বাঁচার ইচ্ছা ফুরিয়েছে, মরণের প্রতীক্ষায় দিন গুণছেন সায়ন
আর বাঁচার সাধ নেই সায়নের। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ২১ বছরের সায়ন তাই স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানালেন মহকুমা শাসকের কাছে।
হাওড়া, ১২ নভেম্বর : আর বাঁচার সাধ নেই সায়নের। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ২১ বছরের সায়ন তাই স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানালেন মহকুমা শাসকের কাছে। আবেদনে সায়নের আর্জি, 'মৃত্যু ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই আমার কাছে। সেই কারণেই আমি স্বেচ্ছামৃত্যু চাইছি। আমার আবেদন মঞ্জুর করে বাধিত করুন।'
সায়ন ধাড়া। উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরের বাসিন্দা। জন্ম থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে শয্যাশায়ী। বিছানা ছেড়ে উঠে বসার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁর দেখাশোনা, চিকিত্সা করিয়েছেন বাবা রবীন ধাড়া। পেশায় হোলসেল চা ব্যবসায়ী। কিন্তু বিগত ১০ বছর ছেলের ব্যাপারে হাল ছেড়েছেন। নাতির চিকিৎসা করিয়ে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছেন দিদিমা আলোরানি দাস। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়া দিদিমার কাছেই থাকেন সায়ন।
বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি। জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় বলছেন, 'অনেক হয়েছে, আর বাঁচতে চাই না। এবার মৃত্যুকে বরণ করে নিতে চাই।'শুক্রবার বিকেলে ভ্যানে শুয়ে উলুবেড়িয়া মহকুমা শাসকের অফিসে এসে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেন সায়ন। যদিও মহকুমা শাসকের অফিস থেকে সেই আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়নি। সম্যক জেনে মহকুমাশাসক একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আলোরানি বলেন, জন্মের সময় থেকেই সায়নের পা দু'টো সরু এবং দুর্বল ছিল। ছোটোবেলায় পোলিওর চিকিৎসা হলেও, কোনও সাড়া মেলেনি। ৫ বছর বয়সে বাঙ্গুর নিউরোলোজি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, ওটা পোলিও নয়, 'স্পাইনাল কর্ড' আর 'অ্যাবডোমেনের' মাঝে একটা টিউমার রয়েছে। তার জেরেই সরু ও দুর্বল পা সায়নের।
উপায় একমাত্র অপারেশন। কিন্তু তা এখানে হয় না। যেতে হবে ভেলোর। ৬ বছরের সায়নকে নিয়ে ভেলোরে ছোটেন দিদিমা আলোরানি। তিনি উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালের নার্স ছিলেন। সমস্ত ব্যবস্থা সহস্ত করেই ভেলোরে অপারেশন করিয়ে ছিলেন নাতির। চিকিৎসকরা আশ্বাসও দিয়েছিলেন দেখভাল করলে সায়ন হাঁটাচলা করতে পারবে। কিন্তু দিন দিন তাঁর পরিস্থিতি খারাপ থেকে খারাপতর হতে থাকে।
সায়নের অভিযোগ, তাঁর বোন হওয়ার পর বাবা-মা তাঁকে বাদের খাতায় ফেলে দিয়েছে। তাই বাড়ি ছেড়ে দিদিমার কাছে চলে আসেন তিনি। দিদিমা তাঁর চিকিৎসায় সব খুইয়েছেন। এখন আর কোনও উপায় নেই। তাই মৃত্যুর জন্য দিন গুনছি। সেই কারণেই এই স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন। সায়নের কথায়, 'কীসের জন্য আর বাঁচব। এবার মরণ এলেই বেঁচে যাই।'