সুকান্ত-শুভেন্দুদের বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি সায়ন্তনের, চিঠি লিখলেন মোদী-শাহকে
সুকান্ত-শুভেন্দুদের বিজেপির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি সায়ন্তনের, চিঠি লিখলেন মোদী-শাহকে
বিজেপির বর্তমান বঙ্গ নেতৃত্বের কাজে আদৌ খুশি নন। দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারের হাতে রাজ্য বিজেপির ব্যাটন তুলে দেওয়ার পর থেকেই সায়ন্তন বসুর সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। একদা দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একজন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তিনি ব্রাত্য। এতদিন পর অন্তরাল থেকে বেরিয়ে তিনি রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চিঠি লিখলেন।
বঙ্গ বিজেপির প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস নিয়ে চিঠি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে চিঠি লিখে সায়ন্তন বসু দলের বঙ্গ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। বঙ্গ বিজেপি যে সঠিক পথে চলছে না, তাও উল্লেখ করেন তাঁর লেখা চিঠিত। তিনি চিঠির সাবজেক্টে লেখেন- 'প্রেজেন্ট স্ট্যাটাস অফ পার্টি অ্যাফেয়ার্স ইন দ্য স্টেট অফ ওয়েস্টবেঙ্গল'। এই চিঠিতে তিনি বিজেপির উত্তরণের পথও বাতলে দিয়েছেন।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাঁরা, তাঁদেরই গুরুত্ব
সায়ন্তন তাঁর লেখা চিঠির ছত্রে ছত্রে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে নিশানা করেছেন। তিনি লিখেছেন, যাঁরা ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দলের জন্য প্রাণপাত করেছেন, বর্তমান তাঁদের কোনও গুরুত্ব নেই পার্টিতে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাঁরা অন্য দল থেকে বিশেষ করে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন তাঁদেরকেই এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আদি নেতা-কর্মীদের কোনও জায়গা নেই বঙ্গ বিজেপিতে।
আদি নেতা-কর্মীদের ব্রাত্য থাকাই হারের কারণ
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরও বিজেপিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে হারতে হয়েছে আদি নেতা-কর্মীদের ব্রাত্য করে রাখার জন্য।তিনি এই মর্মে বেশ কিছু কেন্দ্রের উদাহারণও দেন। দুর্গাপুর পূর্ব, বিধাননগর, পানিহাটি, ব্যারাকপুর, সিঙ্গুর, সিউড়ি, জলপাইগুড়ি, সপ্তগ্রাম, কালনা, ভবানীপুরের মতো আসন হারতে হয়েছে বিজেপিকে।
বামেদর থেকে পিছিয়ে পড়ছে বিজেপি!
সায়ন্তন লেখেন, এত হারের পরও বঙ্গ বিজেপি এতটুকু শোধরায়নি। তাই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ফল নিয়ে চিন্তা থাকছেই। তিনি আরও লেখেন, দুর্নীতি ইস্যুতে যখন রাজ্যের শাসক দল নতুন নতুন বিপাকে পডছে, তখন বিজেপি রাজনৈতিকভাবে তার ফায়দা তুলতে ব্যর্থ। বামেরা যেখানে আন্দোলনে ঝড় তুলছে, ৩৫ হাজার যুবকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেছে, সেখানে বিজেপি তেমন কোনও প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারেনি।
লড়াই হবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মধ্যে
সায়ন্তনের কথায়, দল ভীষণরকম সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর। দলের কিছু নেতা ইউটিভ ও ফেসবুকে মাধ্যম করে মিথ্যা ভাবনা প্রচার করছে। তার ফলে দলের প্রভূত ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে, বিজেপি লড়াই থেকে ছিটকে যাবে। পঞ্চায়েত ভোটেই হয়তো দেখা যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লড়াই হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের মধ্যে।
কী করা দরকার বিজেপি, প্রস্তাব সায়ন্তনের
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দলের জেলা সভাপতিরা বেশিরভাগই নতুন। আমি নতুনদের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তাদের দায়িত্ব বুঝতে বা কাজ শেখার সময় দিতে হবে। দলের কিছু সিনিয়র নেতা, বিরোধী দলনেতা ও সাংসদ আছেন। যারা তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ করছেন, তা যথাযথ নয়। সবার আগে দলের কথা বলা দরলকার, দরকার দলের আদর্শকে কথা মাথায় রেখে জাতীয় স্বার্থে কথা তুলে ধরা। তিনি মনে করেন, একটা কোর ন্যাশনাল ইস্যু আমাদের সঠিক পথে ফেরাতে পারে।
বাংলায় ফের তৃণমূলের বিকল্প হতে গেলে
সায়ন্তনের কথা, বাংলায় একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, অনেকে বিজেপিতে এসেছেন সিবিআই-ইডি থেকে বাঁচতে। এই ধারণা বিজেপির প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, মানুষের মধ্যে এমন ধারণাও জন্মেছে যে, বঙ্গ বিজেপি আদতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের দল। এই অবস্থা থেকে বের করে আনতে হবে দলকে। আমরা যাতে বাংলায় ফের তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে পারি, তার জন্য ২০১৯ সালের পলিসি ফিরিয়ে আনতে হবে।
ফের আদালতে মানিক, ডিসেম্বরেই চার্জশিট দেওয়ার প্রস্তুতি, পার্থর হাজিরা হল না কোর্টে