নিয়মকে বুড়ো আঙুল, স্কুলের মধ্যেই বই বিক্রি প্রধানশিক্ষকের, দেখুন ভিডিও
সরকারের ফ্রি-প্রাইমারি স্কুল। শিক্ষার অধিকার আইনেও ১৪ বছর পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণকে অবৈতনিক করার নিদানও দেওয়া রয়েছে। কিন্তু, সরকারি এই নির্দেশনামাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খোদ সরকারি স্কুলের মধ্যেই বেআইনি ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন এক প্রধানশিক্ষক। আর তাঁর এই দুর্নীতিপরায়ণ কার্যকলাপ পুরোপুরি ভিডিও বন্দি হয়েছে। যা এখন ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির হাতে।

ঘটনাটি কলকাতার উপকণ্ঠে বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দির-এ। এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষ মণীশকুমার নেজ স্কুলের অফিসঘরের মধ্যেই সমানে বই বিক্রি করে চলেছেন। শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দির সরকারের একটি ফ্রি-প্রাইমারি স্কুল। মানে এটা একটা অবৈতনিক বিদ্যালয়। এখানে পড়াশোনার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের নাম নথিভুক্তকরণটাই প্রধান। এখানে পড়াশোনার জন্য কাউকে কোনও অর্থ দিতে হবে না। এমনকী, প্রত্যেক বছর এক ক্লাস থেকে আর এক ক্লাসে উঠলে এবং নতুন অ্যাডমিশন নিলেও তা একদমই ফ্রি বলে শিক্ষার অধিকার আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ, এক দু'মাস ধরে নয় দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বেআইনি ব্যাবসা স্কুলের মধ্যে ফেঁদে বসেছেন প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ। যা পুরোপুরি ভিডিও বন্দি হয়েছে।
প্রাথমিকে যাবতীয় বই স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়। এখানে একটি বই ছাত্র-ছাত্রীদের কেনার কোনও প্রয়োজনীয়তাই নেই। কিন্তু, ভিডিওটি-তে দেখা যাচ্ছে প্রধানশিক্ষক নিজের হাতে বই বিক্রি করাচ্ছেন। একটা দুটো বই নয় একাগাদা বই অভিভাবকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তার বিনিময়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। ফ্রি-প্রাইমারি স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উঠতে বা স্কুলে নাম লেখানোর জন্য কোনও অর্থ প্রদান করতে হয় না। অথচ, বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দিরে প্রধানশিক্ষক মণীশ নেজ নিজে অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছেন।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্কুলের ভিতরে কোনও বেআইনি কাজ হলে তার জন্য প্রধানশিক্ষককে শোকজ করা হবে। কিন্তু, দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুর্নীতি চালিয়ে আসা বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দিরের প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ ছাড় পেয়ে গেলেন? ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ডিআই সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। গোটা ঘটনায় তিনি যেন আকাশ থেকে পড়েন। এমন অভিযোগ তার কাছে কোনও দিনই আসেনি বলে দাবি করেন তিনি। অথচ, এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ডিআই সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে একটি সূত্রে। কিন্তু স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ডিআই-এর দাবি, তিনি শুনলেন বটে। কিন্তু এতে কোনও কাজ হবে না। কারণ ডিআই সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রোপার চ্য়ানেলে তাঁকে অভিযোগ না জানালে কোনও কিছু করা সম্ভব নয়।
অভিযোগ উঠেছে, বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর বিদ্যামন্দির-এর প্রধানশিক্ষক মণীশ নেজ নিজেকে তৃণমূলের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতা বলে দাবি করেন। আর এই প্রভাব খাটিয়েই তিনি বছরের পর বছর সরকারের নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্কুলের মধ্যে বই বেচার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে ভর্তি হতে বেআইনিভাবে অর্থ নিয়ে চলেছেন। ওয়ানইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে অভিযুক্ত প্রধানশিক্ষক মণীশ নেজ-কে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এমনকী, তিনি বলে যা অভিযোগ আছে তা লিখিত আকারে তাঁকে জমা দিতে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁকে কীভাবে অভিযোগ জমা দেওয়া হবে? প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মণীশকুমার নেজ।
স্কুলের মধ্যে বই বিক্রি এবং অর্থ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি-র কথা একদমই অস্বীকার করেন তিনি। ভিডিও ফুটেজ রয়েছে বলার পরও তিনি জানান, তিনি অর্থ নেননি বা বই বিক্রি করেননি। এরপর পরক্ষণেই আবার বলেন তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। সেই রিপোর্ট আসেনি।
[আরও পড়ুন:কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস হতেই রহস্যময় লোকেদের আনাগোনা, চঞ্চলাময়ীর সামনে ওরা কে]
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। অভিযোগ, শুধু এই বই বিক্রি বা অর্থ নিয়ে ছাত্র ভর্তির মতো দুর্নীতি নয় এই প্রধানিক্ষকের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলে কারচুপি থেকে একাধিক বিষয়ে দুর্নীর্তির অভিযোগ উঠেছে। বলতে গেলে নিজের ইচ্ছেমতো স্কুলকে পরিচালনা করছেন এই প্রধানশিক্ষক।
[আরও পড়ুন:উধাও মাল্টিজিমের বরাদ্দ সরকারি অর্থ, চঞ্চলাময়ীকে নোটিস দিল সরকার, কী বলছেন টিআইসি]