জীবপ্রেমেই জগৎসেবা, বালুরঘাটের এই স্কুল ছাত্রদের কর্মকাণ্ড জানলে কুর্নিশ জানাবেন
জীবন মানে শুধুই যে মনুষ্য সভ্যতার দম্ভে ভরা এক জগৎ তা নয়। এই সত্যকে ছোট্ট থেকেই উপলদ্ধি করতে শিখেছে অনুপ, সুশান্ত, রকিরা। আর তাদের এই উপলদ্ধি প্রাণ বাঁচিয়ে দিল দুই বার্ন আউলের।
জীবন মানে শুধুই যে মনুষ্য সভ্যতার দম্ভে ভরা এক জগৎ তা নয়। এই সত্যকে ছোট্ট থেকেই উপলদ্ধি করতে শিখেছে অনুপ, সুশান্ত, রকিরা। আর তাদের এই উপলদ্ধি প্রাণ বাঁচিয়ে দিল দুই বার্ন আউলের, আসলে যাদের আমরা লক্ষী প্যাঁচা বলে জানি।
বালুরঘাট শহরের উপকন্ঠে লাগোয়া এক গ্রামাঞ্চল অযোধ্যা। সেখানকারই কে ডি বিদ্যানিকেতনের ছাত্র অনুপ, সুশান্ত, রকি। কেউ ক্লাস সিক্সে তো কেউ আবার ক্লাস নাইনের পড়ুয়া। শনিবার স্কুলের মধ্যেই দু'টি পাখির ছানাকে পড়ে থাকতে দেখে তারা। একটির দেহে তখনও প্রাণ ছিল। কিন্তু, অপর ছানাটির ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে। জীবীত ছানাটিকে হাতে তুলে নিতেই অনুপরা বুঝেছিল এটা বার্ন আউলের বাচ্চা। মানে গ্রাম বাংলায় যাকে লক্ষী প্যাঁচা বলে। অদ্ভুত দর্শনের লক্ষী প্যাঁচার সেই ছানাকে দেখতে ততক্ষণে ভিড়ও জমে যায়।
শেষমেশ আবিষ্কার হয় যে স্কুলের অন্নকূট ভবনের ঘুলঘুলিতে বাসা বেঁধেছে এক ধেড়ে লক্ষী প্যাঁচা। এগুলি তারই ছানা। ঘুলঘুলিতে আরও একটি ছানাকে জীবীত অবস্থায় উদ্ধার করে অনুপরা। ছানা দুটি নিয়ে কী করবে তারা বুঝে উঠতে পারছিল না অনুপরা। কারণ, এরমধ্যে একটি ছানার আবার চোখ ফোটেনি। শিক্ষকদের পরামর্শে অনুপরা ঠিক করে ছানা দুটি যথাস্থানেই রেখে দেওয়া হবে। কারণ, ছানাদের খাবার দিতে নিশ্চয়ই মা লক্ষী প্যাঁচা ফিরে আসবে। পরে দেখা যায় সত্যি সত্যি খাবার নিয়ে এসে হাজির মা লক্ষী প্যাঁচা। অনুপরা বুঝতে পারে ঘুলঘুলিটা উঁচুতে হওয়ায় কোনওভাবে দু'টি ছানা নিচে পড়ে গিয়েছিল। যার জেরে একটি ছানা চোট পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মারা গিয়েছিল। বিষয়টি তাদের নজরে পড়ে যাওয়াতে বাকি দুটো ছানাকে অন্তত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে এটা ভেবেই এখন স্বস্তি অনুপ, সুশান্ত ও রকিদের।
গ্রামবাংলার এক পরিচিত পাখি এই লক্ষী প্যাঁচা। শহরের বিস্তার ক্রমশই এদেরকে সংকটে ফেলছে। সাধারণত স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাতেই থাকতে পছন্দ করে লক্ষী প্যাঁচা। বিশেষ করে ছায়া ঘেরা পুরনো মন্দির থেকে পুরনো স্যাঁতস্যাঁত বাড়ির অন্ধকার কোণা এঁদের পছন্দের। পরিবেশবিদ তথা অযোধ্যা কে ডি বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক তুহিনশুভ্র মণ্ডলের মতে, 'ক্রমশই ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। এমনকী, গ্রামবাংলার পরিচিত জঙ্গলও এখন অমিল। ফলে লক্ষী প্যাঁচার মতো পাখিরা যারা স্যাঁতস্যাঁতে স্থান পছন্দ করে তারা এখনও স্থান বদলাতে বাধ্য হচ্ছে। যার জেরে স্কুলের অন্নকূট ভবনের ঘুলঘুলিতে বাচ্চা-সহ বাসা বেঁধেছে এক লক্ষী প্যাঁচা।' স্কুলের ছাত্ররা বার্ন আউল সম্পর্কে পরিচিত না হলে ছানাগুলো বেঘোরে প্রাণ হারাত বলেও মনে করছেন তুহিন। অনুপ, সুশান্ত, রকিদের মতো চেতনা যদি আরও বেশি সংখ্যক মানুষ দেখাতে পারে তাহলে জীব জগৎ-এর বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা সম্ভব বলেই মনে করছেন তিনি। না হলে একদিন হয়তো গল্পকাহিনিতেই স্থান পাবে গ্রামবাংলার বিখ্যাত লক্ষী প্যাঁচা।