মেঠোয়ালি পথে ঘুরে বেড়ানো শৈশব মন, আর তাকে বাঁধতেই এবার স্কুলে স্কুলে গল্প বলার আসর
শিশুমনের এক অপ্রকাশিত কথনকে এবার তাই সুষ্ঠুরূপে বাঁধতে কোমর কষে নেমে পড়েছে রাজ্য শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমি।
অযোধ্যা থেকে শালগ্রাম, বানিয়াপাড়া, হাসোইল- প্রত্যেকটা নামের মধ্যেই কেমন যেন মাহাত্ম্য। এক অযোধ্যার কথা সকলেরই জানা রামচন্দ্রের জন্মভূমি, মহাপরাক্রান্ত ও দয়ালু রাজা দশরথের রাজধানী বলে। সেই অযোধ্যা কি এটা? জানা নেই। পশ্চিবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের কোন এক কোণে পড়ে থাকা অযোধ্যার তেমন কোনও পৌরাণিক সংযোগ পাওয়া গিয়েছে বলে শোনা যায়নি। শালগ্রাম নামেই বোঝা যায় সেখানে শালের জঙ্গল। এই চারটি গ্রামেই বাস নূপুর, বৃষ্টি, তনা, সত্যজিৎদের। গ্রামের মেঠোয়ালি পথেই আপাতত ঘুরে বেড়ায় তাঁদের শৈশব। শহরের মতো কোলাহল নয় কিন্তু, মফস্বলের একটা নিজস্ব ব্যস্ততায় প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠতে উঠতে বিকশিত হয় তাদের শৈশব মন।
নূপুর, তনা, সত্যজিৎদের মনে খেলা করে হাজারো কথা, হাজারো জিজ্ঞাসা। মনের অব্যক্ত চেতনগুলো নিজের মতো করে হাজির হতে চায় তাদের চোখের সামনে। কেউ নিজের মতো করে সেই অব্যক্ত চেতনকে সাজিয়ে নেয়। আর যারা পারে না তাদের কষ্টটা কে বোঝে। শিশুমনের এক অপ্রকাশিত কথনকে এবার তাই সুষ্ঠুরূপে বাঁধতে কোমর কষে নেমে পড়েছে রাজ্য শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমি। তাদের উদ্যোগে এবার জেলায় জেলায় স্কুলে শুরু হয়েছে গল্প-বলার আসর। যেখানে হাজির হয়ে যাচ্ছেন কোনও গল্প কইয়ে আর তাঁর গল্পে মেতে উঠে ছোট্ট ছোট্ট পড়ুয়াদের দল উজার করে দিচ্ছে নিজের মনের কল্পনায় বাসা বেঁধে থাকা সেই অব্যক্ত চেতনকে।
শনিবার এমনই এক উদ্যোগের শরিক হল দক্ষিণ দিনাজপুরের অযোধ্যার কে ডি বিদ্যানিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীরা। গল্প বলার এই আসরে ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প বলতে উপস্থিত হয়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কথা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক বলে খ্যাত মৃণাল চক্রবর্তী। এছাড়াও ছিলেন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক শান্তনু চক্রবর্তী।
ফোনে কথা হচ্ছিল শান্তনুর সঙ্গে,জানালেন 'শিশু মনের কল্পনার বিকাশ ঘটাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুলে স্কুলে এমন কর্মসূচি আরও নেওয়া হচ্ছে। তবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়া আপাতত এই উদ্যোগে গতি আসা কঠিন। কিন্তু নির্বাচন মিটে গেলেও গল্প বলার এমন আসরে আরও বেশি সংখ্যক স্কুলকে সামিল করা হবে।'
ব্রহ্মদৈত্য-র কথা থেকে শাকচুন্নি, মেছো ভুত এবং বুড়ি ও শেয়ালের গল্প থেকে শুরু করে খরগোস ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতা, রাখাল বালকের গল্প-সবই ঘুরে ফিরে আসল এই ঘণ্টা দেড়েকের গল্প-বলার আসরে। এমন গল্পের আসর পেয়ে আপ্লুত তনা, নূপুর, সত্যজিৎরাও। মনের অবলা কথার ডালি উপর করে তারা ঢেলে দিল এই গল্পের আসরে।
স্বপনবুড়োর 'সব-পেয়েছি'-র আসর একটা সময় কলকাতা থেকে শুরু করে গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। বলতে গেলে শিশুমনের বিকাশের আদর্শ হয়ে উঠেছিল এই 'সবপেয়েছি'-র আসর। শিশুদের এখানে যেমন করে গল্প বলা শেখানো হতো তেমনি ড্রিল-ব্রতচারি-র মাধ্যমে শিশুদের গড়ে তোলা হত। কিন্তু, স্বপনবুড়োর মৃত্যুর পর অধিকাংশ 'সবপেয়েছি'-র আসর বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেগুলো এখন আছে সেগুলো পর্যাপ্ত শিশু এবং অর্থের অভাবে ধুকছে। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য এমন গল্প বলার আসরের উদ্যোগ শিশুদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।