস্থিতিতে তিনি মালদহের জেলাশাসককে গ্রেফতার করেছিলেন, পুলিশ প্রধানের কাছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে তাঁকে। সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
শনিবার মালদহের জেলাশাসক শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) একাধিক প্রকল্পে আর্থিক নয়ছয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন। কিন্তু গ্রেফতারের ২৩ ঘণ্টার মধ্যেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান কিরণকুমার। এবং কম্পালসরি ওয়েটিংয়ে পাঠানো হয় জয়রামনকে। আর এতেই ক্ষেপেছেন শিলিগুড়ির সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, এক) মালদহের জেলাশাসককে বাঁচাতে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে দুই) তদন্তকারী অফিসারকে চাপ দিয়ে রাজ্য সরকার মালদহের জেলাশাসককে জামিন মুক্ত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
শিলিগুড়ির আম জনতা এমনকী পুলিশ মহলেও কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও সততার জন্য জনপ্রিয় ছিলেন জয়রামন। তাই জয়রামনের বিদায়ী অনুষ্ঠানে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে ভিজে গিয়েছিল অনেক পুলিশ কর্মী ও অফিসারদের চোখ। সেই সততারই মাশুল গুনতে হল এই আইপিএস অফিসারকে। এমনটাই মনে করছেন পুলিশ প্রসাশনের একাংশ। সৎভাবে কাজ করতে গেলে এভাবে বারবার বদলি করা হলে স্বাধীনভাবে কাজ করা মুশকিল বলেও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
সরকারি সূত্রের খবর, সরকারের উঁচু মহলকে না জানিয়ে জেলাশাসকে গ্রেফতার করার জন্যই জয়রামনকে কম্পালসরি ওয়েটিং দেওয়া হয়েছে। যদিও একাধিক আইপিএস অফিসার ও আইনজ্ঞ এর বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের মতে, মালদহের জেলাশাসককে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কোনও আইন ভঙ্গ করেননি শিলিগুড়ির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। হাতে যথেষ্ট প্রমাণ থাকলে আইএএসদেরও গ্রেফতার করা যায়। এক্ষেত্রে চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় সরকারের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আইন অনুযায়ী গ্রেফতারযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে অনুমতি বাধ্য়তামূলক নয়।
প্রশ্ন উঠেছে নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত পুলিশ কমিশনারকে শো-কজ বা সাসপেন্ড না করে কেন কম্পালসরি ওয়েটিং-এ পাঠিয়ে দেওয়া হল। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। রাজ্য পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, প্রায় ছ'মাস আগে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার এসজেডিএর প্রায় ১০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির মামলাটি রাজ্য সরকারের দুর্নীতি দমন শাখার হাতে দেওয়ার জন্য চিঠি লেখেন রাজ্য সরকারকে। কিন্তু রাজ্য প্রসাশনের কর্তারা শিলিগুড়ি কমিশনারেটকেই এই কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ হাতে পান৷ মালদহের জেলাশাসক ছাড়াও জেরা করা হয় শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে৷
এক অফিসারের ব্যাখ্যা, এ সব মামলায় অনেক ক্ষেত্রে 'কাস্টডিয়াল ইন্টারোগেশন' প্রয়োজন হয়৷ কারণ, এমন কিছু জিনিস অভিযুক্তের কাছে জানা দরকার, যা বাইরে থাকলে জানা যাবে না৷ আদালত প্রথম দিনই এই যুক্তি মেনে নিয়েছে বলেই আইএএস পদমর্যাদার জানা সত্ত্বেও গোদালা কিরণকুমারকে প্রথমদিন জামিন দেয়নি৷ আদালত প্রথম দিনই যখন জামিন মঞ্জুর করেনি, তখন ধরে নিতে হবে পুলিশ জেলাশাসককে গ্রেফতার করে কোনও ভুল কাজ করেনি৷