নবমীতে ‘সধবা পুজো’ই মূল আকর্ষণ শিবপুরের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে, টেক্কা ‘কুমারী পুজোকে’ও
বাংলার প্রায় প্রতি দুর্গাপুজোতেই চিরাচরিত রীতি মেনে কুমারী পুজো হয়ে থাকে। কিন্তু এ বাড়ির দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজো হয় না, হয় সধবা পুজো। বিশেষত্বের দিক দিয়ে একেবারেই স্বতন্ত্র হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের শিবপুরে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের এই দুর্গাবন্দনা। অন্য সব জায়গায় যেভাবে কুমারী পুজো হয়, সেখানে এই বাড়িতে একইভাবে হয় সধবা পুজো।

সধবা সুন্দরী মাতৃময়ী কোনও মহিলাকে দেবীরূপে পূজো
অন্যপুজোয় যখন শাস্ত্রমতে অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়েকে চয়ন করা হয় মাতৃরূপে বন্দনার জন্য, এ বাড়িতে সধবা সুন্দরী মাতৃময়ী কোনও মহিলাকে দেবীরূপে পূজো করা হয়। এক-আধ বছর নয়, শত শত বছর ধরে এই ধারা চলে আসছে।

সধবা পুজোর রেওয়াজ বেশ জনপ্রিয়ও
আর গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের এই সধবা পুজোর রেওয়াজ বেশ জনপ্রিয়ও। কোথাও কোথাও এই সধবা পুজো দেখার আগ্রহ কুমারী পুজোকেও ছাপিয়ে যায়। নবমীর দিন ওই পুজো দেখতে ভিড় জমান প্রতিবেশীরা। এ বাড়িতে নবমীতে পুজোর আকর্ষণ অন্য মাত্রায় পৌঁছয় শুধু এই কারণে।

কোন গল্প লুকিয়ে
কথিত রয়েছে, বর্ধমান রাজা তায়দার দান করেছিলেন শিবপুরের গঙ্গোপাধ্যায়দের। নিষ্ঠাভরে সমস্ত পূজার্চনায় খুশি হয়েই বর্ধমান রাজা উপঢৌকন দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ধূমধাম করে পুজো হয়ে আসছে এ বাড়িতে। দেবীর বোধন হয় কৃষ্ণানবমীতে। মহালয়ার সপ্তাহকাল আগে থেকে শুরু, চলে দেবীপক্ষের পর্যন্ত।

মজার বিধি বুড়িতে ওঠা।
বোধন থেকে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত বাড়িতে আমিষ ওঠে না। বাড়র কোনও সদস্য আমিষ ভোক্ষণও করেন না। তবে এখনও ছাগবলির প্রথা রয়েছে। আর সধবা পুজো তো রয়েছেই। সেইসঙ্গে আরও একটি মজার বিধি রয়েছে এ বাড়িতে। তা হল- বুড়িতে ওঠা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন সেই প্রথা মানা দুর্গোৎসবেরই অঙ্গ।

অবিবাহিত পুরুষকে মহিলা সাজিয়ে এই প্রথা
কোজাগরীতে বাড়ির একজনকে অবিবাহিত পুরুষকে মহিলা সাজিয়ে এই প্রথা পালন হয়। ঘোমটা দেওয়া ওই ব্রাহ্মণ তনয়কে দেবালয় থেকে জলের ঝারা দিয়ে বরণ করে বাড়িতে প্রবেশ করানো হয়। এ বাড়িতে দেবালয়ের মধ্যে যেমন রয়েছে দুর্গাদালান, বোধন ঘর, তেমনি রয়েছে পার্বতীনাথের মন্দির।