মুকুল-দিলীপে আর আস্থা নেই আরএসএসে'র! বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী-মুখের ভাবনায় তাই 'যোগী মহারাজ'
মুকুল-দিলীপদের দৌড় বুঝে গিয়েছে আরএসএস, মুখ্যমন্ত্রী মুখের ভাবনায় তাই যোগী মহারাজ
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনকে বাংলায় একটা বৃহত্তর সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে আরএসএস। এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে মিশন একুশে তাই কোনওরকম খামতি রাখতে তারা চাইছে না। এখন তাঁদের কাছে সবথেকে বড় চিন্তা বাংলায় বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মুখ কে হবেন। মুকুল রায় বা দিলীপ ঘোষদের উপর যে তাঁরা ভরসা করতে পারছেন না, তা বুঝিয়ে দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনা উসকে দিল আরএসএস।
কৃপাকরানন্দ মহারাজ ও আরএসএস
আরএসএস চাইছে বাংলাতেও যোগী আদিত্যনাথের মতো কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে। সেই সম্ভাবনা নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছে। আর আরএসএসের হাতে যোগী আদিত্যনাথের মতো এক সন্ন্যাসীও আছেন। তাই রাজনৈতিক মহল মনে করছে ভোটের পর স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ যদি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
মুকুল-দিলীপদের কপাল পুড়তে পারে
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজকে বাংলার ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বর্ণনা করতে শুরু করেছেন। তাঁর সম্ভাব্য রাজনৈতিক উত্থান নিয়ে বাংলায় তীব্র জল্পনাও তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। আর তা সত্যি হলে দিলীপ ঘোষদের কপাল পুড়তে পারে। কেননা নির্বাচনটা কিন্তু লড়তে হবে দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়দের। তারপর উত্তরপ্রদেশের মতো বদলে যেতে পারে মুখ্যমন্ত্রী মুখ।
মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নাম
আরএসএস মনে করছে বাংলায় কুর্সি দখল করতে হলে দিলীপ ঘোষ কিংবা মুকুল রায়দের মুখ করে হবে না। দিলীপ-মুকুলরা লড়াকু বটে। নির্বাচনী লড়াইয়ে তাঁদের জুড়িমেলা ভার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প মুখ তাঁরা নন। তাই বিজেপি বা আরএসএস থেকে এমন একটা নাম দরকার, যে নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো হয়।
অনেকে চাপে, আখেরে লাভ হবে বিজেপির
স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ তেমন একজন প্রার্থী হতেই পারেন। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই। আরএসএস তাই বুদ্ধি করেই এই নাম ভাসিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্তত একটা শ্রেণি এই নামে প্রভাবিতও হবেন। এই নামে বিজেপির অনেকে খানিক চাপে পড়লেও আখেরে তাদের লাভ হবেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
দিলীপ ঘোষকে নিয়ে যেখানে অনীহা সঙ্ঘের
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলকে। তিনি আরএসএস থেকে উঠে এসে বঙ্গ বিজেপির প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। সমস্যা হচ্ছে, শিক্ষিত বাঙালিরা তাঁর এই বাস্তবিক মেঠো রাজনীতি পছন্দ করেন না। তাই দিলীপ ঘোষকে একশ্রেণির মানুষের পছন্দ নয় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। তাঁরা বিকল্প নাম চাইছেন।
পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নাম নন মুকুল রায়
আবার মুকুল রায় একজন বিরাট সংগঠক এবং তৃণমূল ভাঙতে তাঁর জুড়িমেলাভার। তবে তিনি দুর্নীতিতে কলঙ্কিত। মূল হিন্দু নেতৃত্ব এবং ক্যাডারদের কাছে বিশেষ করে আরএসএসের কাছে। তিনি পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নাম নন মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে। মুকুল রায় যেমন নিজে পিছন থেকে কাজ করতে ভালোবাসেন। আরএসএসও মনে করে তাঁকে নেপথ্যে রেখে সংগঠনে কাজ করানোই শ্রেয়।
আদর্শগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারাজ সৌরভ
এই অবস্থায় ভেসে উঠেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই দেওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য মুখের খোঁজে সম্প্রতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম ঘোরাফেরা করছিল। তবে তাঁর অসাধারণ জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি রাজ্যের হিংসাত্মক এবং অশান্ত রাজনৈতিক জালে আদর্শগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নারাজ।
গেরুয়া শিবিরে কৃপাকরানন্দ মহারাজ
এই অবস্থায় কৃপাকরানন্দ মহারাজের নাম ভাসিয়ে দেয় আরএসএস। তাঁকে যদি সক্রিয় রাজনীতিতে আনা যায়, তবে গেরুয়া শিবিরের কাছে তা সোনায় সোহাগা হবে। বিজেপির কাছে সবদিক দিকে আদর্শ মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হবেন তিনি। তবে রামকৃষ্ণ মঠের আদর্শ, তাঁর নিজের আদর্শের পরিপন্থী হওয়ায় বিজেপির কাছে তা এখনও প্রতিবন্ধক।
বিজেপির ভাবনায় স্বামী কৃপাকরান্দ
বিজেপি মনে করছে, তিনি যদি রাজি হন, তবে তাঁর পক্ষে কোনও সমস্যা হবে বাংলার কুর্সিতে বসা। কেননা এই রাজ্যে বিশিষ্ট মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিধানচন্দ্র রায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো মুখ এসেছেন আগে। ফলে কৃপাকরানন্দের মতো শিক্ষিত-মার্জিত-রুচিশীল মানুষ বসলে সব দিক দিয়ে উজ্জ্বল হবে।
আরএসএসের একটি গোপন পরিকল্পনা
রামকৃষ্ণ মিশন রাজনীতির প্রতি স্পর্শকাতর থেকেছে। কৃপাকরানন্দ নিজেই নিজের জন্য রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা অস্বীকার করেছিলেন। তবে এই সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এটি আরএসএসের একটি অন্যতম গোপন পরিকল্পনা। বাংলার জনসাধারণকে চমকে দিতে রাজনীতির বাইরের কোনও মানুষকে প্রশাসনিক শীর্ষ পদে বসানো। তাই যদি হয়, কৃপাকরানন্দ মহারাজ অন্যতম মুখ হয়ে উঠতে পারেন।
রামকৃষ্ণ মিশন অ-রাজনৈতিক, তাই...
তবে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, রামকৃষ্ণ মিশন সর্বদা রাজনীতির বাইরে থেকেছে। আর রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ হিসেবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসার পক্ষে নয় কেউই। আগে এক সাক্ষাৎকারে কৃপাকরানন্দ মহারাজ নিজেই বলেছিলেন যে, এ জাতীয় কোনও পরিকল্পনা তাঁর নেই। তাই তিনি রাজি হবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
৬ বছরের শিশুকেও ছাড়ছে না, চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে, এর শেষ দেখে ছাড়ব, হুঁশিয়ারি অগ্নিমিত্রার