মুকুলকেই ‘গুরু’ মানছেন ঋতব্রত! ‘চাণক্যে’র দলে মিলল নয়া ‘চন্দ্রগুপ্তে’র খোঁজ
মুকুল রায়ও তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করায় পরিস্থিতির খানিক বদল ঘটেছে বর্তমানে। মুকুল রায় কী করেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দেন, নাকি নতুন দল করেন, তার উপর নির্ভর করছে ঋতব্রতর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।
পছন্দের লাল রঙ অচিরেই বদলে যেতে পারে সবুজ বা গেরুয়ায়। সিপিএমের 'ক্যাডবেরি বয়'-এর মুকুল সান্নিধ্য এখন সেই জল্পনাই বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মুকুল রায়ের দেখানো পথেই চলছেন সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুল রায়ও এখন তৃণমূলে বহিষ্কৃত। দুই বহিষ্কৃত সাংসদকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে দিল্লিতেও।
এর আগে ঋতব্রত বহিষ্কৃত হওয়ার পর মুকুল রায় তাঁকে নিয়ে বিজেপির পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বলে খবর রটেছিল। সিপিএম ছাড়া নিজেকে অস্তিত্বহীন বলে বর্ণনা করলেও 'ক্যাটবেরি বয়' যে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছিলেন তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে ওই বৈঠকের পরই।
তবে তারপর মুকুল রায়ও তৃণমূল ছাড়ার কথা ঘোষণা করায় পরিস্থিতির খানিক বদল ঘটেছে বর্তমানে। মুকুল রায় কী করেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দেন, নাকি নতুন দল করেন, তার উপর নির্ভর করছে ঋতব্রতর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ মুকুল রায়ের পরামর্শ মেনেই চলছেন তিনি। ফের রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়াতে মুকুল রায়কেই আদর্শ মানছেন।
সিপিএমে 'একা' হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই 'বটগাছ' পেয়ে গিয়েছেন ঋতব্রত। তাঁর ছত্রছায়ায় নিজেকে ফেরে মেলে ধরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক মহলে মুকুলের চাণক্য বলে খ্যাতি রয়েছে। সেই আঙ্গিকে মুকুল রায়কে চাণক্য মেনে চন্দ্রগুপ্ত হয়ে ওঠার বাসনা থাকতে পারে সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদের। সেক্ষেত্রে মুকুলের দলে বা মুকুলের সঙ্গে বিজেপিতে গেলে তিনি কতটা গুরুত্ব পান সেটাও দেখার।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর 'পছন্দের ছেলে' বলে পরিচিত ছিলেন ঋতব্রত। তিনিই এখন সিপিএমে চক্ষুশূল। তিনি বলেছিলেন, সিপিএম বর্তমানে নীতিহীন একটি দলে পরিণত হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তিনি কোনও শক্ত খুঁটির সন্ধান পেয়েছিলেন। আর সেই শক্ত খুঁটি হলেন মুকুল রায়।
মুকুল রায়ের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। তিনি তাঁর রাজনৈতিক কুটকৌশল দিয়ে তরুণ সাংসদকে কীভাবে মহার্ঘ করে তোলেন, সেটা জানাই এখন রাজনৈতিক মহলের কাছে আগ্রহের হয়ে উঠেছে। বহিষ্কারের ক'দিন আগে তিন নেতার মধ্যে গোপন বৈঠক দিয়ে শুরু। তারপর দিল্লিতে দুই নেতার একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারা। মাঝেও নিশ্চয়ই একাধিকবার দেখা হয়েছে দুজনের, কথাও হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে দুই নেতাই একযোগে দলবদল করতে পারেন। আর ঋতব্রত এখন মুকুল রায়ের পরামর্শ মেনেই চলছেন।
ঋতব্রত চতুরভাবে এখনও এড়িয়ে যাচ্ছেন সব কথা। সব প্রশ্নেরই ঘুরিয়ে উত্তর দিচ্ছেন। তাতেই প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে, ডালমে কুছ কালা হ্যায়। তিনি বলছেন, 'আমার সঙ্গে সকলেরই সম্পর্ক ভালো। আমি যে সংসদীয় কমিটিতে রয়েছি, সেই কমিটিতে চেয়ারম্যান ছিলেন মকুল রায়। তারপর আমরা দুজনেই রাজ্যসভার সাংসদ, আমাদের মধ্যে বৈঠক হতেই পারে। একবার কেন, একাধিকবার বৈঠক হয়েছে তাঁর সঙ্গে।' অবলীলায় তিনি স্বীকার করছেন সে কথা।
বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মুকুল রায় ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এটাই প্রতীকী ছবি হয়ে উঠেছে বাংলার ভবিষ্যৎ রাজনীতির। মুকুলের যেমন বিজেপি যোগ পাওয়া গিয়েছে, তেমনই ঋতব্রতরও পাওয়া গিয়েছে। দিল্লিতে অরুণ জেটলির সঙ্গে উভয়েই বৈঠক করেছেন। আবার বাংলায় কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে একসঙ্গে দুজনে বৈঠক করেন। তারপর দুজনেই এখন দলে বহিষ্কৃত। তাই মুকুল-ঋতব্রতর চলার পথও মিলে গিয়েছে এখন।